মাশরাফি বিন মুর্তজা! যার নাম শুনলেই সমস্ত বাঙালীর মনে এক গভীর আলোড়ন সৃষ্টি হয়।যার অসাধারণ পারফর্মেন্স বাঙালী স্বপ্ন দেখতে আশ্বাস পায় বিশ্বকাপ জয়ের। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে মাশরাফি বিন মুর্তজার সাফল্য বলে শেষ করবার নয়। কিন্তু গতকাল ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে অগ্রণী ব্যাংকের বিপক্ষে মাশরাফি বিন মুর্তজা যা দেখিয়ে দিলেন তা সত্যি অকল্পনীয়। ঢাকা প্রিমিয়ারলীগে আবাহনীর হয়ে খেলছেন জাতীয় দলের মাশরাফি বিন মুর্তজা। অগ্রণী ব্যাংকের বিপক্ষে আজকের ম্যাচে প্রথমে আবাহনী ব্যাট করে সংগ্রহ করে ২৯০ রান ৬ উইকেট হারিয়ে।জবাবে অগ্রণী ব্যাংকও অসাধারণ খেলে,,তাদের শেষ ওভারে রান দারকার ছিল ১৩ রান।শেষ ওভারে আবাহনীর হয়ে বল করতে এসে মাশরাফি বিন মুর্তজা প্রথম বলে ১ রান দেন। তারপর টানা ৪ বলে তুলে নেন ৪ টি উইকেট! অর্থাৎ ‘ডাবল হ্যাটট্রিক’।
ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন ঘটনা প্রতিদিন ঘটে না।শেষ ওভারের দ্বিতীয় বল থেকে শুরু করে টানা ৪ উইকেটের প্রথমেই মাঠ ছাড়তে হয় ধীমান ঘোষকে বদলি ফিল্ডার জয়রাজ শেখ কে ক্যাচ দিয়ে।মাশরাফির ৪ টি উইকেট-ই সতীর্থদের ক্যাচের মাধ্যমে। তৃতীয় বলে নাজমুল হাসান শান্তর ক্যাচে বিদায় নেয় রাজ্জাক।পরের বলে সাইফ হাসানের তালুবন্দীতে মাশরাফির তিন নাম্বার উইকেটের শিকার হন শফিউল ইসলাম। ইতিমধ্যেই মাশরাফি পেয়ে যান হ্যাটট্রিক। শেষ ওভারে পঞ্চম বলে মাশরাফির বোলিং তোপে অগ্রণী ব্যাংক ২৭৯ রানেই গুটিয়ে যায়।মাশরাফির চতুর্থ উইকেটের স্বীকার হন ফজলে রাব্বী উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে।তখনও মাশরাফির হাতে এক বল বাকি,অগ্রণী ব্যাংকের আরো উইকেট থাকলে হয়তবা মাশরাফি পেতে পারতেন আরো একটি উইকেট!
মাশরাফির এই অনবদ্য খেলায় আবাহনী ১১ রানের জয় পেয়েছে। তাছাড়া এই ম্যাচে মাশরাফি বিন মুর্তজা সব মিলিয়ে ৬ টি উইকেট লাভ করেন ৪৪ রানের বিনিময়ে। মাশরাফি বাংলাদেশের ক্রিকেটে প্রথম বারের মত পরপর চার বলে চার উইকেট নিলেন,যার ফলে বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন এক কীর্তি যোগ হলো। তবে এর আগেও বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে আরও একটি উল্লেখ্য যোগ্য ঘটনা রয়েছে। তা হলো ৫ বছর আগের বিজয় দিবস উপলক্ষে এক টি-টুয়েন্টি ম্যাচে পেসার আল আমিন এক ওভারে ৫ টি উইকেট নিয়েছিলেন ইউসিবি-বিবিসির হয়ে আবাহনীর বিপক্ষে। সেই ম্যাচও ছিল আবাহনীর ইনিংসের শেষ ওভার, আজকেও ছিল ইনিংসের শেষ ওভার তবে তা আবাহনীর না অগ্রণী ব্যাংকের বিপক্ষে। ফতুল্লার আজকের ম্যাচে জয়ের আশঙ্কা ছিল অগ্রণী ব্যংকের কিন্তু মাশরাফি খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেন ইনিংসের শেষ ওভারেই।
গতকালের ম্যাচে অগ্রণী ব্যাংকের পক্ষে ওপেনার শাহরিয়ার নাফীস তার গত পর্বের ম্যাচের ৯৯ রানে আউট হওয়ার আক্ষেপ ঘোচান সেঞ্চুরি(১২১) করে।অগ্রণী ব্যাংকের জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৯১ রান।শাহরিয়ার নাফীসের এই সেঞ্চুরি অনেকটা সহজ করে দিয়েছিল সেই টার্গেট।জয়ের জন্য তাদের শেষ তিন ওভারে দরকার ছিল ৩৩ রানের। কিন্তু তখন-ই চাপের মুখে পড়ে অগ্রণী ব্যাংক, কারণ ৪৮ তম ওভারে মাশরাফি মাত্র ৮ রান দেন। ৪৯ তম ওভারে অগ্রণী ব্যাংক আরিফুল হাসানের ওভাবে ১২ রান তুলতে সক্ষম হয়।এতে করে জয়ের জন্য শেষ ওভারে তাদের দরকার মাত্র ১৩ রানের।কিন্তু মাশরাফির বিধ্বংসী বোলিংয়ে এক রান করেই আর এগোতে পারে নি অগ্রণী ব্যাংক।
মাশরাফির এই হ্যাটট্রিক ঘরোয়া ক্রিকেটে হলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গার সেই ‘ডাবল হ্যাটট্রিক’ এর একই সংস্করণে গড়া।’লিষ্ট এ’ তালিকা ভুক্ত আসর গুলোর মাঝে ঢাকা প্রিমিয়ারলীগও অন্তর্ভুক্ত। ‘লিষ্ট এ’ তালিকাভুক্ত আসর গুলোতে এর আগে একটানা ৪ বলে ৪ উইকেট নেওয়ার কীর্তি অর্জন করেছিল পাঁচ জন,মাশরাফি ৬ নাম্বার। আগের পাঁচজন প্লেয়ার হচ্ছে
১.অ্যালান ওয়ার্ড।
২.শন পোলক।
৩.ভ্যাসবার্ট ড্রেকস।
৪.ডেবিট পাইন।
৫.গ্রাহাম নেপিয়ার।
‘লিষ্ট এ’ এর ‘ফোর উইকেটস ইন ফোর বলস’ তালিকায় বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাও যুক্ত হলেন,এটা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। তবে মালিঙ্গার ‘ডাবল হ্যাটট্রিক’ ও ‘লিষ্ট এ’ তে গণ্য হবে।
আজকের ম্যাচ ছাড়াও এবারের প্রিমিয়ারলীগে মাশরাফি বিন মুর্তজা যেন তার নব তারুণ্যে ফিরে এসেছেন, এবারের প্রিমিয়ারলীগ আসর মাশরাফির ফিরে দেখার ‘নষ্টালজিক’ আসর। কেননা মাশরাফি এই প্রিমিয়ারলীগে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি এখন পর্যন্ত। তিনি মোট ৮ টি ম্যাচে ২৫ টি উইকেট লাভ করে মোহামেডানের অনিকের থেকে ৫ উইকেটে এগিয়ে আছেন।
৮ টি ম্যাচের মধ্যে দুইটি ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন তিনটি, এবং আরো দুইটি ম্যাচে নিয়েছেন চারটি,আরেকটি ম্যাচে ৫ টি,এবং আজকের ম্যাচে ৬ টি উইকেট লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন। বাকি দুইটি ম্যাচে কোন উইকেট না পেলেও প্রিমিয়ারলীগেরর সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন আমাদের প্রিয় মাশরাফি বিন মুর্তজা।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply