জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান (জাপা) এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রোববার (১৪ জুলাই) সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
গত ২৬ জুন থেকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন ছিলেন এইচএম এরশাদ। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।
একনজরে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ:
একজন সামরিক শাসকের পতনের পর আবারো ঘুরে দাঁড়িয়েছেন রাজনীতিতে। এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং পৃথিবীর ইতিহাসেই বিরল। নানা কারণেই আলোচিত-সমালোচিত ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। রাজনীতিতে যিনি ছিলেন আনপ্র্যাডিক্টেবল খ্যাত।
১৯৩০ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি জন্ম নেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। পৈতৃক নিবাস ভারতের কোচবিহারে। পিতা মকবুল হোসেন ছিলেন আদালতের পেশকার। পিতার চাকরির সুবাদেই বাংলাদেশের রংপুরে তাদের বসত-ভিটা। ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করা এরশাদ ৫২ সালে কমিশন লাভ করেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। ১৯৭৫ সালের ২৪ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল এবং উপসেনাপ্রধান হিসেবে পদোন্নতি পান।
সেনা অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হবার কিছুদিন পরই এরশাদ সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৮১ সালে ৩০ মে জিয়াউর রহমান নিহত হবার পর দেশের রাজনৈতিক পটভূমিতে এরশাদের আনাগোনা শুরু হয়। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারকে হটিয়ে দখল করেন রাষ্ট্র ক্ষমতা। পরের বছরের ১১ ডিসেম্বর আত্মপ্রকাশ করেন প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসেবে। ১৯৮৬ সালে গঠন করেন জাতীয় পার্টি। এ দল থেকে মনোনয়ন নিয়ে ৫ বছরের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং জামায়াত অংশ নিলেও নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। আন্দোলনের মুখে এক বছরের মাথায় সংসদ বাতিল করতে বাধ্য হন এরশাদ। ১৯৮৮ সালে আবারো আয়োজন করেন সাধারণ নির্বাচনের। ওই নির্বাচনও বয়কট করে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল। সবশেষ সম্মিলিত আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতাচ্যুত হন এরশাদ।
ক্ষমতা হারানোর পর গ্রেফতার হন। ৯১ ও ৯৬’র নির্বাচনে জেল থেকেই ৫টি আসনে ভোটে অংশ নিয়ে বিজয়ী হন এরশাদ। ৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি জামিনে মুক্ত হন। ১৯৯৯ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে যুক্ত হলেও পরে বেরিয়ে যান। ততদিনে জাতীয় পার্টি ৩ ভাগে খণ্ডিত।
আদালতের সাজার কারণে ২০০১’র নির্বাচনে এরশাদ অংশ নিতে না পারলেও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা ১৪টি আসনে জয়ী হয়। ২০০৮-এ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে গিয়ে নির্বাচনে করে ২৭টি আসনে নির্বাচিত হন এরশাদের প্রার্থীরা। মন্ত্রী হন তার ভাই জিএম কাদের। ২০১৪ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে নানা নাটকীয়তার জন্ম দেন এরশাদ। ভোটের ঠিক আগ মুহূর্তে সিএমএইচে ভর্তি হন। স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নেয় জাতীয় পার্টি। এমপি হিসেবে শপথ নেন এরশাদও। হন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। মন্ত্রী হন দলের তিন নেতা। আর দল ভাঙ্গেন দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহচর কাজী জাফর আহমদ।
সবশেষ ২০১৮’র একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিজেই নেতৃত্ব দেন দলকে। আসল বিরোধী দল হওয়ার ঘোষণা দিয়ে বিরোধী দলীয় নেতার আসনে আসীন হন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply