নয় বছর পূর্ণ হলো বিডিআর বিদ্রোহের নামে পিলখানায় স্মরণকালের জঘন্যতম সেনা হত্যাযজ্ঞের। নয় বছর আগে বিডিআর বিদ্রোহীরা তথাকথিত দাবিদাওয়া আদায়ের নামে ৫৭ জন মেধাবী ও চৌকস সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। একসঙ্গে এত সেনা কর্মকর্তা প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
হত্যাযজ্ঞ মামলায় ফাঁসির দন্ডাদেশপ্রাপ্ত ১৫২ জনের রায় কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে আর যাতে কোন বাহিনীতে এমন বিদ্রোহের ঘটনা না ঘটতে পারে, এজন্য বিদ্রোহের শাস্তি সাত বছরের পরিবর্তে মৃত্যুদন্ড- করা হয়েছে।
আজ বিডিআর বিদ্রোহে শাহাদাতবরণকারীদের শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনী ও বিজিবি প্রধানসহ উর্ধতনরা। রবিবার ও আজ সোমবার শাহাদাতবরণকারীদের স্মরণে বিজিবির প্রতিটি দফতরে বিশেষ দোয়া, মিলাদ মাহফিলসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
ইতিহাসের জঘন্যতম সেই বিডিআর বিদ্রোহের সূচনা হয় ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের সভাপতিত্বে পিলখানায় বিডিআর দরবার হলে বার্ষিক দরবার শুরু হয়। এরই মধ্যে দরবার হলে উপস্থিত জওয়ানরা জাগো বলে হুঙ্কার দিয়ে দরবার হল ত্যাগ করে। এরপর বিদ্রোহীরা অস্ত্রাগারের দিকে ছুটে যায়। সেখানে দায়িত্বরত সেনা কর্মকর্তা মেজর রেজাউল করিমকেও টেনে হিঁচড়ে বের করে। তার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। এরপর অস্ত্রাগার লুট করে।
বিদ্রোহী সিপাহী মাঈন লুণ্ঠিত অস্ত্র নিয়ে দরবার হলে প্রবেশ করে মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের দিকে অস্ত্র তাক করে। এ সময় উপস্থিত অন্য চৌকস সেনা কর্মকর্তারা মাঈনকে নিরস্ত্র করে ফেলেন। এরপরই দৃশ্যপট পাল্টে যায়। শত শত বিদ্রোহী অস্ত্র হাতে প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। গুলিতে পুরো দরবার হল ঝাঁঝরা হয়ে যায়। বিদ্রোহীদের সরাসরি মদদ দেয় সুবেদার মেজর গোফরান মল্লিক। বিদ্রোহীরা সেনা কর্মকর্তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়।
আর একে একে বাসা থেকে ধরে এনে হত্যা করা হয় সেনা কর্মকর্তাদের। যা মহান স্বাধীনতা যুুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর নির্মমতাকেও হার মানিয়েছে। পৈশাচিক সেই হত্যাকান্ড থেকে বাঁচতে অনেকেই দিশেহারা হয়ে আশ্রয় নেন বিভিন্ন জায়গায়। বিদ্রোহীদের নির্যাতনে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। বেশ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা প্রাণ বাঁচাতে নিজের পোশাক খুলে বিডিআর জওয়ানের পোশাক পরেন।
একজন সেনা কর্মকর্তা সন্তানের স্কুলের বেতন দেয়ার জন্য বিডিআরের স্কুলে যান। সেখানেই হামলা করে উন্মত্ত বিদ্রোহীরা। সেই সেনা কর্মকর্তাকে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নিজের সেক্রেটারিয়েট টেবিলের নিচে লুকিয়ে রেখেছিলেন। প্রায় তিন দিন সেখানেই লুকিয়ে ছিলেন। জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে সেই সেনা কর্মকর্তা আর প্রধান শিক্ষিকার কপালে খাবার হিসেবে জুটেছিল মাত্র দেড় লিটার পানি। দেড় লিটার পানিতেই কোনমতে জীবন বাঁচে সেই সেনা কর্মকর্তা আর শিক্ষিকার। পরবর্তীতে তাদের যখন উদ্ধার করা হয়, তখন তারা ক্ষুধার যন্ত্রণায় টেবিলের নিচে অচেতন হয়ে পড়েছিলেন।
বিদ্রোহের নির্মমতা এতটাই পৈশাচিক ছিল যে, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। অনেক সেনা কর্মকর্তাকে যুদ্ধক্ষেত্রের মত দৌড়ে পালানোর নির্দেশ দিয়ে পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করেছে উন্মাদ বিদ্রোহীরা। বিদ্রোহীরা দরবার হলে উপস্থিতদের মধ্যে যাদের পেয়েছে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে। দরবার হল থেকে একজন সেনা কর্মকর্তাকে ধরে টেনে হিঁচড়ে কোয়ার্টার গার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। নেয়ার সময় সেনা কর্মকর্তারা খুনী বিডিআর বিদ্রোহীরা আমবাগান দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার কথা বলে। সেনা কর্মকর্তা সরল বিশ্বাসে জওয়ানদের এমন নির্দেশ শাস্তি হিসেবে ভেবে দৌড়ে পালাতে যান, ঠিক তখনই তার পায়ে পর পর কয়েকটি গুলি করে বিদ্রোহীরা। এরপর আহত সেনা কর্মকর্তাকে বিদ্রোহীরা টেনে হিঁচড়ে কোয়ার্টার গার্ডে নিয়ে যায়। সেখানে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। টানা প্রায় দুই দিন নির্যাতন চালানোর পর ২৬ ফেব্রুয়ারি ওই সেনা কর্মকর্তাকে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে বিদ্রোহীরা।
এই পৈশাচিক হত্যাকান্ড হার মানায় বিশ্বযুদ্ধকে। একে কেবল পাকিস্তানি হানাদারের বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গেই তুলনা করা যায়।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply