সর্বাপেক্ষা শিরক বড় জুলুমঃ
হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন আল্লাহ তা‘য়ালা যখন- অর্থাৎ যারা ঈমান গ্রহণ করে এবং ঈমানের সাথে জুলুমকে না মিলায়” এ আয়াতখানা নাযিল করলেন তখন সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বললেন! আমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে কমবেশী কিছু জুলুম করে না। তখন আল্লাহ তা‘য়ালা কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতটি নাযিল করেন। অর্থাৎ নিশ্চয়ই শিরক হল সর্বাপেক্ষা বড় জুলুম।
পূর্বের গুনাহ মাফঃ
হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রাহ (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, মাহে রমজানের রাতে যে ব্যক্তি ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আল্লাহর রেজামন্দির উদ্দেশ্যে নামাজ ও অন্যান্য নফল ইবাদত করে।তার অতীতের সকল ছগীরা গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।
রোজা মাধ্যমে জীবনের গুনাহ মাফ হয়ঃ
হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রমজানের রোজা রাখে তার পর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।
ধর্মের মধ্যে বাড়াবাড়ি করা নিষেধঃ
হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই দ্বীন বা ধর্ম অত্যন্ত সহজ ও সরল। যে ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি বা কাঠিন্য করবে, তবে সে অবশ্যই দ্বীনের কাছে পরাজিত হবে। অতএব ধর্মের মধ্যে বাড়াবাড়ি করো না বরং যতটুকু সম্ভব সর্বদা মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর, নিয়ম মেনে চল এবং সওয়াবের সুসংবাদ গ্রহণ কর। সকাল-সন্ধ্যা ও শেষ রাতের আমলের মাধ্যমে নিজের কর্মের সাহায্য কামনা কর।
ইবাদতের ফল সাতশত গুণঃ
হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন নবী করীম (সাঃ) বলেন, তোমাদের মধ্য হতে কোন ব্যক্তি যদি তার ইসলামকে সুন্দর ও শ্রেষ্ঠ বানিয়ে নেয় অর্থাৎ মুনাফেকী ও রিয়া অন্তর থেকে দূর করে দেয়, তখন সে যেসব নেক কাজ করে তার সওয়াব ১০ (দশ) থেকে ৭০০ (সাতশত) গুণ পর্যন্ত লেখা হয়, পক্ষান্তরে কোন গুনাহের কাজ করলে তা কেবল মাত্র যতটুকু করেছে তাই লেখা হয়।
নিয়মিত আমল আল্লাহর কাছে পছন্দনীয়ঃ
হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সাঃ) একবার আমার ঘরে আসলেন, ঐ সময় এক মহিলা আমার কাছে বসা ছিল। নবী করীম (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, এ মহিলাটি কে? আমি বললাম, ইনি অমুক মহিলা যার নাম ‘খোলা’। আমি মহিলাটির তাহাজ্জুদ নামাজের আলোচনা করলাম, সে সারা রাত ঘুমায় না। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, চুপ কর! শুনে নাও তোমাদের উপর এতটুকু আমল ওয়াজিব যতটুকু আমল করার শক্তি সামর্থ্য তোমাদের থাকে। আল্লাহর কসম! সওয়াব বা নেক দিতে আল্লাহ তা‘য়ালা ক্লান্ত হন না, কিন্তু তোমরা আমল করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাবে। আল্লাহ পাকের কাছে দ্বীনের ঐ আমল বেশী পছন্দনীয় যা সর্বদা করা হয়।
দোযখী ব্যক্তি ও বেহেশতে যাবেঃ
হাদীসঃ হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, জাহান্নাম থেকে ঐ সমস্ত লোকদেরকে বের করে আনা হবে, যে ব্যক্তি কালেমা তায়্যিবা “ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলেছে অর্থাৎ স্বীকার করেছে এবং যার অন্তরে একটা যবের দানা পরিমাণ নেকী বা ঈমান বিদ্যমান থাকবে। আর জাহান্নাম থেকে ঐ ব্যক্তিকে ও বের করে আনা হবে যে কালেমা “ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” পড়েছে এবং যার অন্তরে এক অণু পরিমাণ ঈমান বিদ্যমান থাকবে।
শ্রেষ্ঠতম দিনঃ
হাদীসঃ হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার এক ইহুদী বললেন, হে আমিরুল মু’মিনিন! আপনাদের কুরআনে এমন একটি আয়াত রয়েছে যা আপনারা সর্বদা তেলাওয়াত করেন। যদি আমাদের ইয়াহুদীদেরকে নিয়ে এমন ধরনের কোন আয়াত নাযিল হত, তা হলে আমরা ঐ দিনটিকে ঈদ হিসেবে গ্রহণ করতাম। তখন হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রা) তাকে জিজ্ঞেস করলেন সেটি কোন আয়াত। উত্তরে ইয়াহুদী বললেন, “ আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণতা দান করেছি এবং আমার নিয়ামত তোমাদের উপর পূর্ণ করেছি এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে আমি ধর্ম হিসেবে মনোনীত করেছি।”
একথা শুনে হযরত ওমর (রা) বললেন, ঐ আয়াতটি কোন সময় কোন স্থানে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর উপর অবর্তীণ হয়েছে তা আমি ভাল করে জানি। সে দিন রাসূলেপাক (সাঃ) আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত ছিলেন, আর সেদিন ছিল জুমার দিন।”
ইসলাম এর পরিচয়ঃ
হাদীসঃ হযরত তালহা ইবনে ওবায়দু্ল্লাহ (রা) বলেন, একবার নজদবাসী এক ব্যক্তি মাথায় চুল এলোমেলোভাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর দরবারে উপস্থিত হলেন। তার মুখের ভাষা শুনতে পাচ্ছিলাম কিন্তু কি বলছে তা বুঝতে পারছিলাম না। অতঃপর সে রাসূলেপাক (সাঃ) এর নিকটে এসে বসলেন এবং ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। উত্তরে রাসূলেপাক (সাঃ) বললেন-ইসলাম হলো প্রতি দিন ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। তারপর আগন্তুক ব্যক্তি বলল, এর চেয়ে অতিরিক্ত আমাদের উপর আর কোন নামাজ আছে কি? তার উত্তরে রাসূলেপাক (সাঃ) বললেন, না তবে যদি তুমি নফল নামাজ পড়তে চাও তবে তা পড়তে পারো। তারপর রাসূলেপাক (সাঃ) আরো বলেন, রমজানের রোজা ফরজ। আগন্তুক ব্যক্তি বললেন, এ ছাড়া অন্যান্য রোজাসমূহ ও কি আমার উপর ফরজ? রাসূলেপাক (সাঃ) বললেন, না কিন্তু তুমি নফল রোজা রাখতে চাইলে রাখতে পার। রাবী হযরত তালহা (রা) বলেন, অতঃপর হুজুর (সাঃ) তাকে যাকাত ফরজ হওয়া সম্পর্কে বললেন। তখন আগন্তুক ব্যক্তি বলল, এ ছাড়া কি কোন সদকা আমার উপর ফরজ? রাসূলেপাক (সাঃ) বললেন না। কিন্তু যদি তুমি অতিরিক্ত দান সদকা আদায় করতে চাও তবে করতে পার। হযরত তালহা (রা) বলেন, এরপর ঐ ব্যক্তি পিছনের দিকে চলে যেতে লাগল আর বলতে লাগলো আল্লাহর কসম! আমি যা শুনেছি এর চাইতে আর কোন কিছু বাড়াবোও না এবং কমাবোও না। তার কথা শুনে রাসূলেপাক (সাঃ) বললেন, লোকটি যদি সত্য সত্যই বলে থাকে, তা হলে সে অবশ্যই সফলকাম হবে।
জানাযার নামাজ –এর ফযিলতঃ
হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় কোন মুসলমানের জানায়ার পিছনে পিছনে চলে। তার পর জানাযার নামাজ আদায় ও দাফন করা পর্যন্ত তার সাথে থাকে তা হলে সে ব্যক্তি দু’ক্বীরাত সাওয়াব নিয়ে বাড়ী ফিরবে। প্রত্যক ক্বীরাত ওহুদ পাহাড় পরিমাণ হবে। আর যে ব্যক্তি জানাযার নামাজ আদায় করার পর চলে যাবে, সে এক ক্বীরাত সাওয়াব নিয়ে বাড়ি ফিরবে।
কুফর ও ফাসেক মুসলমানঃ
হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, মুসলমানকে গালিগালা দেয়া ফাসেকী আর পরস্পর হত্যার চেষ্টা করা কুফরী।
শবে কদরের নির্দিষ্ট তারিখঃ
হাদীসঃ হযরত উবাইদা ইবনে সামেত (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) শবে কদরের খবর দেয়ার জন্য বের হলেন। অতঃপর তিনি দেখতে পেলেন পরস্পর দু’জন মুসলমান ঝগড়ায় লিপ্ত রয়েছেন। তাদের এ অবস্থা দেখে রাসূলেপাক (সাঃ) বললেন, আমি তোমাদেরকে কদরের রাত্রি সম্পর্কে খবর দেয়ার জন্য বের হয়েছিলাম। আর আমি দেখতে পেলাম তোমাদের অমুক অমুক পরস্পর ঝগড়ায় লিপ্ত রয়েছে। তাদের অবস্থা দেখে কদরের রাত্রির সঠিক এলেম আমার অন্তর হতে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। হয়তো এটা তোমাদের জন্য মঙ্গল হতে পারে। তাই তোমরা শবে কদর রমজানের শেষ দশ তারিখের ২৭, ২৯, এবং ২৫শের মধ্যে তালাশ কর।
নবী পাক (সাঃ) এর সাথে জিব্রাঈল (আ) এর প্রশ্নোত্তরঃ
হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী করীম (সাঃ) সাহাবীদের উদ্দেশ্যে মসজিদে নববীতে হাজির হলেন। এমন সময় তার কাছে এক জন অপরিচিত লোক হাজির হয়ে প্রশ্ন করলেন, ঈমান কি? উত্তরে রাসূলেপাক (সাঃ) বললেন, ঈমান হলো আল্লাহ, তার ফেরেশতা, আখিরাতে তার সাথে সাক্ষাৎ ও তাঁর প্রেরিত রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনা, পুনরুথানের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। তারপর আগন্তুক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন, ইসলাম কি? উত্তরে রাসূলেপাক (সাঃ) বললেন, ইসলাম হলো আল্লাহর ইবাদত করা তার সঙ্গে কাউকে শরীক না করা, নামাজ কায়েম করা, নির্ধারিত যাকাত আদায় করা এবং মাহে রমজানের রোজা পালন করা। আগন্তুক ব্যক্তি আবার প্রশ্ন করলেন, ইহসান কি? উত্তরে রাসূলেপাক (সাঃ) বললেন, ইহসান হলো, তুমি এমন ভাবে ইবাদত করবে যেন তাঁকে দেখছ, যদি তুমি তাঁকে না দেখ, তা হলে মনে করবে, তিনি তোমাকে দেখছেন। আগন্তুক ব্যক্তি আবার প্রশ্ন করলেন, কিয়ামত কখন হবে রাসূলেপাক (সাঃ) বললেন, যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে তিনি প্রশ্ন কারীর চেয়ে অধিক জ্ঞাত নন।তবে আমি কিয়ামতের কিছু আলামত বর্ণনা করছি। তা হলো বান্দী যখন তার মালিককে জন্ম দিবে, যখন নিকৃষ্ট উটের রাখালগণ বড় বড় অট্রালিকা তৈরী করে গর্ববোধ করবে। পাঁচটি বিষয় এমন রয়েছে যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানে না। তার পর হুজুর (সাঃ) কুরআনের নিম্নের আয়াত তেলাওয়াত করলেন-
অর্থাৎঃ
১। নিশ্চয় মহান আল্লাহর কাছে রয়েছে কিয়ামতে এলেম।
২। বৃষ্টি কখন অবতীর্ণ হবে।
৩। মায়ের গর্ভের মধ্যে কোন প্রকার সন্তান রয়েছে।
৪। তুমি আগামীকাল কি করবে।
৫। কোন স্থানে তোমার মৃত্যু হবে। নিশ্চয় আল্লাহ পাক সবকিছু জানেন ও খবর রাখেন। তার পর আগন্তুক ব্যক্তি পিছনের দিকে চলে গেলেন। অতঃপর রাসূলেপাক (সাঃ) সাহাবাগণকে বললেন, তাঁকে ডেকে আন। সাহাবাগণ তাঁকে ডেকে আনার জন্য গেলেন কিন্তু সাক্ষাৎ পেলেন না। অবশেষে রাসূলেপাক (সাঃ) বললেন, ইনি হলেন জিব্রাঈল (আ)। তিনি এসেছিলেন মানুষদেরকে দ্বীন শিক্ষা দেয়ার জন্য।
দ্বীনের পরিচ্ছন্নতাঃ
হাদীসঃ হযরত নো’মান ইবনে বশীর (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, হালাল ও হারাম উভয়ই প্রকাশ্য। তবে এ দু’য়ের মধ্যে রয়েছে সন্দেহ জনক কিছু বস্তু যা অনেক লোকেই জানে না। সুতরাং যে ব্যক্তি এসব সন্দেহ যুক্ত বস্তু হতে বেঁচে থাকবে, সে যেন নিজের দ্বীন ও ইজ্জতকে রক্ষা করল। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ঐ সকল সন্দেহ জনক বস্তুতে জড়িয়ে পড়বে, তার উদাহরণ হলো ঐ সব রাখালের ন্যায় যে বাদশার সংরক্ষিত চরণভূমির আশে পাশে নিজের পশুগুলো চরায় হতে পারে হঠাৎ করে তার পশুগুলো বাদশার সংরক্ষিত চারণভূমি ঢুকে পড়তে পারে। খবরদার! প্রত্যেক বাদশাহেরই একটি সংরক্ষিত চারণভূমি থাকে। তাই হে সাহাবীগণ হুশিয়ার! সাবধান! আল্লাহর যমিনে আল্লাহর সংরক্ষিত বিচরণভূমি হল তার হারামকৃত বস্তুসমূহ। খবরদার! মানুষের শরীরে এমন একটি গোশতের টুকরো রয়েছে, যখন তা ভাল থাকবে তখন সম্পূর্ণ শরীরটা ভাল থাকবে আর যখন তা খারাপ হয়ে যায় তখন সম্পূর্ণ শরীরটাই খারাপ হয়ে যায়। মনে রাখবে তা মানুষের অন্তর বা কলব।
নিয়তের উপর কর্মফল নির্ধারিত হয়ঃ
হাদীসঃ হযরত ওমর (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন নবী করীম (সাঃ) বলেন, মানুষের কর্মের ফলাফল নিয়ত অনুসারে হয়ে থাকে। প্রত্যেক ব্যক্তি তার প্রাপ্য পাবে যা সে নিয়ত করে। সুতরাং যার হিজরত আল্লাহ ও তার রাসূলের সন্তুটি অর্জনের জন্য হয়ে থাকে, তার হিজরত আল্লাহ ও রাসূলের জন্যই হয়ে থাকে। আর যার হিজরত দুনিয়ার কোন বস্তু পাওয়ার উদ্দেশ্যে হয়, অবশ্যই তার সে বস্তু হাছিল হয়ে থাকে। অথবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে তার হিজরত ঐরূপই হয়ে থাকে।
সন্তানের জন্য খরচ করলে সদকার সওয়াব পাওয়া যায়ঃ
হাদীসঃ হযরত আবু মাসউদ আনসারী (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সাঃ) বলেন, যদি কোন ব্যক্তি নিজের সন্তান-সন্ততির জন্য কোন কিছু খরচ করে তখন ঐ খরচ তা সদকা হিসেবে গণ্য হবে।
সংসারে খরচ করলে সাওয়াব হয়ঃ
হাদীসঃ হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,-তুমি যা কিছু একমাত্র আল্লাহ পাকের সন্তুটির উদ্দেশ্যে খরচ করবে, তার জন্য অবশ্যই তোমাকে প্রতিদান দেয়া হবে, এমন কি তুমি নিজের স্ত্রীর মুখে যে খাদ্যদ্রব্য তুলে দাও তার ও সাওয়াব তুমি পাবে।
নবী করীম (সাঃ) এর হাতে বাইয়াত গ্রহণঃ
হাদীসঃ হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ আল বাজালী (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করলাম। নামাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য, যাকাত প্রদান করার জন্য এবং সকল মুসলমানের কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে।
তিন ভাবে ঈমানের স্বাদ পাওয়া যায়ঃ
হাদীসঃ হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, তিনটি জিনিস যে ব্যক্তির মধ্যে আছে সেই ঈমানের স্বাদ পেয়েছে।
১। যে ব্যক্তির নিকট আল্লাহ ও তার রাসূল (সাঃ) সবচেয়ে প্রিয়।
২। যে মানুষকে ভালবাসে একমাত্র আল্লাহর জন্য।
৩। যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করার পর কুফরীতে ফিরে যাওয়া না পছন্দ করে, যেভাবে সে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া না-পছন্দ করে।
সবচেয়ে বেশি ভয় করতেন যিনি আল্লাহকেঃ
হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবাদেরকে এমন আমল করার হুকুম করতেন, যা সর্বদা সহজে করা যায়। এমন আমল শিক্ষা দিতেন। সাহাবারা বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমরা আপনার মত নই। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’য়ালা আপনার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। অতঃপর নবী করীম (সাঃ) বেশি রাগান্বিত হয়ে উঠতেন। এমনকি তাঁর চেহারার উপর রাগের নিদর্শন প্রকাশ পেত। এরপর নবী করীম (সাঃ) বলতেন, নিশ্চয় আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় আমি করে থাকি এবং আল্লাহর তত্ত্ব জ্ঞান সকলের চেয়ে বেশি আমার কাছে আছে।
গ্রাম্য লোকের প্রশ্নঃ
হাদীসঃ হযরত আবু হোরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মজলিসে বসে সাহাবা কেরামদের সাথে কথাবার্তা বলছিলেন। এমন সময় হঠাৎ এক গ্রাম্য ব্যক্তি সেখানে আগমন করে রাসূলেপাক (সাঃ) কে প্রশ্ন করলেন। কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে? রাসূলেপাক (সাঃ) তার দিকে না ফিরে সাহাবাদের সাথে কথা বলেই যেতে লাগলেন। এতে কেউ কেউ বললেন, রাসূলেপাক (সাঃ) তার প্রশ্ন শুনেছেন, কিন্তু তার এরূপ প্রশ্ন তাঁর কাছে পছন্দনীয় হয়নি। আবার কেউ কেউ বললেন রাসূলেপাক (সাঃ) আদৌ তার কথা শুনেননি। যখন রাসূলেপাক (সাঃ) এক কথাবার্তা শেষ হলো তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্নকারী কোথায়? প্রশ্নকারী জবাবে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! আমি এখানে আছি। তখন রাসূলেপাক (সাঃ) বললেন, যখন আমানতের খেয়ানত করা হবে, তখন কেয়ামতের উপেক্ষা কর। লোকটি পুনরায় আবার জিজ্ঞেস করল আমানত খেয়ানতের স্বরূপ কি হবে? রাসূলেপাক (সাঃ) উত্তরে বললেন, যখন অযোগ্য লোকদেরকে রাষ্ট্রীয় কাজ কর্মে নিযুক্ত করা হবে। তখন কেয়ামতের অপেক্ষা কর।
অযু করার সময় অঙ্গ-প্রতঙ্গ ভাল ভাবে ধৌত করাঃ
হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক সফরে রাসূলেপাক (সাঃ) আমাদের থেকে পিছনে রয়ে গেলেন। অতঃপর তিনি সামনে এগিয়ে আমাদেরকে পেলেন। ঐ সময় নামাযের ওয়াক্ত নিকটে হওয়ার কারনে আমরা তাড়াতাড়ি অযু করছিলাম, আমরা আমাদের পা গুলো হালকাভাবে ধৌত করতে লাগলাম। রাসূলেপাক (সাঃ) আমাদের এ অবস্থা দেখে উচ্চৈঃস্বরে বলতে লাগলেন, যে সমস্ত পায়ের গোড়ালী হালকাভাবে ধৌত করা হচ্ছে, তাদের জন্য জাহান্নামের আগুনের শা্স্তি অবধারিত। এ কথাটি দুই বার বা তিন বার বললেন।
মুসলমান খেজুর গাছের মতঃ
হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সাঃ) বলেন, একপ্রকার গাছ আছে যার পাতা ঝরে না। ঐ গাছটি মুসলমানের ন্যায় অর্থাৎ মুসলমানের সাথে গাছটি তুলনা হতে পারে। তোমরা আমাকে বলতো দেখি ঐ গাছটি কোন গাছ? রাবী বলেন সাহাবাগণের ধারণা জঙ্গলে গাছের প্রতি ধাবিত হতে লাগল। আবদুল্লাহ (রা) বলেন, আমার মনে আসল তা খেজুর গাছ হবে, কিন্তু আমার বলতে লজ্জাবোধ হল। এমন সময় সাহাবাগণ আরজ করলেন। ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি বলে দিন তো, তা কোন গাছ? রাসূলেপাক (সাঃ) বললেন, তা খেজুর গাছ।
Leave a Reply