মিয়ানমারে রোহিঙ্গাসহ সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন নির্যাতন চলছে যুগ যুগান্তর ধরে। নিপীড়ন প্রক্রিয়ায় মানবতা সেখানে বহু আগেই কবরস্থ হয়েছে। ফলে প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গারা প্রতিবেশী বাংলাদেশে আসতে পারলেই আর যেতে চায় না। অতীতের রেকর্ড তাই বলে। সর্বশেষ আবার প্রমাণিত হলো সীমান্তের ওপারে অবিশ্বাসের রাহুগ্রাস আর এপারে জীবন নিয়ে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা।
এবারও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেবার প্রক্রিয়া চলছে বাংলাদেশে। তবে ফিরে যেতে অনাগ্রহ দেখাল তারা। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুর নির্ধারিত দিন ছিলো। এ নিয়ে প্রবল বিক্ষোভ হয়েছে। রোহিঙ্গারা নাগরিকত্বসহ তাদের দাবি দাওয়া পূরণের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত ফিরতে চাইছে না। এর ফলে মানবিক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ যে বোঝা কাঁধে নিয়েছিল সেই বোঝা কাঁধেই রয়ে গেল। এই বোঝা থেকে বাংলাদেশ কখন ভারমুক্ত হবে তা অনিশ্চিত। তবে প্রত্যাবাসন শুরু করতে না পারার জন্য মিয়ানমার দায়ী করেছে বাংলাদেশকে।
প্রসঙ্গত, অতীতে কয়েকদফায় বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন কর্মসূচী কখনও পরিপূর্ণ সাফল্য পায়নি। উপরন্তু রোহিঙ্গা ঢলে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ অঞ্চল একেবারে জেরবার। গত বছরের ২৫ আগস্ট রাতের পর সীমান্ত গলিয়ে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার যে ঢল নেমেছে তা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। পুরান-নতুন মিলিয়ে এখন বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা বেসরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১২ লক্ষাধিক। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত হয়েছে ১১ লক্ষাধিক। এতেই প্রতীয়মান কত বড় বোঝা এখন বাংলাদেশের কাঁধে। সরকারকে এত বড় বোঝা বইতে হচ্ছে। প্রাকৃতিক, সামাজিকসহ সকল ক্ষেত্রে কক্সবাজার অঞ্চলে বিপর্যয় ঘটেছে। তার ওপর প্রত্যাবাসন শুরু করা না যাওয়ায় আরও বহুমুখী বিপর্যয় ধাপে ধাপে যে নেমে আসছে তা স্পষ্ট। এরমধ্যে অন্যতম ঘটনা হচ্ছে এসব রোহিঙ্গা পরিবারে প্রতিমাসে বিভিন্ন এনজিও সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী নতুন শিশুর জন্ম নিচ্ছে আড়াই সহ¯্রাধিক।
বহু পূর্ব থেকে আসা রোহিঙ্গারা এদেশের স্থানীয় বাসিন্দা হয়ে যাওয়ার রেকর্ড গড়েছে। বর্তমানে যে ১২ লক্ষাধিক রয়েছে এরাও মূলত এদেশে থেকে যাবার অভিপ্রায় নিয়ে তৎপর। রোহিঙ্গারা মূলত মিয়ানমারের নাগরিক। কিন্তু তাদের নাগরিকত্ব মিয়ানমার সরকার কেড়ে নিয়েছে। সেটা তাদের ব্যাপার। বাংলাদেশ শুধু মানবিক কারণে তাদের প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় দিয়ে বাড়তি বোঝা নিজেদের ঘাড়ে তুলে নিয়েছে। মানবিক দিক দিয়ে সারা পৃথিবী সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে। কিন্তু এখন প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রভাবশালী বহু দেশ এই বোঝা বহনের অনুরোধ জানাচ্ছে বাংলাদেশকে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশের পক্ষে কি করে সম্ভব এত বড় বাড়তি বোঝা বহন করা। অথচ, বাস্তবতা হচ্ছে সম্পূর্ণ অনিশ্চয়তা নিয়েই এ বোঝা বহন করে যেতে হচ্ছে উন্নয়নের রোল মডেলের দেশটিকে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ সাহাজুল ইসলাম
Leave a Reply