নিলয় ধর,যশোর প্রতিনিধি:যশোরে আইন কানুন নিয়ম নীতি ভেঙে স্বাস্থ্য সেবার নামে রমরমা ব্যবসা চলছে। যশোর সরকারি হাসপাতালের ন্যুনতম ৫শ’ গজের মধ্যে কোন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপন করা যাবে না এই বিধি-বিধান রয়েছে । অথচ নিয়ম বহির্ভুতভাবে যশোর শহরে অবস্থিত ২৫০ বেড হাসপাতাল ঘিরে গড়ে উঠেছে একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। হাসপাতালের গেটের সামনেই রয়েছে ১৫টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক।
যার দুরত্ব হবে মাত্র ১০ থেকে ১৫গজ। আর ২শ’ ও ৩শ’ গজের মধ্যে রয়েছে আরো ১৩টি। যার অধিকাংশের বিরুদ্ধে রোগীদের সাথে প্রতারণা, দালালের মাধ্যমে সরকারি হাসপাতালের রোগী ধরার ফাঁদ পাতা ও স্বাস্থ্য সেবার নামে নানামুখী প্রতারনা ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। সরকারি হাসপাতালের অধিকাংশ ডাক্তার এসব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডিউটি করেন। কোন কোন ডাক্তার আবার এসব বেসরকারি হাসপাতালের ব্যবসায়িক পার্টনারও। স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা এসব জানেন দেখেন শোনেন কিন্তু কোনরূপ ব্যবস্থা নেন না। যশোর সিভিল সার্জন দপ্তর সূত্র জানায়, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপনে শুধু ৫শ’ গজের মধ্যের বিষয় নয়, অনেক নিয়ম কানুন আছে কিন্তু কেউই তা মানেন না। সিভিল সার্জন ডাঃ দিলিপ কুমার রায় জানান, এ ব্যাপারে বিজি প্রেসের রুলস এ্যান্ড রেগুলেশনে সুনির্দ্দিষ্ট কিছু নেই।
তবে বিএসআর বইয়ে ৫শ’গজের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক স্থাপন করা যাবে না বিধান উল্লেখিত আছে। সরকারি হাসপাতালের গা ঘেষে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক স্থাপনের কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকা উচিত। বললেন, সিভিল সার্জন অফিস থেকে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ব্যাপারে ডিজি অফিসের নির্ধারিত ফরম পুরণ করে মতামত দেওয়া হয়। তাতে লোকেশন ফাইন্ড আউটের একটা ক্লজ আছে। সরেজমিন তদন্তপুর্বক ফরমটি পুরণের কথা। ডিজি অফিস লাইসেন্স দেওয়ার মালিক। তারা কোথায় কিভাবে দিয়েছে তার জবাব আমি দিতে পারবো না। বর্তমানে সরকার টোটাল বিষয়টি একটা সিষ্টেমে আনার জন্য নতুন নিয়মে কাজ শুরু করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) অনলাইনে লাইসেন্স প্রদান করবে। তাতে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নতুন ও পুরাতন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সবকিছুই এসে যাবে।
নতুন নিয়মে বিধিবহির্ভুত বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক উচ্ছেদ বা বাতিল হবে কিনা সেটি বলা যাচ্ছে না। সূত্রমতে, যশোরের মতো সরকারি হাসপাতাল ঘিরে এত অধিক সংখ্যক বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপন নজিরবিহীন। শুধু তাই নয়, ৩০ লক্ষাধিক মানুষের একমাত্র আধুনিক চিকিৎসাস্থল যশোর ২৫০ বেড হাসপাতালেরও সেবার মান একেবারে নীচে নেমে গেছে। চরম অনিয়ম ও অব্যবস্থার কারণে রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ডাক্তারের বদলে ইটার্ণী ডাক্তাররা বেশীরভাগ সময় রোগী দেখেন। সূত্র জানায়, ২৫০ বেড হাসপাতালে মোট ৩৯জন ডাক্তার কর্মরত রয়েছেন।
তার মধ্যে২/৪জন বাদে সবাই প্রাইভেট প্রাকটিসের নামে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রোগী দেখেন। সূত্রমতে, বাসস্ট্যান্ডগুলোর কলারম্যানের ভুমিকা পালন করছে হাসপাতালের দালালরা। হাসপাতালে রোগী আসা মাত্রই নানা কৌশলে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। একইভাবে ডাক্তাররাও রোগীদের বলেন ‘হাতের কাছেই অত্যাধুনিক বেসরকারি হাসপাতাল আছে, টেস্ট হয় ভালো, যান ওখানে।’ এতে যথারীতি ওই ডাক্তারের নামে চলে যায় নির্দ্দিষ্ট অংকের কমিশন।
যশোর শহরের ঘোপে হাসপাতাল এলাকার বাসিন্দা ইকরাম হোসেন জানালেন, ‘সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পাচ্ছেন না রোগীরা। বেসরকারি হাসপাতালেও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। স্বাস্থ্য সেবার নামে চলছে রীতিমতো ব্যবসা’। ২৫০ বেড হাসপাতালের সিংহভাগ রোগী ডাক্তারদের স্লিপ হাতে নিয়ে হাসপাতাল গেটের সামনের ইবনে সিনা, কিংস, দেশ, ইউনিক, জেস, রেনেসা, স্ক্যান ও লাইফ কেয়ারসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে টেস্ট করছেন। অভিযোগ, ইবনে সিনা ২৫% ছাড়ে স্বাস্থ্য সেবার চটকদারি প্রচার চালিয়ে ‘গলাকাটা’ দাম হাঁকছে।
বেবি নিডল, এ্যালকোপ্যাড, ইনজ্যুরি প্যাড যার দাম ৬/৭টাকা সেটি নানা কৌশলে আদায় করছে শতাধিক টাকা। অন্যান্য বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকেও প্রায় একই অবস্থা। মাগুরা জেলার সদর উপজেলার ছয়চার গ্রামের তবিবর মোল্যা এসেছিলেন ইবনে সিনায় হরমোন টেস্ট করতে। স্লিপ করা হয় ২হাজার ৭শ’টাকা। তিনি সেই একই টেস্ট করান ন্যাশনাল প্যাথলজিতে ৯শ’টাকায়।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ জয় রহমান
Leave a Reply