বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা দাবি করেছেন, তিনি সংসদে কথা বলার জন্য দাঁড়ালেই সরকার দলীয় ৩শ সংসদ সদস্য উত্তেজিত হয়ে উঠেন। তিনি বলেন, আমি আমার দলের কথা বলব, তারা তাদের কথা বলবে। কিন্তু আমি উঠে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পুরো সংসদ যদি উত্তেজিত হয়ে যায়, ৩০০ সদস্য যদি মারমুখী হয়ে যায় তাহলে আমি আমার বক্তব্য কিভাবে রাখব?
রোববার (১৬ জুন) জাতীয় সংসদের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় সংসদের সভাপতিত্বে থাকা ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী বলেন, আমি আপনাকে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করব আপনি এমন কোনো কথা বলবেন না যেটাতে অপর পক্ষ উত্তেজিত হবে এবং সংসদ পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটবে।
এরপর রুমিন বলেন, আমরা সংসদের আসার সময সংসদ নেতা বলেছিলেন আমরা আমাদের কথা বলতে পারব। সংসদ সদস্যরা ধৈর্য সহরকারে সেটি শুনবেন। আমার প্রথম দিনের ২ মিনিটের বক্তব্য ১ মিনিটও শান্তিতে বলতে পারিনি। একই ঘটনা আজকেও ঘটছে। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে কোন গণতন্ত্রের কথা আমরা বলি, কোন বাকস্বাধীতার কথা বলি। কোন সংসদের কথা আমরা বলি। এইভাবে তো একটা সংসদ চলতে পারে না।
সম্পূরক বাজেট সম্পর্কে তিনি বলেন, একটা সরকারের সক্ষমতা ক্রমশ বাড়ার কথা। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি এই সরকারের সক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে আসছে। বাজেটের মাত্র ৭৬ শতাংশ আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি। যে রাজস্ব আদায়ের বিশাল লক্ষ্যমাত্র ধরা হয় সেই রাজস্ব আমরা কখনই আদায় করতে পারি না।
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই নির্বাচন কমিশন কী ধরনের নির্বাচন করেছে- স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত স্পষ্ট হয়ে গেছে। কী ধরনের নির্বাচন হয়েছে এখানে যে সদস্যরা রয়েছেন তারা আল্লাকে হাজির নাজির করে বলুক সংবিধান অনুযায়ী জনগণের প্রত্যেক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন কি না। কয়জন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুক। যদি বিবেক থেকে থাকে আপনাদের নিজেদের উত্তর নিজেরাই পেয়ে যাবেন। কি ধরনের নির্বাচনের মাধ্যমে এই সংসদে এসেছেন। আমাদেরকে কথা দেয়া হয়েছিল এই সংসদের আমাদের কথা বলতে দেয়া হবে। এজন্য আমরা সংসদে যোগ দিয়েছি। কারণ আমাদেরকে মিটিং করতে দেয়া হয় না। ভেবেছিলাম সংসদে জনগণ, আমার দল নিয়ে কথা বলতে পারব। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য এই সংসদে সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের আমার কথা শোনার এতোটুকুও ধৈর্য নেই।
তিনি বলেন, দেশে আইন আছে, আদালত আছে। কিন্তু আইনের শাসন নেই। যে কারণে গত ১ বছরে বিচার বর্হিভূত ৪৫০টি হত্যা হয়েছে। এই বিচার বর্হিভূত হত্যা যে কত জঘন্য ঘটনা তা কোনো সভ্য রাষ্ট্রে চলতে পারে না। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের রির্পোট মতে, গত এক দশকে ৬শ এর বেশি মানুষ গুম হয়েছে। আমার সুযোগ হয় এই গুম হওয়া পরিবারের সঙ্গে বসার। তারা এখন শুধু লাশ চায় যাতে একটু কবর দিতে পারে। গত ১ মাসে বাংলাদেশে ১৬৮টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
রুমিন বলেন, বাংলাদেশ এখন ধর্ষণের রঙ্গমঞ্চ। আমার দুঃখ লাগে স্পিকারসহ এই সংসদের একজন নারী সংসদ সদস্যও এ নিয়ে কথা বলেন না। বাংলাদেশে এখন ১ বছর থেকে শুরু করে ১০০ বছরের বৃদ্ধা ধর্ষিত হচ্ছে। কিন্তু কোনো বিচার হয় না। কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত বা সুবিধাভোগীরাই এ ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত।
এ সময় তিনি ধর্ষণের তথ্য উপাত্ত তুলে ধরেন। এছাড়াও তিনি ব্যাংক কোম্পানি আইনের সমালোচনা করেন। মন্দ ঋণের তালিকা প্রকাশের দাবি করে তিনি বলেন, জাতীয় বাজেটের টাকা কোথায় যায়, কার হাতে যায় তার তালিকা প্রকাশ করা হোক।
বাংলাদেশে থেকে পাচার হয়ে যাওয়া টাকা সম্পর্কে রুমিন বলেন, এই টাকা দিয়ে মালেশিয়ায় সেকেন্ড হোম তৈরি হয়। এই টাকায় কানাডায় বেগম পাড়া তৈরি হয়। পানামা পেপারে নাম আসে। কিন্তু বিচার হয় না। এই দেশে গরিবের সোনা তামা হয়ে যায়। পাথর চুরি হয় যায় কিন্তু বিচার হয় না।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
খবরটি যদি গুরুত্বপুর্ন মনে হয় তাহলে লাইক, কমেন্টস, শেয়ার করুন
Leave a Reply