অনলাইন ডেস্ক : ভারতের রাজধানী দিল্লির হাউজ কাজি এলাকায় তুচ্ছ ঘটনার জেরে স্থানীয় মন্দিরে একদল দুষ্কৃতিকারীর হামলার ঘটনায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দফায় দফায় শান্তি বৈঠক ও পদযাত্রা করছেন স্থানীয় হিন্দু ও মুসলিম নেতারা।
এ ঘটনায় বুধবার দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দিল্লির পুলিশ কমিশনারকে তলব করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর পুলিশ কমিশনার অমূল্য পটনায়ক জানান, হামলাকারীদের কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩০ জুন রাতে হাউজ কাজি এলাকায় দুই হিন্দু ও মুসলিম প্রতিবেশীর মধ্যে বাড়ির সামনে মোটরসাইকেল পার্কিং নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এর কয়েক ঘণ্টা পরই দুষ্কৃতিকারীরা স্থানীয় দুর্গা মন্দিরে হামলা চালায়। এ ঘটনার পর গত তিনদিন ধরে তীব্র সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বিরাজ করছে। দিল্লির ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র চাঁদনি চকের সব দোকান-পাট বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় এমএলএ অলকা লাম্বা বলেন, এই এলাকাটা গঙ্গা-যমুনা তেহজিব বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক পীঠস্থান। অথচ এখানেই গাড়ি পার্কিং নিয়ে সামান্য ঝগড়ার জেরে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ ছড়িয়ে পড়লো যে, এলাকায় নাকি মব লিঞ্চিং (গণধোলাইয়ে হত্যা) চলছে।
তিনি বলেন, দুর্গা মন্দিরে পাথর ছোঁড়ায় কিছু কাচ ভেঙেছে বা মন্দিরের ক্ষতি হয়েছে এ কথা ঠিক, কিন্তু মন্দিরে ভাঙচুর চালানো হয়েছে বা আগুন লাগানো হয়েছে বলে যে সব রটনা চলছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এলাকা পরিদর্শন করে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন চাঁদনি চকের বিজেপি এমপি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হর্ষবর্ধন। তিনি বলেন, এই ঘটনা যতই যন্ত্রণাদায়ক ও হৃদয়বিদারক হোক, তারপরও মহল্লায় সৌহার্দ্য রক্ষা করতেই হবে। পাশাপাশি দোষীদের বিরুদ্ধেও কঠোরতম পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে আমাকে জানানো হয়েছে।
দিল্লির ফতেহপুরী শাহী মসজিদের ইমাম মুফতি মুকাররম আহমেদ জানান, প্রায় তিন দশক আগে লালকৃষ্ণ আদভানির রথযাত্রাও কিন্তু এই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিল। তখনও মসজিদের ওপর ইটপাটকেল ছোঁড়া হয়েছিল, ত্রিশূল দিয়ে ইমামকে আঘাত করা হয়েছিল। তবে আমরা ওই ঘটনায় তেমন কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে আপোস করেছিলাম। এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। এবারও মুসলিমরা প্রয়োজনে মন্দিরের পুনর্নিমাণে সাহায্য করবে জানিয়ে বিষয়টা আপোসে মিটিয়ে নেয়ার আবেদন জানাচ্ছেন তিনি।
হাউজ কাজি ধীরে ধীরে স্বাভাবিকতার দিকে এগোলেও বুধবার সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দিল্লি পুলিশের প্রধানকে দিল্লির নর্থ ব্লকে মন্ত্রণালয়ের সদর দফতরে তলবের পর থেকে এলাকায় নতুন করে নানা জল্পনা ও উত্তেজনা ছড়াতে থাকে।
স্থানীয়রা বলছেন, যেকোনো মূল্যে এলাকার এলাকার সম্প্রীতির পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। চাঁদনি চকের হিন্দু-মুসলিমরা যেভাবে একে অন্যের উৎসবে ও আনন্দে চিরকাল ভাগীদার হয়ে এসেছেন, সেই সংস্কৃতি কিছুতেই নষ্ট হতে দেয়া যাবে না।
সুধীর ত্রিপাঠী নামে এক ব্যক্তি বলেন, সম্ভবত বাইরের লোকেরা এসেই এ ধরনের অসামাজিক কাজ করে গেছে। কিন্তু আমাদের দুই সম্প্রদায়ের মুরুব্বিরাই একমত, তার জন্য নিজেদের মধ্যকার এতোদিনের ভালবাসার সম্পর্ক নষ্ট করা চলবে না।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply