হজ পালন কালে যেসব সাধারণ রোগ বা সমস্যা হতে পারে
সৌদি আরবের আবহাওয়া,পরিবেশ,খাদ্য সব কিছুই আমাদের দেশ থেকে আলাদা। তাই, হজ পালন করতে গিয়ে অনেকে,অনেক রকম স্বাস্থ্য সমস্যাতে পড়েন। তবে,সচেতন থাকলে অনেক সমস্যা সহজে মোকাবেলা করা সম্ভব।
হজ পালনকারীরা সাধারণত নীচের সমস্যাগুলোতে বেশি ভোগেন :
• ভাইরাল ফিভার
• ডায়রিয়া
• ডিহাইড্রেশন
• পায়ের পেশীতে টান
• অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস(হাইপো এবং হাইপার গ্লাইসেমিয়া)
• চর্ম রোগ
• শ্বাসকষ্ট
• সান স্ট্রোক
• শ্বাসকষ্ট
• চোখের ইনফেকশন
যেভাবে সুস্থ থাকা যায়
যারা অসুস্থ আছেন,তাদের সুস্থভাবে হজ পালনের জন্য প্রয়োজন ডাক্তারের পরামর্শ,ব্যক্তিগত সচেতনতা,সঠিক খাদ্য গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম।
• অনেকেরই ডায়াবেটিস,উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনি রোগ রয়েছে তারা,হজে যাবার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।মেডিসিন,ইসুলিনএবং অন্যান্য গাইডলাইন্স সমূহ খুব ভালভাবে জেনে নিন।
• যাদের ডায়াবেটিস আছে,হজে যাবার পূর্বে নিয়মিত ব্লাড সুগার মনিটর করবেন।যারা, ইনসুলিন গ্রহণ করেন তাদেরকে অবশ্যই সময়মত ইনসুলিন নিতে হবে।
হজের,সময় ব্যাগে ইনসুলিন বহন করা যাবে। রোদ না লাগলে অন্তত ১ মাস ইনসুলিন ভাল থাকবে।আর ইনসুলিন বন্ধ করে দিলে হাইপারগ্লাইসেমিয়াসহ আরও অনেক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই,ইনসুলিন বন্ধ করার কোন কারণ নেই।
• যারা,ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তারা সবসময় সঙ্গে কিছু শুকনো খাবার রাখবেন।দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকবেন না।অন্তত ৩ ঘণ্টা পর পর কিছু খাবার খেয়ে নেবেন।বিস্কিট,বাদাম,মুড়ি বা ফল অল্প পরিমানে খাবেন। এতে করে,হাইপোগ্লাইসেমিয়া হবার সম্ভাবনা কম হবে।এছাড়া,সাথে খেজুর রাখতে পারেন।হাইপোগ্লাইসেমিয়াতে কাজে দেবে।
• ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পায়ের যত্ন ভীষণ জরুরি। যেহেতু,হজের সময় যেহেতু,অনেক খানি হাঁটতে হয় । তাই আরামদায়ক জুতা পরতে হবে যেন পায়ে কোন আঘাত না লাগে।
• যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগের জটিলতা রয়েছে তারা নিয়মিত মেডিসিন গ্রহণ করবেন এবং জরুরি মেডিসিন অবশ্যই সাথে রাখবেন। আপনার সাথে থাকা,অন্য একজন কে আপনার সমস্যা সম্পর্কে জানিয়ে রাখুন। হার্টে ব্যাথা হলে শুরু হলে,সাথে সাথে স্প্রে নিন।
• যাদের হাঁপানির সমস্যা আছে।ইনহেলার হাতের কাছে রাখুন।হাঁপানির সমস্যা ধূলাবালিতে বেড়ে যায় তাই মুখে,মাস্ক পরে নিতে পারেন।
• যাদের শারীরিক অবস্থা দুর্বল তারা,ইবাদাতের,পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেবেন।
• যেহেতু,মক্কা বা মদিনাতে প্রচণ্ড গরম আবহাওয়া তাই গরম এবং সান স্ট্রোক থেকে বাঁচতে হালকা রঙের ছাতা ব্যবহার করুন। চেষ্টা করুন কিছুটা ছায়ার মধ্যে থাকতে । সারাদিনের ইবাদাত শেষে,খুব ভালভাবে কিছুটা ঠাণ্ডা পানিতে গোসল সেরে নেবেন।এরপর ময়েশ্চারাইজিং লোশন খুব ভালভাবে সারা শরীরে লাগাবেন।
• প্রচণ্ড রোদে একটানা অনেকক্ষণ হাঁটবেন না।কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে আবার শুরু করবেন।
• সাথে পানির বোতল রাখুন।খুব বেশি দুর্বল লাগলে ওর স্যালাইন খান।
• চোখের ইনফেকশন হলে,চোখে বারবার হাত লাগালো উচিত নয়। চশমা পরে নিলে কিছুটা আরাম বোধ করবেন।
• যাদের উচ্চ রক্তচাপ অথবা ডায়াবেটিস আছে এমন অবস্থায় ডায়রিয়া হলে স্যালাইন খেতে ভুলবেন না। কারণ,আপনার ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকুক না কেন,ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান বের হয়ে যায়। সুতরাং,ওর স্যালাইন অবশ্যই খেতে হবে।
• হজের সময় হাঁটতে গেলে বা ঘুমের মাঝে পায়ের পেশিতে হুট করে টান লাগতে পারে। মূলত, ডিহাইড্রেশন,পটাশিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের অভাবে এমন হতে পারে। তবে হজের সময় মূলত পর্যাপ্ত পানি পান না করা হলে এমন হয়। সুতরাং,পেশিতে টান লাগা এড়াতে প্রচুর পরিমাণে পানি,ফলের রস,স্যূপ জাতীয় খাবার এবং দুধ খেতে পারেন।এছাড়া,যাদের উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের সমস্যা নেই , তারা প্রতিদিন একটি করে ওরাল স্যালাইন খেতে পারেন।
• যারা,ক্রনিক ডিজিজে ভুগছেন তারা দেশ ত্যাগের আগেই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। যাবার সময় মেডিকেল টেস্টের রিপোর্ট সাথে নিন যাতে,হজের সময় কোন সমস্যা হলে আপনার নিকটস্থ হেলথ সেন্টার দ্রুত আপনার সম্পর্কে অবগত হতে পারেন।
হজের সময় যে জিনিস গুলো সাথে নেয়া উচিত
বাড়তি সাবধানতার জন্য হজে যাবার সময় কিছু মেডিসিন,শুকনো খাবার এবং প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম সাথে নিতে পারেন।
বিশেষ করে,এন্টি-হিস্টামিন,প্যারাসিটামল,ওর-স্যালাইন ও আমোডিস জাতীয় মেডিসিন। এছাড়া,অন টাইম ব্যান্ডেজ,হেক্সিসল,ভায়োডিন,একটা কাঁচি এবং সাদা ব্যান্ডেজ সাথে রাখুন। যেকোন,সময়আপনার বা অন্য কারো কাজে লাগতে পারে।
এছাড়া,যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা গ্লুকোমিটার সাথে রাখবেন। যারা,চশমা ব্যবহার করেন তারা অতিরিক্ত ১-২ টি চশমা নেবেন।
এছাড়া,ব্রাশ,টু্টপেস্ট,শ্যাম্পু,সাবান,লোশন,রূমাল,কয়েক সেট আরামদায়ক জুতা,রোদ চশমা, মাস্ক ইত্যাদি নিতে পারেন।
শুকনো খাবারের মধ্য,চিড়া,মুড়ি,বিস্কিট,চানাচুর,চিনি,টি-প্যাক রাখতে পারেন সাথে।
Leave a Reply