দেশের অনলাইন জগতে বিচরণ করছে অসংখ্য নিউজ পোর্টাল। এ সকল নিউজ পোর্টালে প্রায়ই দেখানো হচ্ছে অসত্য এবং চাঞ্চল্যকর ভুয়া সংবাদ। এর প্রভাব পড়ছে সামাজিক জীবনেও।
নায়করাজ রাজ্জাকের মৃত্যুর আগেই ছড়িয়ে পড়ে যে তিনি নেই। রাজ্জাক তখন অসুস্থ। তাই খবরটা প্রসব করে মাটিতেও পড়তে পারেনি। ঝোড়োবেগে সামাজিক যোগাযোগ দুনিয়ায় মাতম তোলে। ভক্তরা মুষড়ে পড়েন। পরে দেখা গেল সবই ভুয়া।
এই তো, কিছুদিন আগে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা প্রবেশের ছবিকে উল্টিয়ে দেখিয়ে মিয়ানমার সরকার খবর ছড়িয়েছিল বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা দলে দলে মিয়ানমারে ফিরছে। এক দেশের গণহত্যার ছবি অন্য দেশের বিক্ষোভ আন্দোলনে চালিয়ে দেওয়ার ঘটনা তো হরহামেশাই চলছে। বাংলাদেশেই এমন হয়েছে কয়েকবার। নির্বাচনের আগে আগে ভুয়া খবরের পরিমাণও বেড়ে যায়। গত সপ্তাহে তাইওয়ানে স্থানীয় নির্বাচনে পরাজয়ের জন্য ক্ষমতাসীনেরা ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়া ভুয়া খবরকে দায়ী করেছেন। ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এমন ভুয়া খবর নিয়ে তো রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। কারণ, ভুয়া খবরের খড়্গ তাঁর ওপরেই বেশি পড়েছে। ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ নিজেও ওই সময় ফেসবুকে ভুয়া খবর ভাইরাল হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
ভুয়া খবরের আরেক রূপের জবরদস্ত নাম হলো স্যাটায়ার। অনিয়ন নামের একটি সাইট স্যাটায়ারের জন্য খ্যাতনামা। অনেকে না বুঝে সেই সাইটের খবর বিশ্বাস করে ফেলেন। ওই সাইটের দুটো ভুয়া খবর বাংলাদেশের প্রথম সারির গণমাধ্যমে ‘ভুলে’ প্রকাশও হয়েছিল। ভোট প্রতারণা, অভিবাসন ও ইসলাম—এ বিষয়গুলো হলো ভুয়া খবরের দুনিয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়বস্তু।
ভুয়া খবর কেন ছয়ানো হয়?
মনোবিজ্ঞানীদের ভাষায়, যে বিষয়ে মানুষের অসন্তোষ রয়েছে, সেসব বিষয়ে নেতিবাচক খবর পেতে পছন্দ করার প্রবণতা রয়েছে মানুষের মধ্যে। যেমন সরকারের বিরুদ্ধে বা কোনো রাজনৈতিক দল বা তারকার বিরুদ্ধে কোনো ভুয়া খবর প্রকাশিত হলে তা যাচাই করার পেছনে শ্রম নষ্ট না করে তাতে বিশ্বাস রাখতে চায় মানুষ।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেখলা সরকার প্রথম আলোকে বলেন, বাস্তব জীবনে ধাক্কা লাগার মতো ঘটনা খুব একটা ঘটে না। রোজকার গতানুগতিক জীবনযাপনের বাইরে তাই কাল্পনিক খবরগুলো একধরনের উত্তেজনা তৈরি করে। কৌতূহলী মন উত্তেজনা পছন্দ করে। একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পেতে ভুয়া খবরের চমকটা সহজে পছন্দ করে ফেলে মানুষ।
সামনে এগিয়ে আসছে জাতীয় নির্বাচন। এসময় বিভিন্ন সুবিধাবাদী মহল ভুয়া খবর ছড়িয়ে অস্থিতিশীলতা তৈরি করার চেষ্টা করতে পারে। আমাদের এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ সাহাজুল ইসলাম
Leave a Reply