ফোর-জি বা চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক,এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দ্রুত গতি তে ইন্টারনেট ব্রাউজিং করা সম্ভব। আমাদের পাশের দেশে যখন ফাইভ – জি চলছে সেখানে আমরা এখনও থ্রি-জি তে রয়েছি, ইন্টারনেটের এই জেনারেশন গ্যাপ অবশেষে এক ধাপ কমতে চলেছে আজ থেকে ই।
টু-জি , থ্রি-জি এর পরে সোমবার থেকে বাংলাদেশ জুড়ে চালু হচ্ছে ফোর-জি বা চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক। ফোর -জি চালু হলে বাংলাদেশের মোবাইল গ্রাহকেরা থ্রি-জির থেকে অনেক বেশী দ্রুত গতিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন এবং খুব দ্রুত তথ্যের আদান প্রদার করতে পারবেন বলে মনে করছেন বাংলাদেশ টেলিকম রেগুলেটরি কমিশন বিটিআরসি। কিন্তু বাংলাদেশে ফোর-জি সুবিধা কতটা ফলপ্রূস হবে সে বিষয়ে সন্দিহান অনেক প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বাংলাদেশে প্রথম যখন মোবাইল নেটওয়ার্ক আসে তখন সেটি ছিল টু-জি, এই টু-জি মোবাইল নেট ওয়ার্কের মাধ্যমে শুধু মাত্র ফোন কল করা যেত এবং কথা বলা যেত। এরপর বাংলাদেশে চালু করা হয় আরও বেশী গতির থ্রি-জি মোবাইল নেটওয়ার্ক। থ্রি-জি মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্রাউজিং সহ পূর্বের চেয়ে দ্রুত গতিতে তথ্য আদান-প্রদান করা যেত। কিন্তু বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সবগুলো মোবাইল অপারেটর সমগ্র দেশ জুড়ে থ্রিজিকভারেজ দিতে সক্ষম হয়নি। বরং থ্রি-জি মোবাইল নেটওয়ার্ক দেশের শহরগুলোর সাথে গ্রামগুলোর একটা প্রযুক্তিগত বৈষম্য সৃষ্টি করছে। শহরগুলো তে যেখানে ইন্টারনেটে স্পিড অনেক বেশী গ্রাম গুলো তে এখন থ্রিজি ইন্টারনেটের ম্পিড অনেক কম।
ঢাকায় গত সপ্তাহে উন্মুক্ত নিলামের আয়োজন করে বিটিআরসি ফোর-জি ফ্রিকোয়েন্সী বা ফোর-জি তরঙ্গ বিক্রি করে। এই উন্মুক্ত নিলামে শুধু দুইটি অপারেটর অংশগ্রহণ করে। গ্রামীণফোন ও বাংলালিঙ্ক ব্যতীত অপর কোন অপারেটর নিলামে অংশ নেয় নি।
বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শাহজাহানমাহমুদ জানিয়েছেন, নিলাম ফোর-জি তরঙ্গ বিক্রি করে সরকারের কোষাগারে মোট ৫ হাজার ২শ ৮৮ কোটি টাকা।
বাংলাদেশে আজ সোমবার থেকে ফোর-জি চালু হলেও, গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছাতে হয়ত আরো সময় লাগবে। বাংলাদেশে ফোর- জি নেটওয়ার্ক চালু হলেও এখানে ফোর-জি সাপোর্টেড অবকাঠামো দরকার সেটা বাংলাদেশে পর্যাপ্ত নাই। বাংলাদেশে থ্রি-জি ব্যবহার যোগ্য ফোনসেট প্রচুর পরিমাণে রয়েছে কিন্তু সেসব ফোনে ফোর-জি সাপোর্ট করবে কিনা সেটা নিয়েও গ্রাহক পর্যায়ে সন্দেহ রয়েছে। যদি এসব ফোনে ফোর-জি সাপোর্ট না করে তবে গ্রাহকদের এই দ্রুত গতির ইন্টারনেট সুবিধা উপভোগ করার জন্য পুনরায় ফোর-জি সাপোর্টেড ফোনসেট কিনতে।
ফোর-জি সুবিধা পাওয়ার জন্য থ্রি-জি সিম কে ফোর-জি তে রূপান্তর করার কাজে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গ্রাহকদের কে টাকা দিয়ে ফোর-জি সিমে রূপান্তর করতে হচ্ছে। কিন্তু এ ধরণের সেবার জন্য টাকা নেওয়া সম্পূর্ণ অবৈধ। থ্রি – জি সুবিধা চালু হওয়ার সময় গ্রাহকদের কাছে থেকে কোন প্রকার টাকা নেওয়া নেওয়া হয় নাই। কিন্তু এবার কেন নেওয়া হচ্ছে সেটা নিয়ে গ্রাহকেরা প্রশ্ন তুলেছেন।
বাংলাদেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় কয়েক কোটি। শহর থেকে গ্রাম,শিক্ষিত থেকে অশিক্ষিত সকলেই ফোনে ইন্টারনেট ব্রাউজিং করছেন কিন্তু ইন্টারনেট স্পিড কম থাকার কারনে গ্রামের দিকের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছেন। অনেক অপারেটর থ্রি-জি সেবার নামে কিছু কিছু এলাকায় টু-জি স্পিড দিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু দাম নিচ্ছেন থ্রি-জির।
প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের অপারেটর গুলো সঠিক ভাবে থ্রি-জি সুবিধা যেখানে দিতে পারে নি সেখানে ফোর-জি সেবা তারা কিভাবে দিতে পারবেন।
প্রযুক্তি বিশ্লেষক আবু সাঈদ বলেন,”স্পিড বাড়বে সন্দেহ নেই। তবে অবকাঠামোর দিকটির দুর্বলতা তো আছেই। দেশের অভ্যন্তরে ডিজিটাল বিভক্তি আরো বৃদ্ধি পাবে। বড় বড় শহরের মানুষেরা এ সুবিধা পেলেও দেশের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষগুলো এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে”।
বাংলাদেশে মোবাইল নেটওয়ার্কের ইন্টারনেট স্পিড এবং ব্রডব্যান্ডের উভয় ক্ষেত্রের ইন্টারনেট স্পিড অনেক কম। ইন্টারনেট স্পিড যেসব দেশে কম তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
ফোর-জি নেটওয়ার্ক দেশের ইন্টারনেট স্পিড বাড়াতে সক্ষম হলে উপকৃত হবে কয়েক কোটি গ্রাহক এবং কয়েক লক্ষ ফ্রিল্যান্সার।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply