যশোর মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু পরীক্ষায় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ করা হয়েছে। কীট সংকট দেখিয়ে এই হাসপাতালে আসা রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হচ্ছে না। এর ফলে রোগীরা বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে পরীক্ষা করতে হচ্ছে।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) মণিরামপুর হাসপাতালে সেবা না পেয়ে ১১ জন রোগীকে বাইরের ক্লিনিক থেকে তাদের স্বজনরা পরীক্ষা করিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।এই দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কীট সংকটের কথা জানিয়ে ৫ জন রোগীকে ফেরত পাঠানোর বিষষটি স্বীকার করেছেন। আর সিভিল সার্জন বলেছেন, কীট সংকট দেখিয়ে রোগী ফেরত দেওয়ার সুযোগ নেই।
তাছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি না করিয়ে ফেরত দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে। দেরিতে হাসপাতালে আসলে সময় নেই বলে পরীক্ষা না করিয়ে ফেরত দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে রোগীদের। উপজেলার ভরতপুর গ্রামের সালমা নামে, ১ জন রোগীর স্বজন বাবুল আকতার জানান, বুধবার সকালে তিনি জ্বরে আক্রান্ত সালমা ও জান্নাতি নামে ২ শিশুকে মণিরামপুর হাসপাতালে আনেন।
চিকিৎসকদের ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে ল্যাব সহকারী আনিস জামানের কাছে পাঠান। তখন কীট নেই বলে ওই ২ রোগীকে ফেরত দেন আনিস। পরে আনিসের পরিচালিত হাসপাতালের বাইরে ‘দি প্যাথ’ নামে একটি ক্লিনিক থেকে (প্রায় ১২০০ টাকা) দিয়ে ওই দুই রোগীর পরীক্ষা করানো হয়।
ভরতপুর গ্রামের আব্দুল জলিল জানিয়েছে, হাসপাতালে সুযোগ না পেয়ে গত ৫ দিনে দুই বার তার স্ত্রী নার্গিস বেগমের ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো হয় দি প্যাথ থেকে। মঙ্গলবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে গেলে রোগীর অবস্থা ভাল এমনটি বলে বাড়ি ফেরত দেন চিকিৎসক। বুধবার সকালে নার্গিস বেগমের প্রচন্ড জ্বরের সাথে কয়েকবার বমি হয়। তখন তাকে হাসপাতালে আনলে ভর্তি করানো হয় ।
উপজেলা মণিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ল্যাব সহকারী আনিস জামান জানিয়েছে, আজ সাত জনের ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো হয়েছে। আর কীট না থাকায় ৫জনকে ফেরত পাঠানো হয়।
মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা (ডা. শুভ্রা রানী দেবনাথ) জানিয়েছে, অর্থ সংকট রয়েছে। তাছাড়া সবসময় কীটও পাওয়া যায় না। আজ ১০০ কীট কেনার জন্য আনিসকে বলা হয়েছে।
এই দিকে বুধবার সকালে আকস্মিক মণিরামপুর হাসপাতাল পরিদর্শনে আসেন যশোরের সিভিল সার্জন ডা. দিলীপ রায়। কীট সংকট দেখে তিনি হাসপাতাল প্রধানের ওপর বেশ চটেছে বলে জানা গেছে।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. দিলীপ রায় বলেছেন, ডেঙ্গু পরীক্ষার কীট কেনার খরচ সরকার বহন করে। ২ দিন আগে সব টিএইচওদের নিয়ে ডিজি স্যার ভিডিও কনফারেন্স করেছেন বলে জানিয়েছেন।
সেখানে অর্থ ছাড়ের কথা বলেছে তিনি। টাকা পাওয়ার আগে কীট সংকট হলে সব টিএইচও ব্যক্তিগত খরচে কীট সংগ্রহ করবেন বলে কথা দিয়েছে। মণিরামপুর হাসপাতালে কীট সংকটের বিষয়ে টিএইচও’কে ধরা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মাঝে কিছুটা কমলেও মণিরামপুরে আবারও বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। হাসপাতাল সূত্র হিসাবে ধরা গত দেড় মাসে ৬০০ রোগীর ডেঙ্গু পরীক্ষা হয়েছে মণিরামপুর হাসপাতালে।
তার মধ্যে ৮৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এখন হাসপাতালে ৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছে। এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ও বাড়িতে মণিরামপুরের ২ শিশুসহ ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/সাথী আক্তার
Leave a Reply