চাঁদপুরের ‘শাহাবুদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার জন্য দেশব্যাপী পরিচিত হয়ে উঠেছে। ফেসবুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসছেন এর অনন্য স্থাপনা শৈলী দেখতে।
চাঁদপুর জেলা সদরের লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে ভিন্ন আঙ্গিকে আধুনিক ডিজাইনে তৈরি শাহাবুদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজটি অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটি দেখতে দূর-দুরান্ত বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন এসে ভিড় করছে।
জানা যায়, ২০১৫ সালের অক্টোবরে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. শাহাবুদ্দিন অণু লক্ষ্মীপুর গ্রামে এ স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। ওই বছরই ১১৬ শতাংশ জমি ক্রয় করে নান্দনিক এই স্কুল নির্মাণের কাজ শুরু করেন তিনি। শাহাবুদ্দিন ফাউন্ডেশনের একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পায় ‘শাহাবুদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ’। দুই বছর ধরে স্কুলের কার্যক্রম পুরোদমে চলছে। এখানে প্লে থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত বর্তমানে প্রায় ১৬৮ জন ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া করছে। এই স্কুলে বর্তমানে ১২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছেন।
শাহাবুদ্দিন স্কুলে ঘুরতে আসা গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাজ্জাদ বলেন, আমরা প্রথমে এই বিদ্যালয়ের ছবি ফেসবুকে দেখতে পাই। তখন মনে করেছিলাম একটি মনে হয় বিদেশের কোন স্কুল। কিন্তু জানতে পারি একটি আমাদের বাংলাদেশের মধ্যেই চাঁদপুরে অবস্থিত। তাই আমরা ৫ বন্ধু মিলে এখানে ঘুরতে এলাম। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ভবন ও পরিবেশ দৃষ্টিনন্দন। এমন পরিবেশে শিশুরা এমনিতেই বিদ্যালয়মুখী হবে। তা ছাড়া তাদের মানসিক মেধা বিকাশ ঘটবে বলেও আমি বিশ্বাস করি।
ঢাকা থেকে আসা ব্যবসায়ী জাবেদ হোসেন বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে আমি ঘুরেছি। কিন্তু কোথাও এমন দৃষ্টিনন্দন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেখিনি। শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে এই ধরনের পরিবেশ অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। আমাদের চাওয়া সমাজের বিত্তশালীরা এবং সরকার যদি এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরও গড়ে তোলে তবে দেশের শিক্ষার মান ও পরিবেশ আরও বৃদ্ধি পাবে।
শাহাবুদ্দিন প্রাইমারি অ্যান্ড হাই স্কুলের শিক্ষক মো. মোজাম্মেল হোসেন ও মিসেস জোনাকি আক্তার বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ভালো করতে নিয়মিত ৪ জন শিক্ষকের সমন্বয়ে পাঠদান করানো হয়। শিক্ষার্থীরা যেন সহজেই পড়া বুঝতে ও ধারণ করতে পারে সে জন্য অত্যন্ত যত্ন নিয়ে তাদেরকে আমরা পড়িয়ে থাকি। সকল শিক্ষার্থীর মেধা এক রকম থাকে না। তাই নিয়মিত ক্লাসের বাইরেও এখানে দুর্বল শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ১ ঘণ্টার একটি বিশেষ ক্লাস করিয়ে থাকি।
শাহাবুদ্দিন প্রাইমারি অ্যান্ড হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শঙ্কর কুমার সাহা বলেন, প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকায় এই ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা চ্যালেঞ্জের বিষয়। এখানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের আধুনিক শিক্ষায় গড়ে তুলতে শিক্ষকরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের বিদ্যালয়ে শুধু খেলাপড়াই হয় না। এখানে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়মিত খেলাধুলাও করানো হয়। আপনি যদি খেয়াল করে থাকেন, দেখবেন এখানে ক্লাস রুমগুলো কিন্তু চার দেয়ালে ঘেরা নয়। এমনভাবে এই রুমগুলো তৈরি যাতে প্রচুর আলো বাতাস আসে। তাই বাচ্চারা একঘেয়েমি ভোগে না। তিনি বলেন, বর্তমানে প্লে থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত চালু রয়েছে। আশা করি আগামী বছর থেকে হাইস্কুল ও চালু হয়ে যাবে। এবং ধারাবাহিকভাবে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রমও চালু করা হবে। আমাদের এই বিদ্যালয় দেশের একটি মডেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন করতে আমরা বদ্ধ পরিকর।
Leave a Reply