২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল সকালে রাজশাহী নগরের শালবাগান এলাকায় নিজের বাড়ি থেকে ৫০ গজ দূরে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয় রাবির শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে।
তার ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজ সৌরভ পরে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া থানায় এই হত্যা মামলা করেন ইংরেজির শিক্ষক রেজাউল ‘কোমলগান্ধার’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। ‘সুন্দরম’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। দক্ষ সেতার বাদক রেজাউল শালবাগানে একটি গানের স্কুল খোলার জন্যও কাজ করছিলেন।
“তথাকথিত খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য তারা মুক্তমনা হিসেবে পরিচিত রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে হত্যার পরিকল্পনা করে।”
মঙ্গলবার রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শিরীন কবিতা আখতার আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
মামলায় নিষিদ্ধ জঙ্গি দল জেএমবির দুই সদস্যের মৃত্যুদণ্ড এবং তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
আসামিদের মধ্যে বগুড়ার শিবগঞ্জের মাসকাওয়াত হাসান ওরফে আব্দুল্লাহ ওরফে সাকিব এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলামের ফাঁসির রায় দিয়েছেন বিচারক।
আর নীলফামারির মিয়াপাড়ার রহমত উল্লাহ, রাজশাহী মহানগরীর নারিকেলবাড়িয়া এলাকার আবদুস সাত্তার এবং তার ছেলে রিপন আলীকে দেওয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
সেইসঙ্গে তাদের প্রত্যেকের ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে রায়ে।আসামিদের মধ্যে হত্যার ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ শরিফুল ইসলাম পলাতক। বাকি চারজন রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন বলে জানান এ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু।
রায়ে সন্তোস প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বাবু বলেন, মাসকাওয়াত ও শরিফুল এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। বাকিরাও পরোক্ষভাবে জড়িত। এরা সবাই জেএমবির সঙ্গে যুক্ত।
আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। সেখানে আসামি হিসেবে জেএমবির আট জঙ্গির নাম উল্লেখ করা হয়।
আটজনের মধ্যে খায়রুল ইসলাম বাঁধন, নজরুল ইসলাম ওরফে হাসান ওরফে বাইক হাসান ও তারেক হাসান ওরফে নিলু ওরফে ওসমান অভিযোগপত্র দেওয়ার আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
এদের মধ্যে ওসমান শিক্ষক রেজাউল করিম হত্যায় সরাসরি অংশ নেন এবং নিজের হাতে কুপিয়ে হত্যা করেন বলে সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রহমত উল্লাহকে গ্রেপ্তারের পর তার ল্যাপটপে রেজাউল হত্যার কৌশল এবং জেএমবির কর্মকাণ্ডের তথ্য পাওয়া যায়। তাছাড়া মাসকাওয়াত ও রহমত আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেন।
মঙ্গলবার রায় ঘোষণার আগে বেলা ১২টা ২০ মিনিটে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয় তিন আসামি মাসকাওয়াত, রহমত ও রিপনকে। জামিনে থাকা আব্দুস সাত্তারও আদালতে হাজির হন।
এ রায়কে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই আদালত চত্বরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। রেজাউল করিমের ছেলে, মেয়ে ও ভাই ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আদালত চত্বরে জড়ো হন।
বেলা ১টায় বিচারক ৪২ পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু করেন। বেলা ২টার দিকে তিনি আসামিদের সাজা ঘোষণা করেন।রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সভাপতি এএফএম মাসউদ আখতার বলেন, “এখন আমাদের দাবি, অবিলম্বে যেন এই সাজা কার্যকর করা হয়।”
অধ্যাপক রেজাউল করিমের মেয়ে রিজওয়ানা হাসিন শতভি বলেন, “আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট। তবে আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করার পর তাদের শাস্তি যেন কমে না যায়।”
পলাতক খুনি শরিফুলকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে সবার শাস্তি কার্যকর করার দাবি জানান তিনি।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply