নিহতের পরিবারের সদস্যদের দাবি, তানভীর তিন দিন আগে একটা কোম্পানিতে যোগদান করেন। সরকারি চাকরি না পাওয়ায় তার মধ্যে হতাশা ছিল। এ থেকেই আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।
তানভীর রহমানের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলায়। বাবার নাম ফসিউর রহমান। বাবা-মা গ্রামের বাড়িতে থাকেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এমবিএ ভবনের ৯ তলা থেকে এক ছাত্র নিচে লাফ দেন। শব্দ শুনে আশপাশের শিক্ষার্থীরা সেখানে দৌড়ে যায়। গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আত্মহত্যার পর তানভীরের ব্যাগ থেকে ঘুমের ঔষুধও পাওয়া গেছে। চাকরিতে যোগ দেয়ার পর তিনি রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় খালার বাসায় এসে উঠেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) মর্গের সামনে তানভীরের খালা পরিচয় দেয়া ওই নারী সাংবাদিকদের বলেন, ‘নতুন চাকরি পেয়ে চার দিন আগে তানভীর আমার বাসায় আসে। প্রত্যেক দিন ভোরে বের হয়ে রাতে বাসায় ফিরত। দু’দিন আগে সে আমাকে বলে- খালা, আমি বেসরকারি চাকরি চাইনি, আমি সরকারি চাকরির জীবন চেয়েছি। চাকরির বয়সও প্রায় শেষ। এখন কি করব?’
তিনি বলেন, ‘এ সময় আমি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করি- তোর রিজিক আল্লাহ যেখানে রেখেছেন, সেখানেই হবে। এ নিয়ে এত চিন্তা করিস না।’
ওই নারী জানান, শনিবার সকাল সাতটার দিকে অফিসের উদ্দেশে তানভীর বাসা থেকে বের হয়। রাতে তারা তানভীরের মৃত্যুর খবর পান।
হাসপাতালেই তানভীরের সেজ মামা আলী হায়দার পিন্টু বলেন, ‘সে আমার একমাত্র ভাগ্নে ছিল। প্রায়ই বলতো, মামা সবখানে এত ভাল পরীক্ষা দিচ্ছি। কিন্তু, কী কারণে যেন চাকরি পাচ্ছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি চাকরি না পেয়ে তানভীর হতাশ ছিল। আমরা তাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছি। বলেছি, তোর আব্বুর বাড়ি আছে, ঢাকাতেও বাড়ি আছে। এত চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু, কোনো বুঝেই আমাদের শেষরক্ষা হলো না।’
নিহতের স্বজনেরা জানান, তানভীররা তিন ভাই-বোন। বড় বোন বিবাহিত। ছোট বোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, ঘটনার সময় সান্ধ্যকালীন কোনো ক্লাস ছিল না। যেখান থেকে লাফ দিয়েছে, সেখানেও কোনো ক্লাসরুম নেই।
বাণিজ্য অনুষদের কর্মচারী রাসেল মিয়া বলেন, ‘রাত সাড়ে আটটার দিকে একটি বিকট শব্দ পাই। বাইরে বেরিয়ে দেখি ওই যুবক রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তাঁর সঙ্গে আইডি কার্ড ছিল। সেখান থেকে তাঁর পরিচয় জানা যায়।’
আত্মহত্যার পর নবমতলা থেকে তানভীর রহমানের একটি ব্যাগ পাওয়া যায়। সেখানে ১০টির এক পাতা ঘুমের ঔষুধ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৫টি ব্যবহৃত হয়েছে।
জানা গেছে, যে ঘুমের ওষুধ পাওয়া গেছে সেটি সাধারণত চিকিৎসকরা দুশ্চিন্তার কারণে কারও ঘুম না এলে দিয়ে থাকে।
তানভীরের ব্যাগে আরেকটি প্রেসক্রিপশন পাওয়া গেছে। যাতে লেখা, খাবারের পরে এক গ্লাস পানি ও একটি এসএমসি সেলাইন এবং ৫ ফোটা জাফরান প্রতিদিন দু’বার খেতে হবে; নিউট্যাক ৪০টি, প্রতিদিন দু’বার করে খালি পেটে খাবেন।
এছাড়া ব্যাগে তানভীরের আইডি কার্ড, বডি স্প্রে, দিয়াশলাই, চশমার বাক্স, মানিব্যাগ, কলম, টুপি ও খাতা পাওয়া যায়।
ব্যাগের সবগুলো পণ্য আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে হয়েছে বলে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান। এ ব্যাপরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে অপমৃত্যু মামলা হবে বলেও জানান তিনি।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply