বিশ্বের সবচেয়ে কুখ্যাত বৌদ্ধ ভিক্ষু মিয়ানমারের আশিন উইরাথুর বিরুদ্ধে অবশেষে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে দেশটির সরকার। তবে, সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের গণহত্যায় উসকানি দেয়ার অভিযোগে নয়, মিয়ানমারের ডিফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চিকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেয়ায় সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ এনে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে। খবর ইরাবতী ও বিবিসির।
কুখ্যাত ওই বৌদ্ধ ভিক্ষু প্রজেক্টারের মাধ্যমে ২০০১ সাল থেকেই মুসলমানদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করে। মসজিদকে তিনি বর্ণনা করেন ‘শত্রুর ঘাঁটি’ হিসেবে। তার কাছে মুসলিমরা হচ্ছে ‘পাগলা কুকুর, মুসলিমদের বিরুদ্ধে তার অভিযোগ- তারা চুরি করে, মিয়ানমারের মহিলাদের ধর্ষণ করে এবং গণহারে জন্ম দিয়ে তারা খুব দ্রুত নিজেদের বিস্তার ঘটাচ্ছে। মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যার পাঁচ শতাংশ মুসলমান।
আশিন উইরাথু প্রথম আলোচনায় আসেন ২০০১ সালে যখন তিনি মুসলিমদের মালিকানাধীন ব্যবসা ও দোকানপাট বয়কট করার জন্যে প্রচারণা শুরু করেন। এরকম একটি প্রচারণা শুরু করার পর ২০০৩ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বিচারে তার ২৫ বছরের সাজা হয়েছিল। কিন্তু তাকে পুরো সাজা খাটতে হয়নি। সাত বছর পর সরকারের ঘোষিত সাধারণ ক্ষমায় তিনি ২০১০ সালে কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন।
কিন্তু উইরাথুর জেল-জীবন তার মধ্যে কোন পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি, বরং মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে তিনি তার বিদ্বেষমূলক বক্তব্য অব্যাহত রাখেন। আশিন উইরাথু তার বক্তব্য বিবৃতিতে বৌদ্ধদের শৌর্য বীর্যের কাহিনী তুলে ধরেন, তার সঙ্গে মিশিয়ে দেন জাতীয়তাবাদের নেশাও।
তার কথার প্রতিটি বাক্যে ছড়িয়ে থাকে মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা। মিয়ানমারের বিদ্যমান মুসলিমবিদ্বেষে তার এসব বক্তব্য আরো উস্কানি জোগাতে সাহায্য করে।
মুসলিম পুরুষরা যাতে বৌদ্ধ নারীদের বিয়ে করতে না পারে সেজন্যে একটি আইন তৈরিতেও অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন উইরাথু। ওই আইনে মুসলিম পুরুষের সঙ্গে বৌদ্ধ নারীর বিয়ে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে এক পর্যায়ে আশিন উইরাথু সোশাল মিডিয়াও ব্যবহার করতে শুরু করেন।তিনি বলতে থাকেন যে মিয়ানমারে মুসলিম জনসংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকার কারণে বৌদ্ধ সংস্কৃতি হুমকির মুখে পড়েছে।
এরই এক পর্যায়ে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাকে নিষিদ্ধ করে। ফেসবুকের পক্ষ থেকে বলা হয় যে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করেই তার এসব বিদ্বেষমূলক পোস্ট।
উইরাথু তখন বিকল্প হিসেবে অন্য সোশাল মিডিয়া ব্যবহারের কথা ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, ফেসবুক যখন আমার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়, আমি তখন ইউটিউবের উপর নির্ভর করি। আবার ইউটিউব যেহেতু খুব বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে না, সেহেতু আমার জাতীয়তাবাদী কাজ অব্যাহত রাখার জন্যে আমি টুইটার ব্যবহার করবো।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিনেও উইরাথুকে চিত্রিত করা হয় একজন সন্ত্রাসী হিসেবে।
২০১৩ সালের জুলাই মাসে ম্যাগাজিনটির একটি সংখ্যার প্রচ্ছদে তার একটি ছবি ছাপিয়ে তাতে লেখা হয়: ‘এক বৌদ্ধ সন্ত্রাসীর মুখ।’
কিন্তু সম্প্রতি তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার-জয়ী ও মিয়ানমারের ডিফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চিকে আক্রমণ করার পর দেশটির কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ এনে অবশেষে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করে।
মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিমদের দুঃখ দুর্দশা অনুসন্ধান করে দেখতে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংগি লীকে ২০১৫ সালে যখন সেদেশে পাঠানো হয়েছিল। উইরাথু তখন তাকে একজন ‘দুশ্চরিত্রা’ ও ‘বেশ্যা’ হিসেবে গাল দিয়েছিলেন।
রাখাইনের গণহত্যায় সামরিক বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় জেনারেলদের ভূমিকা কী ছিল সেটা খতিয়ে দেখতে গতবছরেই আহবান জানানো হয়েছিলে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে। আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত বা আইসিসির পক্ষ থেকে প্রাথমিক এক তদন্তের সূচনা হওয়ার পরই এই আহবান জানানো হয়েছিল।
মিয়ানমার সরকার জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে এবং বৌদ্ধ ভিক্ষু উইরাথু তখন পাল্টা আক্রমণ চালাতে শুরু করেন।
গত বছরের অক্টোবর মাসে তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘আইসিসি যেদিন এখানে আসবে, সেদিনই উইরাথু বন্দুক হাতে তুলে নেবে।’
রাখাইন রাজ্যে ২০১২ সালে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা শুরু হওয়ার জন্যে আশ্বিন উইরাথুর সমর্থকদের ব্যাপকভাবে দায়ী করা হয়। এর পরই সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
এবিষয়ে ২০১৭ সালে ব্রিটিশ সংবাদপত্র গার্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে উইরাথু বলেছিলেন, অং সান সু চি ‘বাঙালিদের’ সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি তাকে বাধা দিয়েছি।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
খবরটি যদি গুরুত্বপুর্ন মনে হয় তাহলে লাইক, কমেন্টস, শেয়ার করুন
Leave a Reply