সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট জেলার তিস্তা ও ধরলা নদীর চরসহ এ জেলার মাটি ও আবহাওয়া ভাল হওয়ায় ভুট্টা আবাদ বেশি হয় বলে কৃষকেরা ভুট্টা চাষে বেশ আগ্রহী। বিগত বছরগুলোতে ভুট্টার দাম ভাল পাওয়ায় এবছরও জেলার পাঁচ উপজেলার অধিকাংশ কৃষক ভুট্টা চাষ করেছেন। এ বছর ভুট্টার ভাল আবাদ হলেও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় চাষিদের এখন মাথায় হাত। তারা ভুট্টা চাষ করে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অনেক কৃষক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ভুট্টা চাষ করে ভাল ফলন পেলেও দেখছে না লাভের মুখ। কৃষকেরা বলছেন, লাভ তো দূরের কথা, এখন ঋণ আর সুদের টাকা তারা পরিশোধ করতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, লালমনিরহাটে প্রতি বছর ভুট্টার আবাদ বাড়ছে। বর্তমানে এই ভুট্টা চাষের সঙ্গে জড়িত প্রায় দেড় লাখ কৃষক। ভুট্টা কেনাবেচা, বাছাই, প্রক্রিয়াজাতকরণ, গুদামজাতকরণসহ নানা কাজে জড়িত আরও প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। কিন্তু একটি চক্র কারসাজি করে নিজেদের মতো করে দাম নির্ধারণ করায় মাড়াই মৌসুমে আশানুরূপ দাম পান না কৃষকরা। আর যখন দাম বাড়ে, তখন কৃষকের হাতে আর ভুট্টা থাকে না। ফলে লাভবান হন কতিপয় ব্যবসায়ী। বাজার দখলে রয়েছে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে। তারা নানা অজুহাতে কম দামে ভুট্টা কিনছেন। ফলে দাম না পেয়ে হতাশ হচ্ছেন কৃষকরা।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন সময় তাদের উৎপাদিত ফসলের লোকসানের পর ভুট্টা চাষে কিছু লাভের স্বপ্ন ছিল। সেই ভুট্টাতেও তারা এ বছর সঠিক দাম পাচ্ছেন না। গত বছর এ সময়ে ৭শ টাকা থেকে ৭শ ৫০ টাকা মণ দরে ভুট্টা বিক্রি হলেও এ বছর চলতি মৌসুমের শুরুতে লালমনিরহাট জেলায় ৫শ ৩০ টাকা থেকে ৫শ ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষকেরা বলছেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর ভুট্টার ভালো ফলন হয়েছে। আবহাওয়া ভাল থাকায় তেমন ক্ষতিও হয়নি ক্ষেতের। তবে ভালো ফলন হলেও বাজারে দাম নেই ভুট্টার। এ রকম দাম যদি আরও ক’দিন থাকে তাহলে পৈত্রিক ভিটা বিক্রি করে ঋণের টাকা পরিশোধ করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই তাদের।
কৃষকেরা আরো জানান, প্রতি বিঘায় ভুট্টা চাষে খরচ হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। জমি বর্গা বা ইজারা নিয়ে চাষ করলে খরচ আরও ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বেশি। প্রতি বিঘায় গড়ে ৩০ মণ ভুট্টা পাওয়া যায়। বর্তমানে প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৫শ ৫০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি বিঘায় পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১৬ হাজার ৫০০ টাকা।
লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, গত ১০ বছরে এ জেলায় ভুট্টার আবাদ নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করছে।
আদিতমারী উপজেলার আদিতমারী-উত্তর পাড়া এলাকার কৃষক হাসান আলী জানান, কিছুদিন আগেও ভুট্টার দাম কিছুটা থাকলেও এখন তা আর নেই। বর্তমান বাজারে মিটার পাশ ভুট্টা ৫শ ৩০ টাকা থেকে ৫শ ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এই দামে ভুট্টা বিক্রি করলে কৃষকদের লাভ হবে না। বরং লোকসান গুনতে হবে অনেক টাকা।
কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা গ্রামের ভুট্টা চাষি ইসলাম মিয়া জানান, তিনি ভুট্টা চাষে লাভবান হওয়ার আশায় দেড় বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করে ছিলেন। খরচ হয়েছিল ১৬ হাজার টাকা। লাভ তো দূরের কথা ভুট্টা বিক্রি করে এখন আসল টাকা তুলতে তার ঘাম ছুটছে। একই গ্রামের ভুট্টা চাষি আলী আজগার জানান, গত বছর ৭শ টাকা মণ দরে ভুট্টা বিক্রি করলেও এ বছর ৫শ ৬০ টাকা দরে ভুট্টা বিক্রি করেছে।
অনুসন্ধান করে জানা গেছে, পোল্ট্রি খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও শীর্ষ ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি ভুট্টার বাজার। তারা সবাই এক হয়ে বাজার দর ঠিক করেন। এরপর ওই দরে ভুট্টা কিনে গুদামজাত করণ করেন। কৃষক বাধ্য হয়েই কম দামে ভুট্টা বিক্রি করেন। কৃষকের হাত ছাড়া হলেই মণ প্রতি দাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়ে যায়।
লালমনিরহাট কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক বিধূ ভূষন রায় জানান, এ বছর লালমনিরহাটে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। ভুট্টার দাম কমে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কৃষকের হাতে বাজারের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। উৎপাদিত ফসল কৃষক ঘরে রাখতেও পারে না। অভাবের সংসারে টাকার প্রয়োজনে তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে দিতে হয়। এ জন্যই ভুট্টার দাম কমে গেছে। যে সব ব্যবসায়ী ভুট্টা কিনে রাখছেন তারা ঠিকই লাভবান হবেন।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
খবরটি যদি গুরুত্বপুর্ন মনে হয় তাহলে লাইক, কমেন্টস, শেয়ার করুন
Leave a Reply