ইশার বিরুদ্ধে কোটা আন্দোলনে যোগ দেয়া এক ছাত্রীকে মারধর করে তার রগ কেটে দেয়ার অভিযোগের প্রমাণ না পেয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনটি।
বহিষ্কার করার তিন দিনের মাথায় শুক্রবার সকালে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে কথা জানানো হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের নেত্রী ইশরাত সভাপতি এশার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে ছাত্রলীগ। ফলে তিনি সংগঠনটির এই হল শাখার সভাপতি হিসেবে পুনর্বহাল হয়েছেন।
অবশ্য এশার বিরুদ্ধে ছাত্রী নিপীড়নের আগে থেকে যে অভিযোগ ছিল, সেগুলোর বিষয়ে তদন্ত হয়নি। আর যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেটি গঠন করা হয়েছিল মূলত ১১ এপ্রিল রাতের ঘটনা নিয়ে।
গত ১০ এপ্রিল দিবাগত গভীর রাতে হলে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেয়া ছাত্রীদেরকে মারধর এবং এক ছাত্রীর রগ কেটে দেয়ার গুজব ছড়ায় এশার বিরুদ্ধে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ছাত্রী এশাকে তাৎক্ষণিক বহিষ্কার করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বহিষ্কার করা হয়।
পরে জানা যায়, রগ কাটার যে ঘটনা ছড়ানো হয়েছে সেটা নিতান্তই গুজব। মোর্শেদা খানম নামে এক ছাত্রীর পা কেটে যাওয়াতেই মূলত এই গুজব ছড়ানো হয়। তবে পরে জানা যায় মোর্শেদা কাঁচের জানলায় লাথি মারার পর তার পা কেটে যায় এবং এটাকেই পুঁজি করে গুজব ছড়ানো হয়েছে।
মোর্শেদা নিজেও ছাত্রলীগের একজন নেত্রী। তবে তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষেই ছিলেন। আর তিনি এই আন্দোলনে যোগ দেয়ায় এশা তাকে গালিগালাজ করেন বলে অভিযোগ আছে।
এই গুজব ছড়ানোর পর ছেলেদের বিভিন্ন হল থেকে কয়েক হাজার ছাত্র সুফিয়া কামাল হলে গিয়ে বিক্ষোভ করে। আর হলের ভেতরেও মেয়েরা তাকে ঘিরে ধরে লাঞ্ছনা করে।
পরে এশাকে আপত্তিকর সাজা দিয়ে হল থেকে বের করে দেয়া হয়। এ সময় তার জামা ধরেও টানাটানি করে কয়েকজন ছেলে। এই ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকেও ছড়িয়ে দেয়া হয়।
এই ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর তীব্র সমালোচনা তৈরি হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, এশার বিরুদ্ধে ছাত্রী নিপীড়নের অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে তার সাজা হবে। কিন্তু এভাবে আপত্তিকর সাজা কখনও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
এর মধ্যে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রী নির্যাতনের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার এক কমিটি করার কথা জানানো হয়।
চার সদস্যের এই কমিটিতে ছিলেন ছাত্রলীগের দুই সহ-সভাপতি নুসরাত জাহান নুপুর ও নিশীতা ইকবাল নন্দী, এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স।
আর এই কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর শুক্রবার সকালে ইশার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের কথা জানানো হয় ছাত্রলীগের বিজ্ঞপ্তিতে। এতে বলা হয়, ‘তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুসারে সম্পূর্ণ নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় তার (এশা) ওপর আরোপিত বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে স্বপদে বহাল করা হলো।’
তদন্ত কমিটির সদস্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নিশীতা ইকবাল নদী বলেন, ‘আমরা ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছি হলের প্রভোস্টের সঙ্গে কথা বলেছি, হাউজ টিউটর ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথা বলেছি, আরও সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেছি,মোর্শেদার সঙ্গে কথা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে নদী বলেন, ‘মোর্শেদার সঙ্গে আমরা বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি, কিন্তু তার ফোনটা আনরিচেবল ছিল। আমরা তার পরিবারের সঙ্গেও বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা আমাদেরকে কোনো সহযোগিতা করেনি।’
‘এমন তো না আমরা মোর্শেদাকে দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টা করেছি। সেও তো আমাদের সংগঠনের। সে যদি ভিকটিম হয়, তাহলে তার পক্ষে দাঁড়ানোও তো আমাদের দায়িত্ব।’
অন্য এক প্রশ্নে তদন্তকারী ছাত্রলীগ নেত্রী বলেন, ‘আমরা আমাদের মতো তদন্ত করেছি, এখন যারা দোষী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার দায়িত্ব হল কমিটির।’
এশাকে নির্যাতন করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়া এবং ওই রাতে ছাত্রীর রগ কেটে দেয়ার ঘটনাটি গুজব হিসেবে প্রমাণ হওয়ার পর পর বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানান। সেই সঙ্গে তারা গুজব ছড়ানো এবং নির্যাতনে জড়িতদের বিচার দাবি করেন তারা।
ছাত্রলীগের নেতারা এশার বাসায় গিয়ে তাকে সমবেদনা জানান আর বৃহস্পতিবার রাতেই তাকে ফুলের মালা দিয়ে হলে তোলা হয়।
ছাত্রীর রগ কেটে দেয়ার অভিযোগটি গুজব বলে প্রমাণ হলেও এশার বিরুদ্ধে নানা সময় হলে ছাত্রী নিপীড়নের অভিযোগ ছিল।১১ তারিখের ঘটনার পর ১২ তারিখ হল প্রভোস্ট সাবিনা রেজওয়ানা রহমান ছাত্রীদেরকে নিয়ে এক সাধারণ সভার আয়োজন করলে ছাত্রীরা এশার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করে।
একজন ছাত্রী বলেন, ‘ম্যাম আমরা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক হল চাই। সেখানে কেনো সিট বাণিজ্য থাকবে? কেন পলিটিক্যাল ফ্লোর এবং নন পলিটিক্যাল ফ্লোর থাকবে। আমরা এখানে সিটের আশায় উঠেছি, রাজনীতি করার জন্য উঠি নাই।’
অন্য একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘গত দুই বছর আমি আজিমপুর হোস্টেলে থেকেছি। এবছর আমি পলিটিক্যালি উঠেছি। পলিটিক্যাল সিচুয়েশনে (রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে) অনেক ইনসিকিউরড (অনিরাপদ) ফিল করছি।’
দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা যারা মফস্বল থেকে আসি, তাদের ঢাকায় কেউ থাকে না। পরিবার মনে করছে হল নিরাপদ। তাই আমরা শুধু নিরাপদে থাকার জন্য হলে থাকি। নতুন ঢাকায় আসার কারণে ছাত্রলীগের পলিটিক্স (রাজনীতি) সম্পর্কে না জেনেই হলে উঠতে হয়।’
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply