গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) অফিস সহকারী এটিএম খালেদুজ্জামানকে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৫ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় পুলিশ আটক করেছে।
টিআর ও কাবিখা প্রকল্পের সোলার প্যানেল স্থাপনের দায়িত্বপ্রাপ্ত এনজিওদের জামানতের টাকা সোনালী ব্যাংক থেকে চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্মসাত করা হয়।
ফুলছড়ি উপজেলা নিবার্হী অফিসার মুহাম্মদ আবদুল হালিম টলষ্টয় সাংবাদিকদের জানান, অফিস সহকারী এটিএম খালেদুজ্জামান বিভিন্ন সময় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও ইউএনও’র স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক থেকে ওই টাকা তুলে আত্মসাত করেন।গতকাল রোববার বিকালে হিসাব রেজিস্টারে চেক ও টাকার গড়মিল পাওয়া গেলে তদন্ত করলে ওই আত্মসাতের বিষয়টি ধরা পড়ে।
রোববার রাতেই তাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। গত ৮ অক্টোবর সোনালী ব্যাংক, ফুলছড়ি শাখায় ওই অফিস সহকারি এটিএম খালেদুজ্জামান ২ লাখ ৪০ হাজার টাকার করে ২টি চেকের মাধ্যমে মোট ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা তুলতে যান। চেক দুটিতে টাকার অংক কথায় লেখার ক্ষেত্রে গড়মিল থাকায় ব্যাংকের ম্যানেজার তোফাজ্জল হোসেন তা ফেরত দিয়ে ইউএনও’র প্রতি স্বাক্ষর নিয়ে আসার অনুরোধ করেন। খালেদুজ্জামান চেক দুটি যথারীতি ইউএনও’র প্রতি স্বাক্ষর নিয়ে পুনরায় ব্যাংকে জমা দিয়ে টাকা উত্তোলন করেন।
ইউএনও মুহাম্মদ আবদুল হালিম টলষ্টয় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানান, প্রতি স্বাক্ষর দেয়ার পর সন্দেহ হলে তিনি খালেদুজ্জামানের কাগজপত্র পরীক্ষা করে জালিয়াতির বিষয়টি নিশ্চিত হন। পরে তার নির্দেশে ওই টাকা ব্যাংকে জমা দেয়া হয়। এরপর পিআইও অফিসের হিসাবপত্র যাছাই বাছাই করে আরও ১২টি চেক জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক থেকে ৩৫ লাখ ৩৩ হাজার ১২০ টাকা ব্যাংক থেকে খালেদুজ্জামান উত্তোলন আত্মসাৎ করেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এরমধ্যে সোনালী ব্যাংক, ফুলছড়ি শাখার ৩৩০১৩৫৩৩ হিসাব নম্বর হতে ২৯/০৭/২০১৮ তারিখে ৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা, ০১/০৮/২০১৮ তারিখে ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ০৬/০৮/২০১৮ তারিখে ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা, ১৬/০৮/২০১৮ তারিখে ২ লাখ ৩৮ হাজার টাকা, ০৫/০৯/২০১৮ তারিখে ২ লাখ ১১ হাজার ১২০ টাকা, ১১/০৯/২০১৮ তারিখে ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, ২৪/০৯/২০১৮ তারিখে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৩৩০১৩৬৯৮ হিসাব নম্বর হতে ১৭/০৭/২০১৮ তারিখে ২ লাখ টাকা, ১৮/০৭/২০১৮ তারিখে ৮০ হাজার টাকা, ১৯/০৭/২০১৮ তারিখে ১৫ হাজার টাকা এবং ৩৩০০২৩৫৪ হিসাব নম্বর হতে ২৩/০৭/২০১৮ তারিখে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১৬/০৯/২০১৮ তারিখে ৯৫ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়।
টিআর ও কাবিখা প্রকল্পের সোলার প্যানেল স্থাপনের দায়িত্বপ্রাপ্ত এনজিওদের জামানতের টাকার খাত থেকে এসব টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। বিষয়টি জানার পর গাইবান্ধা থেকে জেলা প্রশাসকের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোছা. রোখছানা বেগম এবং জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা একেএম ইদ্রিস আলী সোমবার ঘটনাস্থল ফুলছড়িতে যান এবং কাগজপত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন।
এ ব্যাপারে সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার তোফাজ্জল হোসেন জানান, চেকের স্বাক্ষরে ইউএনও মুহাম্মদ আবদুল হালিম টলষ্টয় এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পিআইও মো. শহিদুজ্জামানের স্বাক্ষর হুবহু মিল পাওয়া গেছে। তবে ৮ অক্টোবরের চেক দুটিতে টাকার অংক কথায় লেখার ক্ষেত্রে তারতম্য পাওয়া যাওয়ায় তা ইউএনও’র প্রতি স্বাক্ষরের জন্য বলা হয়েছিল।
এব্যাপারে পিআইও মো. শহিদুজ্জামান বলেন, এসব ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। খালেদুজ্জামানের কাছে সমুদয় চেক ও কাগজপত্র থাকে। তিনি কিভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে এসব টাকা উত্তোলন করেছেন তা তিনিই বলতে পারেন।
এ ব্যাপারে ইউএনও মুহাম্মদ আবদুল হালিম টলষ্টয় আরো বলেন, পিআইও অফিসের ইস্যুকৃত চেকে তাকে নিয়মিত স্বাক্ষর দিতে হয়। তাই অফিস সহকারি ওই স্বাক্ষর দেখে তা জাল করে চেকের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আত্মসাতের ঘটনায় খালেদুজ্জামানের বিরুদ্ধে ফুলছড়ি থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক সেবাষ্টিন রেমা সাংবাদিকদের বলেন, অপরাধীকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা দেয়া হয়েছে। তদন্ত করে সংশ্লি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবেন।
Leave a Reply