পাকিস্তানে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ এক ধরনের মোবাইল এপ, যা উস্কানিমূলক বক্তব্য এর বিরুদ্ধে কাজ করবে।
এদিকে পাকিস্তান সরকারের এই উদ্যোগকে সতর্কতার সঙ্গে দেখছেন সাইবার বিশেষজ্ঞ নিঘাত দাদ।
নিঘাত-এর মতে, পাকিস্তানের মতো দেশে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা ছড়াতে বিদ্বেষকে হাতিয়ার করা হয়।
পাকিস্তানের সন্ত্রাস দমনকারী জাতীয় সংস্থা ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম অথরিটি’র (এনএসিটিএ) তৈরি মোবাইল অ্যাপ ‘চউকাস’ ক্রুটিমুক্ত নয় জানিয়ে ভয়েস অফ আমেরিকার প্রতিবেদককে দাদ বলেন, “অ্যাপটি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য কী তা জানে না। কোনটি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য তা আসলে বিশাল আলোচনা, একই সঙ্গে অস্পষ্ট এবং অনেকটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতও।”
“অ্যাপে নাগরিকের দেওয়া তথ্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে পাঠানো হবে। কিন্তু আসলে কোন ধরনের তথ্য পাঠানো হবে সে সম্পর্কে অ্যাপটিতে কিছু বলা নেই।”
“সে নো টু এক্সট্রিমিজম” বা “জঙ্গিবাদকে না বলুন” স্লোগানকে সামনে রেখে বানানো মোবাইল অ্যাপটির মাধ্যমে পরিচয় গোপন রেখে একজন ব্যক্তি তার চারপাশ ও ইন্টারনেটে থাকা বিদ্বেষমূলক বিষয়ে অভিযোগ জানাতে পারবেন। অভিযোগকালে ঘৃণা উদ্রেককারী যে কোনো ব্যানার, পুস্তিকা, জনসমাগম, বক্তব্য এবং সভার ওয়েব লিংক, অডিও ক্লিপ, ছবি এবং ভিডিও তথ্য হিসেবে যোগ করা যাবে।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহসান ইকবাল চলতি মার্চেই ইসলামাবাদে নেকটার প্রধান কার্যালয়ে অ্যাপটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। অ্যাপটিকে পাকিস্তানের জাতীয় কর্মপরিকল্পনার অংশ জানিয়ে নেকটা (এনআইসিটিএ) কর্তৃপক্ষ বলছে, পাকিস্তান সরকার জঙ্গিবাদ প্রচারে ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হতে দিতে চায় না।
ব্যবহারবান্ধব নতুন অ্যাপটি নাগরিকদের সতর্ক থাকতে এবং বিদ্বেষমূলক বিষয় চিহ্নিত করতে সহায়তা করবে জানিয়ে নেকটা’র পরিচালক এহসান ঘানি যুক্ত করেন, “আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে সবাইকে সচেতন করা, অনলাইনে এবং চারপাশে সতর্ক দৃষ্টি রাখা।”
পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদ পরিস্থিতি নিয়ে ভয়েস অফ আমেরিকা’র প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, দেশটিতে সাইবার অপরাধ আইন থাকার পরও জঙ্গিবাদী, সাম্প্রদায়িক এবং মৌলবাদী দলগুলোকে অবাধে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তৎপর পাওয়া যায়। এরা নিজেদের বিদ্বেষমূলক উদ্দেশ্য বিস্তারে যে কোনো জনসমাগমও বেছে নেয়।
ইংরেজি দৈনিক ডন-এর ২০১৭ সালের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের বরাতে ভয়েস অফ আমেরিকা আরও জানায়, পাকিস্তানে নিষিদ্ধ ঘোষিত ৬৪টি দলের মধ্যে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান, জামাত-উল-আহরার, সিপাহ-ই-সাহাবা এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতসহ ৪১টি দলকে অনলাইনে তাদের অপপ্রচারণা অবাধে চালিয়ে যেতে দেখা যায়। লাখ লাখ অনুসারী নিয়ে এদের শতাধিক সোশাল মিডিয়া পেইজে নিয়মিত অডিও এবং ভিডিও হালনাগাদ করা হয়। এসব পেইজের অধিকাংশ উর্দুভাষায় পরিচালিত হয়।
পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী দলগুলোর বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের বিস্তার ঠেকাতে মোবাইল অ্যাপটির কার্যকারিতা নিয়ে দেশটির ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম অথরিটি যখন আশাবাদী, তখন অ্যাপটির তথ্য গোপনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিঘাত দাদ।
পাকিস্তানের এই সাইবার বিশেষজ্ঞ বলেন, “অ্যাপটির কোনো রকম গোপনীয়তা বিধি ও তথ্য নিরাপত্তা নেই। ডেটাবেইস থেকে নিজের তথ্য মুছে দেওয়ার কোনো সুবিধা পান না ব্যবহারকারী। আরও ভয়াবহ হচ্ছে- যে কেউ আপনার তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে আপনারই ফোন নম্বর ব্যবহার করে।”
পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরাও নিঘাত দাদের উদ্বেগকে সমর্থন করছেন। তবে এ ধরনের অ্যাপের মাধ্যমে বিদ্বেষমূলক বিষয় শনাক্তে পাকিস্তানি নাগরিকদের সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হবে বলেও মত তাদের।
একটি অ্যাপ দিয়ে রাতারাতি পরিস্থিতির বদলও সম্ভব নয় জানিয়ে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিশ্লেষক রাসুল বখশ রইস বলেন, “অনেক সময় মানুষ না বুঝেই জঙ্গিবাদী আদর্শে প্রভাবিত হয়ে বিপথে যায়। চউকাস ও নেকটা’র এই উদ্যোগ নাগরিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে সচেতনতা গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।”
এই এপ পাকিস্তানে বিস্তৃত জঙ্গিবাদ দমনে কতটা ভূমিকা রাখবে, সেটি সময়ই বলে দেবে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply