বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ নন-অ্যালকোহলিক স্টিয়াটো হেপাটাইটিস (ন্যাশ) বা ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্ত।
বুধবার দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ন্যাশ দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ফোরাম ফর দ্য স্টাডি অব দ্য ইয়ার আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ কথা বলেন।
তারা বলেন, ফ্যাটি লিভার রোগ সাধারণত খাদ্যাভাস বা অপর্যাপ্ত শারীরিক শ্রমের অভাবে হয়ে থাকে। সঠিক সময়ে এর প্রতিরোধ না করলে ধীরে ধীরে লিভারের কার্যক্ষমতা লোপ পায় যা লিভার সিরোসিস এমন কি লিভার ক্যান্সার এর কারণ হয়ে দাড়ায়। বাংলাদেশে এ রোগের প্রাদুর্ভাব মোট জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ।
বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে কোন বাহ্যিক লক্ষণ না থাকায় সাধারণ মানুষ এ রোগের প্রতিরোধ বা প্রতিকার সম্পর্কে সচেতন নয়। ফলে বাংলাদেশে এই রোগটির প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ২০৩০ সাল নাগাদ ফ্যাটি লিভার বা ন্যাশ, বিশ্বব্যাপি লিভার প্রতিস্থাপনের অন্যতম কারণ হবে।
ফোরাম ফর দ্যা স্টাডি অব দ্যা লিভার, বাংলাদেশের-এর চেয়ারম্যান শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গোল টেবিল বৈঠকে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগের সাবেক ডীন অধ্যাপক আ ব ম ফারুক, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ, ডিপ্লোম্যাটিক করসপনডেন্ট এসোসিয়েশন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ডা. নুরুল ইসলাম হাসিব প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল।
প্রবন্ধে তিনি বলেন, এখনই এ রোগ সম্পর্কে জাতীয় পর্যায়ে পর্যাপ্ত সচেতনত তৈরি করা সম্ভব না হলে, অদূর ভবিষ্যতে এদেশের মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুকির মধ্যে পড়বে, তার মধ্যে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সার অন্যতম। ডায়াবেটিস রোগীদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি খুবই বেশি।
আমেরিকায় পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, শতকরা ৩৩ ভাগ ডায়াবেটিস রোগীর ফ্যাটি লিভার রয়েছে। অন্যদিকে শতকরা ৪৯ ভাগ ভারতীয় যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তারা পাশাপাশি ফ্যাটি লিভারেও আক্রান্ত।
ফ্যাটি লিভারের প্রাদুর্ভাব প্রসঙ্গে মামুন আল মাহতাব জানান, ফ্যাটি লিভার রোগটি বিশ্বজনীন। সারা বিশ্বেই এর দেখা মেলে। তবে পশ্চিমা বিশ্বে এর প্রাদুর্ভাব খুবই বেশি। শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ আমেরিকান অ্যাডাল্ট ও ১০ ভাগ শিশু ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। জাপান ও ইটালীতে মোট জনসংখ্যার শতকরা ৩০ ভাগ থেকে শতকরা ৫৮ ভাগ এর ফ্যাটি লিভার রয়েছে।
ফ্যাটি লিভার থেকে একবার লিভার সিরোসিস হলে, শতকরা ১৫ ভাগ রোগী সাত বছরের মধ্যে আর শতকরা ২৫ ভাগ দশ বছরের মধ্যে মৃত্যুবরণের ঝুকিতে থাকেন বলেও জানান তিনি।
কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, খাদ্যে ভেজালে আমাদের দেশে শাস্তি হয় না এটা নিশ্চিত করতে হবে। ন্যাশ একটা নীরব ঘাতক। এ রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ জয় রহমান
Leave a Reply