কাটতে গেলে কাঁদিয়ে ছাড়ে। তবু বাঙালির রান্নাঘরে পেঁয়াজ যেন অপরিহার্য। শুধু মাছ, মাংস নয়, নিরামিষ রান্নারও স্বাদ বেড়ে যায় যদি থাকে পেঁয়াজ। তবে শুধু স্বাদ বাড়াতে নয়, স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতেও ওস্তাদ পেঁয়াজ।
জেনে নিন পেঁয়াজের কিছু গুণ:
১। গরম কালে কাঁচা পেঁয়াজ ও কাঁচা আম কুচিয়ে কেটে স্যালাড তৈরি করে খেলে সূর্যের তাপে বা তীব্র রোদ্দুরে ও শরীর খারাপ হবে না।
২। পেঁয়াজ খেলে ‘লু’ অর্থাৎ গরম হাওয়া লাগে না এ কথা তো সকলেরই জানা। তাহলে দেখা যাচ্ছে সব ঋতুতেই পেঁয়াজ খেলে উপকার পাওযা যায়।
৩। পেঁয়াজ ব্রেন (মস্তিষ্ক) ও হার্টের পক্ষে উপকারী।
৪। কাশি, শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানির পক্ষে পেঁয়াজ খাওয়া ভাল।
৫। বৃদ্ধদের ও বয়স্কদের পেঁয়াজ নিয়মিত খাওয়া উচিত।
৬। শরীরে দুর্বলতার জন্যে যদি মাথা ঘোরে তাহলে পেঁয়াজ খেলে উপকার পাওয়া যাবে। পেঁয়াজ বায়ু সারায়।
৭। যাঁরা বাতব্যাধিতে কষ্ট পাচ্ছেন তাঁদের পক্ষে পেঁয়াজ তো মহৌষধ। প্রতিদিন নিয়ম করে পেঁয়াজ খেলে বায়ুজনিত সমন্ত কষ্ট কমে যাবে।
৮। আয়ুর্বেদে পেঁয়াজ কে অত্যুত্তম রসায়ন ও গরম ঔ্ষধি বলা হয়। রসায়ন অর্থে শরীরের সপ্ত ধাতুকে পুষ্ট করে। এই সপ্ত ধাতু হল : রস, রক্ত, মাংস, মেদ, অস্থি, মজ্জা ও বীর্য। এই মত অনুসারে পেঁয়াজ হল পুষ্টিকর আহার। পেঁয়াজ খেলে খিদে বাড়ে।
৯। প্রচলিত ধারণা অনুসারে পেঁয়াজ শরীরের পক্ষে খুব গরম বলে মনে করা হয়। এটা কিন্তু ঠিক নয়। পেঁয়াজ রান্না করে খেলে বা এর রস খেলে তা মধুর, তবে কফ বৃদ্ধি করে, পিত্ত বেশি বৃদ্ধি করে না, বীর্যবর্ধক এবং বায়ুজনিত শূল বা তীব্র ব্যথা দূর করে।
১০। সাদা পেঁয়াজ শরীরে বল বৃদ্ধি করে, কামোত্তেজনা ও ধাতু বাড়িযে দেয়। এটি স্নিগ্ধ, দীপন অর্থাৎ উত্তেজনা ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। টি বি (ক্ষয় রোগ), হার্টের অসুখ, বমি অরুচি, বাত, পিত্ত, বাতের জন্যে যে অর্শ, রক্তের দোষ, এমন কী কলেরাও সারিয়ে তোলে।
১১। বেশি ঘাম হলে বা শরীরের কোনো অংশ ফুলে গেলেও পেঁয়াজ খেলে উপকার পাওয়া যায়। অর্থাৎ অতিরিক্ত ঘাম হওয়া বন্ধ হয় এবং ফোলাও কমে।
১২। লাল পেঁয়াজের ও অনেকগুণ আছে। লাল পেঁয়াজ শীতল খিদে বাড়ায়, কামোত্তেজনা ও শরীরের বল বৃদ্ধি করে। বায়ু কফ, শরীর ফুলে যাওয়া, অর্শ ও কৃমি সারিয়ে দেয়।
১৩। চরক ও সুশ্রুত দুই প্রাচীন ভারতীয় বিখ্যাত বৈদ্যদের মতে পেঁয়াজ শক্তিদাতা, শরীর পুষ্ট করে, মেধা ও বুদ্ধি বর্ধিত করে।
১৪। বৈদ্য বাগভট্রের মতে পেঁয়াজের মধ্যে বাত ও কফের জন্যে যে সব অসুখ করে সেগুলি সারাবার এবং অর্শ সারাবার গুন আছে। তাঁর মতে পেঁয়াজ গরম করে সেঁক দিলেও উপকার পাওয়া যায় অর্শ রোগে।
১৫। পেঁয়াজ খেলে অন্ত্রের ক্রিয়াশক্তি বেড়ে যায় এবং পেট ভাল পরিষ্কার অর্থাৎ শৌচশুদ্ধি হয়। সেইজন্যে অর্শ রোগে, বদহজমে, কলেরা হলে আর পিলের রোগে আরোগ্যের জন্যে পেঁয়াজ খেতে দেওয়া যেতে পারে।
১৬। পেঁয়াজ গরম হলেও খাওয়ার পরে পেটের ভেতরে গিয়ে শরীর ঠাণ্ডা করে।
১৭। পেঁয়াজ বিষ নাশক সেইজন্যে পেঁয়াজ খেলে শরীরের ভেতরকার অনিষ্টকারী জীবাণু নষ্ট হয়ে যায়।
১৮। পেঁয়াজ খেলে শরীরের ভেতরকার সর্দি সারে আর পেঁয়াজ পেট গরম ও সারায়।
১৯। পেঁয়াজে মৃদু জোলাপের ও গুণ আছে। কো্ষ্ঠ সাফ হওয়ায় অন্ত্রের ভেতরের জমা মল বেরিয়ে গিয়ে অন্ত্র পরিষ্কার হয়ে যায়। দূষিত পিত্ত মলের সঙ্গে বেরিয়ে গিয়ে শরীরে নির্দোষ নতুন পিত্তের সৃষ্টি হয়।
২০। পেঁয়াজের রস শরীরে লাগালে লু লেগে যে তাপের সৃষ্টি হয় তা শান্ত হয়।
২১। গরম কালে হজম ঠিক মতো না হওয়ার জন্যে পেটের অসুখ, আমাশা, বদহজম ইত্যাদি ব্যাধি তো লেগেই থাকে। এসব ক্ষেত্রে পেঁয়াজের রস যদি দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায় তাহলে উপকার পাওয়া যাবে।
২২। পেঁয়াজ নিয়মিত খেলে দৃষ্টি শক্তি বাড়ে।
২৩। যাঁরা রোজ নিয়মিত পেঁয়াজ খান তাঁদের চেহারা সর্বদা চমৎকার সুন্দর ও তেজস্বী হয়।
২৪। ত্বকের রোগেও পেয়াজ উপকারী। ফোড়া ফুস্কুড়ি, ব্রণ গলগণ্ড মামস প্রভৃতিতে পেঁয়াজ ঘিয়ে ভেজে পুলটিস তৈরি করে বাঁধলে বা পেঁয়াজের রস লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
২৫। প্রতিদিন পেঁয়াজের মধ্যে আমচুর, বিটনুন, পাতিলেবুর রস, আদা ও গোলমরিচ ভরে টাটকা আচার তৈরি করে খেলে মুখে রুচি হয়, খিদে বাড়ে এবং ঘুম ভাল হয়, ক্লান্তি দূর হয়, খাবার হজম হয় ও কোষ্ঠ সাফ হয়।
২৬। প্রতিদিন অন্তত ২১ দিন নিয়ম করে যদি কয়েকটা সাদা পেঁয়াজ দিয়ে ভেজে খাওয়া যায় তাহলে যক্ষ্মারোগীর নষ্ট ফুসফুস ও আবার সবল হয়ে ওঠে। যদি কোন ও নিরোগ ব্যক্তিও এটি প্রতিদিন নিয়ম করে খান তাহলে তাঁর শরীরে বল পাবেন এবং ধাতু পুষ্টি হবে।
২৭। দু চা চামচ পেঁয়াজের রস আর দু চা চামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে রোজ সকালে নিয়মিত খেলে পুরুষত্ব বীর্য বৃদ্ধি হবে।
২৮। পেঁয়াজ রান্না করে খেলে জীর্ণ জ্বর সারে একটানা পুরোনো জ্বর।
২৯। পেঁয়াজ টুকরো করে কেটে সেদ্ধ করে সেই জল ও পেঁয়াজ খেলে কফের কষ্ট দূর হয়।
৩০। পেঁয়াজ মিহি করে পিষে টাটকা টক ও দই ও চিনি মিশিয়ে খেলে অম্বল অম্লরোগ সারে এবং অম্বলের জন্যে যে গলা জ্বালা করা তাও কমে যায়।
৩১। কাঁচা পেঁয়াজে টক দই মিশিয়ে স্যালাড তৈরি করে নিয়মিত রাত্তিরে ভাত বা রুটির সঙ্গে খেলে ঘুম ভাল হয়। এই স্যালাড গলা পরিষ্কার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জমা কফ, পেটে জমা সব বিষ ও টক্সিন বেরিয়ে যায় মলের সঙ্গে।
৩২। পেঁয়াজ খেলে গলা পরিষ্কার হয়, মুখমণ্ডল পরিষ্কার হয়, দাঁত দুধের মতো সাদা হয়, স্মরণ শক্তি বাড়ে এবং সেই সঙ্গে দুর্বল স্নায়ু সতেজ হয়।
৩৩। পেঁয়াজ গরম ছাইয়ের ওপর সেঁকে নিয়ে নিয়ম করে খেলে নাড়ি বলবান হয়, ভাল ভাবে শৌচশুদ্ধি অর্থাৎ কোষ্ঠ সাফ হয় এবং শক্তি বৃদ্ধি পায়।
৩৪। পেঁয়াজের রসের সঙ্গে করলার রস মিশিয়ে ছোট সাইজের কাপের আধা কাপ করে খেলে ভীষণ রকমের অজীর্ণ সেরে যায়।
৩৫। ২ চা চামচ পেঁয়াজের রসে ১ চা চামচ আদার রস এক চিমটি হিং সামান্য নুন ও অল্প জল মিশিয়ে খেলে বদহজমের কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে দু ঘন্টা পরে আবার এই রস খাওয়ানো যেতে পারে।
৩৬। পেঁয়াজের রসে শুকনো তাওয়ায় সেঁকা হিং ও নুন মিশিয়ে খাওয়ালে গ্যাসের কষ্ট সারে।
৩৭। সাদা পেঁয়াজে একটু আখের গুড় ও সামান্য হলুদ মিশিয়ে খেলে পিলের রোগ সেরে যায়।
৩৮। পেঁয়াজ আর গুড় নিয়মিত খাওয়ালে বাড়ন্ত বাচ্চারা তাড়াতাড়ি লম্বা হয়।
৩৯। যে সব শিশুদের ঘুম কম এবং রাত্তিরে ঘুম না আসার জন্যে মাকে ঘুমোতে দেয় না তাদের ঘুমের ওষুধ ও এই পেঁয়াজ। প্রথমে এক লিটার জল ভাল করে ফুটিয়ে নিয়ে আঁচ থেকে নামিয়ে নিন। দুটি মাঝারি সাইজের পেঁয়াজ কুরুনি দিয়ে কুরে নিয়ে সেই জলে ঢেলে পাঁচ দশ মিনিট ঢেকে রাখুন। জল ঠাণ্ডা হলে ছেঁকে নিন। খুব ছোট শিশু হলে এক চা চামচ এই জল নিয়ে পাঁচ ফোঁটা বিশুদ্ধ মধু মিশিয়ে বাচ্চাকে খাইয়ে দিন। বাচ্চা্র শিগগিরই গভীর ঘুম আসবে।
৪০। যে সব বাচ্চারা ভাত খেতে শিখেছে এবং কৃমি রোগে ভুগছে এক চা চামচ করে পেঁয়াজের রস নিয়ম করে খাওয়ালে তাদের কৃমি বিনষ্ট হবে এবং যদি বদহজমে ভোগে তাও সারবে।
৪১। সাদা পেঁয়াজ থেঁতো করে শুকিয়ে দিলে বাচ্চাদের হেঁচকি ওঠা বন্ধ হয়।
৪২। পেঁয়াজ মিহি করে পিষে নিয়ে দু-তিনবার জল দিয়ে ধুয়ে টক দই মিশিয়ে দিনে তিনবার করে খাওয়ালে আমাশা ও রক্ত আমাশার আম-রক্ত পড়া ও মলের বেগ বন্ধ হয়।
৪৩। চার চামচ করে পেঁয়াজের রস এক ঘন্টা অন্তর জল মিশিয়ে খাওয়ালে বদহজমের জন্যে যে পেটের অসুখ করে তাতেও বমিতে উপকার হয়।
৪৪। যখন চারিদিকে কলেরা বা আন্ত্রিক রোগ গুরু হয়ে যায় তখন রাত্তিরে খাওয়ার পর পেঁয়াজের রসে একটু হিং ঘষে নিয়ে তাতে অল্প পরিমাণে মৌরি আর ধনে মিশিয়ে খেলে রোগের হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যায়।
৪৫। যদি বার বার মলত্যাগের জন্যে দুর্বলতায় শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায় তাহলে দু চা চামচ পেঁয়াজের রসের সঙ্গে এক চা চামচ আদার রস ও এক চিমটি গোলমরিচ মিশিয়ে খাওয়ালে শরীরের স্বাভাবিক তাপ ফিরে আসে আর পেটের মোচড় করে।
৪৬। দুই বা চামচ পেঁয়াজের রসে অর্ধ চা চামচ চিনি ও সামান্য ঘি মিশিয়ে খেলে এবং রাত্তিরে শুতে যাওয়ার আগে পেট পরিষ্কার করবার জন্যে নিয়মিত ইসবগুল খেলে অর্শ রোগ সারে।
৪৭। এক চা চামচ সাদা পেঁয়াজের রস তার সঙ্গে মধু, আদার রস ও ঘি এক চামচ করে নিয়ে মিশিয়ে ২১ দিন ধরে রোজ সকালে খেলে পুরুষত্ব বৃদ্ধি পায়।
৪৮। টাটকা কুচোনো পেঁয়াজ খেলে মেয়েদের ঋতুস্রাব ঠিক মতো হয় আর কোন রকমের ব্যথা ও হয় না।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply