আমাদের দেশে প্রাচীন কাল থেকে পালং শাক খাওয়া হয়ে আসছে। পালং শাকের অনেক গুণ। পালং শাক অনেক অসুখ সারায়। শরীরের ভেতরকার অর্থাৎ কিডনি বা গলব্লাডারের পাথর গলিয়ে বের করে দেয় এইটেই পালং শাকের সবচেয়ে বড় গুণ। ফুসফুসের অসুখেও পালং শাক উপকারী। প্রায় সব শাকেই ক্ষার পদার্থ (অ্যালক্যালি) বেশি আছে বলে অর্থাৎ ক্ষারজ বলে শরীরের বেশি উপকার করে।
আন্ত্রিক রোগে বা অন্ত্রের অসুখে, পেটের অসুখে, একটানা পেটের অসুখে ইত্যাদি পালং শাক খেলে উপকার পাওয়া যায়। টোম্যাটোকে বাদ দিলে অন্য সব তরিতারকারির মধ্যে পালং শাকই সবচেয়ে বেশি শক্তিবর্ধক। পালং শাকে লোহা ও তামা আছে।
এই শাক জনডিস রোগীর পথ্য। এই শাকে শরীরে রক্ত বাড়াবার গুণ বেশি আছে। পালং শাক শুধু রক্ত বৃদ্ধিই করে না রক্ত গুদ্ধিও করায় অর্থাৎ রক্তের দোষ নাশ করে, হাড় মজবুত করে। সত্যি কথা বলতে কি পালং শাকের টাটকা সবুজপাতা হল জীবনীশক্তির মূল।যদি আর্থিক অসুবিধের জন্যে বাচ্চাকে বেশি দুধ না খাওয়ানো যায় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে অল্প পরিমাণে যতটা সহ্য করতে পারে টাটকা পালং শাকের রসও খাওয়ানো যেতে পারে – সেই সঙ্গে অবশ্য দুধ ও খাওয়াতের হবে।
গুণগত দিক থেকে দেখতে গেলে পালং শাক তাজা, পালং শাকের চচ্চড়ি সব তরকারির মধ্যে শ্রেষ্ঠ। পালং শাক রান্নার ব্যাপারে কয়েকটি কথা পরে বলা যাবে। এই শাক প্রশ্বাসের কষ্ট দূর করে পিত্তের পক্ষে উপকারী, কফের কষ্ট দূর করে, জমে থাকা মল মুক্ত করে। এই শাক শীতল।
বিখ্যাত বৈদ্য সুশ্রুতের মতে পালং শাক রুক্ষ এবং পিত্ত ও কফের পক্ষে হিতকর।
পালং শাক রুচি বৃদ্ধি করে, প্রস্রাবের মাত্রা বৃদ্ধি করে। শোথ (শরীর ফোলা) রোগের পক্ষে উপকারী, সব রকম ব্যাধি নিবারণ করে শরীরে সামঞ্জস্য বিধান করে ও মন শান্ত রাখে। তাড়াতাড়ি হজম হয়।
সুস্থ থাকতে পালং শাক:
(ক) শরীরের অন্ত্র সচল রাখে এবং অন্ত্রের ভেতরে জমে থাকা মল বের করে দেয়। ডায়বেটিসের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী।
(খ) পালং শাকের বীজ ও মল নিষ্কাশনে সাহায্য করে, শরীর ঠাণ্ডা রাখে-লিভারের অসুখ জনডিস ও পিত্তের রোগ উপশম করে। কফ ও শ্বাসের রোগেও উপকারী।
(গ) পালং শাকের বীজের ঘন তেল কৃমি ও মূত্রের রোগে সুফল দেয়।
(ঘ) পালং শাকের বা পালং বীজের ক্বাথ গলা (কন্ঠ) ফুসফুস, শ্বাসনালিকার কষ্ট ও শরীর জ্বালা করে এমন জ্বরে খাওয়ানো হয়।
(ঙ) গলা জ্বালা করলে পালং শাকের রস দিয়ে কুলকচি করে খাওয়ালে আরাম পাওয়া যায়।
(চ) পালং শাকের ক্বাথ বা রস খেলে কিডনির পাথর গলে গিয়ে প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়।
(ছ) পালং পাতা পিষে নিয়ে পুলটিস তৈরি করে বাঁধলে কাঁচা ফোড়া বা গাঁঠ তাড়া তাড়ি পেকে যায়। ফোড়া বা গাঁটের জন্যে যদি জ্বর আসে তাও সেরে যায়।
বৈজ্ঞানিক মতে: পালং শাকে ভিটামিন এ, বি, সি, ই আছে। প্রোটিন, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ক্লোরিন আর লোহা আছে। পালং শাক শরীর রক্ত বাড়ায়। পালং শাকে প্রোটিন উৎপাদক অ্যামিনো অ্যাসিড বেশি পরিমাণে আছে। এর সবুজ পাতায় এমন গুণ আছে যে খেলে শরীরের বৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটে।বুদ্ধি বা মেধা বাড়াতে ও সাহায্য করে। আমরা রোজ যে ডাল খাই তার প্রোটিনের মধ্যে অ্যামিনো অ্যাসিড নেই। সেইজন্যে ডালের মধ্যে পালং শাক দিয়ে রান্না করলে রোজকার খাদ্য তালিকায় অ্যামিনো অ্যাসিডের মাত্রা বাড়বে।
অনেকে বলেন, পালং শাকের আদি জন্মভূমি ভারত। আয়ুর্বেদ মতে পালং শাক মধূর, শীতল, নাক মুখ থেকে রক্তপড়া (রক্তপিত্ত) বন্ধ করে, বিষের দোষ নাশ করে, মলরোধ করে। অনেকের মতে মলকারক, ত্রিদোস অর্থাৎ বাত কফ ও পিত্তের নাশক। কেউ কেউ আবার বলেন হলে পালং শাক খাওয়া ভাল নয়।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply