টমেটো খুবই উপকারী। শরীরের পুষ্টির জন্যে যা যা দরকার – লৌহ এবং অন্য ক্ষার টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে আছে। আপেল, কমলালেবু, মৌসম্বি, আঙুর প্রভৃতি দামি ফলের চেয়ে টমেটোতে রক্ত তৈরি করবার ক্ষমতা বেশি। টমেটোতে অক্সেলিক অ্যাসিড খানিকটা আছে এবং সাইট্রিক অ্যাসিড আছে। এতে লবণ, পোট্যাশ, লোহা, চুন আর ম্যাঙ্গানিস যথেষ্ট পরিমাণে আছে। টমেটোতে খনিজ ক্ষার লোহা ফসফেট মেলিক অ্যাসিড ও শরীর তাজা করবার এবং শোধন করবার টক পদার্থ আছে।
টমেটো লিভার, রক্ত মাংস এবং শরীরের নানা অঙ্গ প্রত্যঙ্গের অনেক উপকার করে। অন্ত্রকে সচল ও সবল রাখে। পাকা টমেটোতে ভিটামিন এ, বি আর সি পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে।
টমেটোর চাটনি, সস, জ্যাম ও জেলি সবই খুব জনপ্রিয়। টমেটোতে পেক্টিন ও সাইট্রিক অ্যাসিড থাকার দরুণ টমেটোর জ্যাম বা জেলি তৈরি করতে আলাদা করে পেক্টিন মেশাতে হয় না।
কথায় বলে রোজ একটা করে টমেটো খেলে ডাক্তারের আর প্রয়োজন হয় না। Tomato a day keeps the doctor away. টমেটো কিন্তু দেশী ফল বা সবজি নয় – বিদেশ থেকে প্রায় ১৫০ বছর আগে এর বীজ আনা হয়েছিল। সেইজন্যে আগে একে বলা হত বিলিতি বেগুন- কারণ এর বীজ বেগুনের বীজের মতো। টমেটো আদি জন্মস্থান দক্ষিণ আমেরিকা। টমেটো ফল না সবজি তা নিয়ে অনেক মতবিরোধ আছে কিন্তু যে তর্কে গিয়ে আমাদের কোনও প্রয়োজন নেই, আমাদের শুধু জানা দরকার টমেটোর গুণপনা। টমেটোতে যে প্রচুর ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ আছে একথা তো সকলেরই জানা।
সগর্ভা মেয়েদের এবং যাঁদের বাচ্চা হয়েছে তাঁদের শারীরিক ও মানসিক শক্তি বাড়িয়ে তোলার জন্যে প্রতিদিন টমেটো খাওয়া প্রয়োজন। নানা রকম মেয়েলি অসুখে টমেটোর উপকারিতা অশেষ। টমেটো আজকাল প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায় এবং অন্য ফলের তুলনায় দামও অপেক্ষাকৃত কম। টমেটোর উপকারিতা ও উপযোগিতার কথা এবারে এক এক করে বলে নেওয়া যাক।
টমেটোর উপকারীতাঃ
১। যাঁদের ওজন কম তাঁরা যদি খাওয়া – দাওয়ার সঙ্গে প্রতিদিন নিয়ম করে একটি পাকা টমেটো খান ওজন নিশ্চয়ই বাড়বে।
২। ফ্যাকাসে রক্তহীন চেহারার ব্যক্তিদের প্রতিদিন নিয়মিত একটি পাকা টমেটো খাওয়া উচিত – এতে রঙে জৌলুস আসবে ও রক্তকণিকা বাড়বে।
৩। টমেটোর রস শরীরের পুষ্টির পক্ষে জরুরি। এই রস রুচিকর ও পাচক খাবার হজম করায়। টমেটোতে কমলালেবুর সমান পোষকতত্ত্ব অর্থাৎ পুষ্টির ক্ষমতা আছে।
৪। টমেটোর রস খিদে বাড়িয়ে তোলে, মল নিঃসারণ করে ও রক্তশোধন করে। অখিদে, পেটের ব্যথা, মেদ বৃদ্ধি আর রক্তবিকার রক্তের দোষ রোগে হিতকর।
৫। অর্শ, জনডিস, পুরোনো জ্বর সারিয়ে দেয়। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
৬। টমেটো বায়ু নাশক-পেটের ভেতরের জমা বায়ু নিঃসারিত করে দিয়ে পেট হালকা করে। হৃদয়ে তৃপ্তি আনে। হজমের পক্ষে হালকা লঘু উষ্ণ ও স্নিগ্ধ শরীর স্নিগ্ধ করে। রক্ত ও পিত্ত বৃদ্ধি করে। যাঁদের বাত আছে বা যাঁদের কফের ধাত তাদের পক্ষে টোম্যাটো্ খুব উপকারী।
৭। টমেটো টুকরো করে কেটে তাতে শুকনো আদার গুঁড়ো ও নুন মিশিয়ে খেলে অখিদে ও অরুচি দূর হয়।
৮। কাঁচা টমেটো টুকরো করে কেটে অ্যালুমিনিয়াম বা স্টেনলেস স্টিলের পাত্রে কিছুক্ষণ মৃদু আঁচে বসিয়ে রেখে গোলমরিচ, নুন সামান্য খাওয়ার সোডা মিশিয়ে খেলে অজীর্ণ রোগ সারে।
৯। টমেটোর রসে বা স্যুপে চিনি মিশিয়ে খেলে পিত্তের অসুখ সারে।
১০। টমেটোর রস চিনি আর লবঙ্গচূর্ণ মিশিয়ে খেলে তৃষা রোগ-বার বার গলা শুকিয়ে যাওয়া ও বার বার পিপাসা পাওয়া সেরে যায়।
১১। যতটা টমেটোর রসের তার চার ভাগের এক ভাগ চিনি মিশিয়ে এবং সামান্য এলাচ, দালচিনি লবঙ্গ ও গোলমরিচের চূর্ণ মিশিয়ে পান করলে বমি, বুক ধড়ফড়ানি হঠাৎ ঘাবড়ে যাওয়া ইত্যাদি ভাব কমে।
১২। অর্জুন গাছের ছাল আর চিনি মিশিয়ে টমেটোর রসের অবলেহ জ্যামের মতো ঘন থকথকে তৈরি করে রাখলে ও নিয়মিত খেলে বুকের ব্যথা বা হার্টের ব্যথা এবং হার্টের অসুখে উপকার পাওয়া যায়।
১৩। পাকা টমেটোর অর্ধ কাপ রস দিনে তিন বার পান করলে কয়েকদিনের মধ্যেই রক্তপিত্ত (পিত্তের জন্যে নাক মখ থেকে রক্তপড়া) এবং দাঁতের মাড়ি ঢিলে হয়ে যাওয়ার জন্যে রক্তপড়া বন্ধ হয়।
১৪। পাকা টমেটোর রসে মধু মিশিয়ে খেলে রক্তপিত্ত এবং রক্তবিকার রক্তের দোষ সেরে যায়।
১৫। সকালবেলা ও সন্ধেবেলা পাকা টমেটোর রস খেলে এবং খাওয়া-দাওয়ায় নুন কম খেলে ত্বকের ওপর লাল চাকা চাকা দাগ হওয়া, ত্বকের শুষ্কতা, চুলকুনি, ত্বকের ওপর ছোট ছোট ফুসকুড়ি হওয়া প্রভৃতি রক্তবিকারের রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
১৬। টাটকা পাকা টমেটো দুপুরে ভাত খাওয়ার আগে খোসা ও বীজ আস্ত কামড়ে কামড়ে খেলে এবং রাত্তিরে শোওয়ার আগেও এই ভাবে খেলে পুরোনো কোষ্ঠকাঠিন্য ক্রমশ দূর হয়ে যাবে।
১৭। পাকা টমেটোর এক কাপ রস প্রতিদিন নিয়ম করে খেলে অন্ত্রের ভেতরে আটকে থাকা মল নিষ্কাশিত হয়ে যায় এবং এই ভাবে পুরোনো কোষ্ঠকাঠিন্য সারে।
১৮। হিং ফোড়ন দিয়ে টমেটোর রস পান করলে কৃমি রোগে উপকার পাওয়া যায়।
১৯। সকালে সন্ধেবেলা নিয়মিত টমেটোর রস খেলে রাতকানা রোগ কমে, দৃষ্টি স্বচ্ছ হয়, চোখের তেজ বৃদ্ধি করে।
২০। ছোট বাচ্চাদের টমেটোর রস যদি সহ্য হয় এবং চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে দিনে তিনবার করে অল্প পরিমাণে খাওয়ালে শিশু নিরোগ, বলবান ও হৃষ্টপুষ্ট হয়।
২১। টমেটোর দু-এক চামচ রস বাচ্চাদের দুধ খাওয়ানোর আগে খাইয়ে দিলে দুধ তোলা বন্ধ হয়।
২২। এক কাপ ভাল নারকেল তেল অর্ধকাপ টমেটোর রস একসঙ্গে মিশিয়ে শরীরে মালিশ করলে এবং তার একটু কুনকুনে গরম জলে স্নান করলে চুলকুনি সারে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply