স্টেম সেল পদ্ধতির চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হবে কিডনি ও লিভার রোগী। মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ এ দু’টি অঙ্গের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার প্রতিকারে স্টেমসেল চিকিৎসার কার্যকারিতা ইতোমধ্যে প্রমাণ হচ্ছে। দুরারোগ্য বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী ও ব্যয়বহুল চিকিৎসার পরিবর্তে স্টেম সেল চিকিৎসায় সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশে এই চিকিৎসার প্রসার ঘটাতে পারলে কিডনি ও লিভার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর আফতাবনগরে অবস্থিত বাংলাদেশ লেজার এ্যান্ড সেল সার্জারি ইনস্টিটিউট এ্যান্ড হসপিটালে (বিএলসিএস হাসপাতাল) আয়োজিত সেমিনারে গবেষক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এ কথা বলেন। সেমিনারে ‘স্টেম সেল : কিডনি, লিভার ও অটিজম চিকিৎসায় এর প্রয়োগ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দক্ষিণ কোরিয়ার স্টেম সেল বিশেষজ্ঞ ফ্রাঙ্ক হু জিন না। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সেলিুমর রহমান, গ্যাস্ট্রোএন্ডোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. প্রজেশ কুমার রায় ও অধ্যাপক ডা. এএসএম রায়হান, কিডনি রোগ বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. শহিদুল ইসলাম সেলিম, জাতীয় কিডনি রোগ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ডা. মো. ফিরোজ খান, আমর্ড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোখলেসুর রহমান, বিআরবি হাসপাতালের কিডনি বিশেষজ্ঞ ডা. এমএ হামিদ, বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের কিডনি বিশেষজ্ঞ ডা. আজিমুল ইসলাম, বিএলসিএস হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী, চিফ কনসালটেন্ট ডা. জাহাঙ্গীর মো. সারওয়ারসহ বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বক্তব্য রাখেন।
মূল প্রবন্ধে দক্ষিণ কোরিয়ার স্টেম সেল বিশেষজ্ঞ ফ্রাঙ্ক হু জিন না বলেন, অকেজো কিডনি ও লিভারের কার্যকারিতা ফেরাতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সর্বাধুনিক আবিষ্কার স্টেম সেল চিকিৎসা পদ্ধতি। স্টেম সেলের প্রয়োগ শরীরের অকেজো রক্তনালী সচল করা, ক্ষত সারানো, ক্ষতিগ্রস্ত ¯œায়ু পুনরুজ্জীবীত করা, স্বাস্থ্যকর নাইট্রিক অক্সাইড রিসেপটর ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখে। দুরারোগ্য বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী ও ব্যয়বহুল চিকিৎসার পাশাপাশি স্টেম সেল চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে।
সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা বলেন, কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তার উপর সুস্থ কিডনি সংগ্রহ করাও দুরূহ। ডায়ালাইসিস নির্ভরতা কমিয়ে রোগীকে সুস্থ করে তুলতে স্টেম সেল পদ্ধতি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। দেশে বর্তমানে প্রায় তিন কোটি মানুষ হেপাটাইটিস ‘বি’, হেপাটাইটিস ‘সি’ ও ফ্যাটি লিভারের মতো জটিল লিভারের রোগে আক্রান্ত। প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ২০ হাজার মানুষ লিভারের জটিল সমস্যায় মারা যায়। লিভারে অতিরিক্ত চর্বিজনিত একটি রোগ হচ্ছে ফ্যাটি লিভার। ফ্যাটি লিভারের কারণে লিভার সিরোসিস হয়। এমনকি লিভার ক্যানসার হতে পারে। বাংলাদেশসহ সারা দেশেই ফ্যাটি লিভারে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। দেশের প্রায় ৩০ শতাংশ লোকের ফ্যাটি লিভার সমস্যা রয়েছে। এছাড়া ৫০ শতাংশ মানুষের লিভারে ন্যাশ রয়েছে। পাশ্চাত্যে ফ্যাটি লিভারের মূল কারণ এ্যালকোহল পান। কিন্তু আমাদের মতো দেশগুলোতে মেদ-ভুঁড়ি, ডায়াবেটিস, ডিজলিপিডেমিয়া বা রক্তে অতিরিক্ত চর্বি, হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ আর হাইপোথাইরয়েডিজমই ফ্যাটি লিভারের মূল কারণ। তবে বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি খুবই বেশি। এছাড়া হেপাটাইটিস ভাইরাসগুলোর মধ্যে হেপাটাইটিস-সি ভাইরাস অনেক সময়ই ফ্যাটি লিভার সৃষ্টি করে থাকে। এই অবস্থায় স্টেম সেল চিকিৎসা পদ্ধতি জটিল ও মারাত্মক এই রোগে মৃত্যু রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। অটিজম রোগীকে সারিয়ে তুলতে স্টেম সেল পদ্ধতি প্রয়োগের ব্যাপক সম্ভাবনার কথা সেমিনারে জানানো হয়।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
খবরটি যদি গুরুত্বপুর্ন মনে হয় তাহলে লাইক, কমেন্টস, শেয়ার করুন
Leave a Reply