রোগ আরোগ্যের জন্যে রসুন খুব উপকারী এবং অনেক গুণ আছে বলে প্রাচীন আচার্যেরা রসুনকে অমৃতের সমান বলেছেন। কথিত আছে গরুর যখন ইন্দ্রের আলয় থেকে অমৃত অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছিলেন তারই কয়েকটি বিন্দু পৃথিবীর মাটিতে পড়ে রসুনের উৎপত্তি হয়েছে। রসুনের এত গুণ। শরীরের সপ্ত ধাতুকে পুষ্ট করে বলে রসুনকে আয়ুর্বেদে রসায়ন বলা হয়েছে।
বাগভট্র বলেছেন : রসুনের তেলের মালিশ বাত এবং প্যারালিসিসের অঙ্গ অসার হয়ে যাওয়া পক্ষে ভাল। প্রাচীন বৈদ্য বাগভট্র বলেছেন বায়ু রোগে রসুনের চেয়ে ভাল ওষুধ আর নেই। রসুনের মধ্যে বায়ুর প্রকোপ নাশ করবার শক্তি আছে। বাগভট্র এর এ সম্পর্কে উক্তি হল- বিদ্যতি বায়ৌ না দ্রব্যম রসুনাত পরম।
সুস্থ থাকতে রসুনের ব্যবহারঃ
১। বাত ব্যাধিগ্রস্তরা রসুন প্রতিদিন আলাদা করে তো খাবেনই এছাড়া ও ভাত রুটির সঙ্গে ও নিয়ম করে রসুন খাওয়া উচিত। মুগের ডাল, কলাইয়ের ডাল, ছোলার ডাল, মুসুরির ডাল প্রভৃতি বিভিন্ন ডালে সাঁতলানোর তরকারিতে, চাটনিতে ও শাক ভাজায় এবং ফোড়ন হিসেবে রসুন দিলে একটি বিশেষ রুচিকর স্বাদের সৃষ্টি হয়।
২। শীতকালে শীতের প্রকোপ থেকে এবং নানারকম শীতকালীন ব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে অনেকে কাঁচা রসুনও গুড় একসঙ্গে মিশিয়ে নিয়মিত খেয়ে থাকেন।
৩। শীতকালে যদি নিয়মিত রসুন খাওয়া যায় তাহলে শরীর নিরোগ হয়, তেজস্বিতা বাড়ে, বল বৃদ্ধি হয় এবং সুস্থ শরীরে দীর্ঘ আয়ু লাভ হয় অর্থাৎ বহু বছর সক্ষমভাবে বেঁচে থাকা যায়।
৪। আগেই বলা হয়েছে রসুন একটি উত্তম রসায়ন। বৃদ্ধি, আয়ু, বীর্য ও পুরুষত্ব বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে শীতকালে ও বর্ষাকালে নিয়মিত রসুন খাওয়া উচিত।
৫। যাঁদের স্বরভঙ্গ হয় অর্থাৎ একটুতেই গলা ভেঙে যায় তাঁরা যষ্টিমধুর সঙ্গে, যাঁদের আঁচিল বা আব আছে তাঁরা তিল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে, যাঁরা কুষ্ঠ ব্যাধিতে ভুগছেন তাঁরা খয়ের গাছের ছালের সঙ্গে মিশিয়ে, যাঁরা কাশি ও হাঁপানিতে ভুগছেন তাঁরা ত্রিফলা চূর্ণের সঙ্গে, যাঁরা অর্শ রোগে ভুগছেন তাঁরা ঘি দুধের সঙ্গে মিশিয়ে রসুন খেলে উপকার পাবেন। যাঁরা দুর্বল এবং যাঁরা রসুন মিশিয়ে খাওয়া ভাল।
৬। উদরকৃমিতে যাঁরা ভুগছেন এবং যাঁরা খুব রোগা রসুন খাওয়া তাঁদের পক্ষেও ভাল।
৭। ভিটামিনের অভাবে যাঁদের শরীরে রোগ-প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে গেছে তাঁদের পক্ষে রসুন খাওয়া খুবই ভাল।
৮। মহিলারা ও রসুন খেয়ে উপকৃত হবেন।
৯। রসুনের মধ্যে যে এলাটল সালফাইড বা উড্ডয়নশীল দ্রব্যগুণ আছে তা ব্লাড পেসার বা রক্তচাপ বৃদ্ধি রোধ করে।
১০। মূত্র নিঃসারণ করে অর্থাৎ প্রস্রাব করায় এবং কফ নাশ করে।
১১। শরীরের বাত নাড়ির রসুনের প্রভাব প্রবল ও উত্তেজক।
১২। রসুন গায়ের ব্যথা, পিঠ আড়ষ্ট হয়ে যাওয়া, হিস্টিরিয়া, বায়ু পক্ষাঘাত, উরুর ফোড়া যার জন্যে উরু অবশ হয়ে যায় সারায়।
১৩। রসুন জলে সেদ্ধ করে সেই জল ঠাণ্ডা করে ছেঁকে খাওয়ালে বাত-নাড়িতে শক্তি বৃদ্ধি হয়, মাংসপেশি বলবান হয়। বাত রোগের পক্ষে রসুন খুব উপকারী।
১৪। রসুন পিষে নিয়েও বাত ব্যথাযুক্ত অঙ্গে তার প্রলেপ লাগানো হয়।
১৫। ব্রণ রোগের সঙ্গে সঙ্গেই যদি রসুনের প্রলেপ লাগানো হয় তাহলে ব্রণ আর বাড়বে না।
১৬। রসুন বমি, বদহজম,আমযুক্ত মল আর উদরকৃমি রোগের প্রশমন করে।
১৭। রসুনে এত গুণের সমাবেশ হওয়ার জন্যেই সংস্কৃতে রসুনকে মহৌষধ বলা হয়েছে।
১৮। রসুনের বিশেষ গুণগুলি হল-রসুন পুষ্টি জোগায়, বীর্যবর্ধক, স্নিগ্ধ, উষ্ণ, খাবার হজম করায় অর্থাৎ পাচক, শরীরের দূষিত মল নিষ্কাশন করায় অর্থাৎ মল নিষ্কারক, রসে তীক্ষ্ণ এবং মধুর।
১৯। ভাঙা হাড় জুড়াতে সাহায্য করে, গলার পক্ষে ভাল, ভারী, রক্ত বৃদ্ধি করে, পিত্ত বাড়ায়, বলকারক, শরীরের রং উজ্জল বা ফর্সা করে, বুদ্ধি বৃদ্ধি করে, চোখের পক্ষে ভাল।
২০। হার্টের অসুখ, একটানা জ্বর, কোষ্ঠকাঠিন্য, পক্ষাঘাত বা প্যারালিসিস, শূলব্যথা, অরুচি, কাশি, শরীর ফুলে যাওয়া অর্শ, কুষ্ঠ, খিদে না হওয়া অর্থাৎ অগ্নিমান্দ্য, কৃমি, বায়ু, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি ও কফ সারায়।
২১। রসুন, ধনেপাতা, আদা, সাদা আঙুর, চিনি ও সৈন্ধব লবণ্ একসঙ্গে পিষে নিয়ে চাটনি তৈরি করে খেলে অরুচি দূর হয় ও খাবার সহজে হজম হয়।
২২। রসুন ও তুলসীপাতার রস সমান মাত্রায় অল্প পরিমাণে নিন। এতে অল্প শুকনো আদা বা শুঁঠের গুঁড়ো ও গোলমরিচের গুঁড়ো মেশাবেন। এক কাপ দুধে দুধে এটা মিশিয়ে সকাল সন্ধে দুবেলা নিয়মিত পান করুন-সর্দিকাশি সেরে যাবে। এটি সর্দির মহৌষধ।
২৩। অল্প রসুনের রস, আদার রস ও অল্প সৈন্ধব নুন মিশিয়ে গরম জলে ঢেলে এক মাস ধরে নিয়মিত পাক করলে সর্দিকাশি, শ্বাসকষ্ট, ও হাঁপানির কষ্ট কমবে।
২৪। কয়েকটি রসুনের কোয়া দুধে ফুটিয়ে নিয়ে সেই দুধ ছেঁকে নিয়ে খাওয়ালে বাচ্চাদের হুপিং কাশি সেরে যায়।
২৫। রসুনের ২০ ফোঁটা রস শরবতে মিশিয়ে চার ঘন্টা অন্তর খাওয়ালে হুপিং কাশি সারে।
২৬। অল্প রসুন পিষে নিয়ে তাতে তিলের তেল বা টাটকা ঘি এবং সৈন্ধব নুন মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খাওয়ালে বাত ও কফের জন্যে যে জ্বর, সাধারণ ও প্রবল তাপের জ্বর সেরে যায় সব রকমের বাত-ব্যাধিও সারে।
২৭। রসুন, চিনি ও সৈন্ধব নুন সমান পরিমাণে পিষে নিয়ে তাতে দু গুণ পরিমাণ জমা ঘি মিশিয়ে চেটে চেটে খেলে অ-খিদে বা মন্দাগ্নি, অজীর্ণ বা বদহজম, গ্যাস, পেটের ব্যথা, কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সন্ধিবাত, প্রভৃতি রোগ সেরে যায়-যক্ষ্মা রোগীদের পক্ষে ও এটি উপকারী।
২৮। এক ভাগ রসুন, সৈন্ধব নুন ও ঘিয়ে সেঁকা হিং একের চারভাগ এবং আদার রস রসুনের দেড় গুণ পরিমাণে একসঙ্গে মিশিয়ে পান করলে পেটের রোগ বা উদররোগ সারে, পেটের জমা হওয়া চর্বি কমে যায় আর কোষ্ঠ সাফও ভাল ভাবে হয়ে যায়।
২৯। রসুন পিষে তাতে ঘি মিশিয়ে খেলে শূলব্যথাও সারে।
৩০। রসুনের কোয়া, সৈন্ধব নুন, ঘিয়ে ভাজা হিং একসঙ্গে মিহি করে পিষে নিয়ে তাতে একটু ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে রোজ খেলে পেট পরিষ্কার হয়ে যায় এবং আমাশার জন্যে যে শূল ব্যথা হয় তাও সারে।
৩১। রসুনের কোয়া গাওয়া ঘিয়ে ভেজে নিয়ম করে দুপুর ও রাত্রিরে ভাত রুটি খাওয়ার আগে খেলে বায়ুর কষ্ট দূর হয়।
৩২। রসুন তিল তেলের সঙ্গে বেটে নিয়ে খেলে বা রসুন মিশিয়ে কলাইয়ের ডালের বড়া তিলের তেলে ভেজে একটু মাখন মাখিয়ে খেলে মুখ বেঁকে যাওয়া ও মৃগী রোগ সারে।
৩৩। রসুন পিষে দুধে মিশিয়ে পান করলে রক্তচাপ অর্থাৎ ব্লাডপ্রেসার কমে। রসুন ব্লাডপ্রেসারের মহৌষধ।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply