জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া রাজীবের প্রাণ গেলো কিছু দিন আগে। দুই বাসের প্রতিযোগিতায় বলি হয়েছিল সে।
এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ঘটলো একই রকম দুর্ঘটনা। এবারও দুই বাসের রেষারেষিতে পড়ে প্রাণ হারালো এক যুবক। তার নাম নাজিম উদ্দিন। ৩২ বছরের তরতাজা প্রাণ।
যাত্রাবাড়ী থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। গন্তব্য গুলিস্তান। মেয়র হানিফ উড়ালসড়কে উঠতেই তিনি পড়ে গেলেন দুই বাসের প্রতিযোগিতার মুখে। মঞ্জিল ও শ্রাবণ সুপার পরিবহনের দুটি বাস মরিয়া—কে কার আগে যাবে। শ্রাবণ সুপার পরিবহনের বাসটি নাজিমের মোটরসাইকেলটিকে দিল পেছন থেকে ধাক্কা। ছিটকে সেতুর সড়কে পড়ে গেলেন তিনি। নিমেষে বাসটি চলে গেল তাঁর বুকের ওপর দিয়ে।
মেয়র হানিফ উড়ালসড়কে আজ এভাবেই জীবনাবসান ঘটে নাজিম উদ্দিনের। নগরের বাসে বাসে বিভীষিকাময় প্রতিযোগিতার বলি তিনি।
নাজিম ঢাকা ট্রিবিউনের বিজ্ঞাপন বিভাগের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী ছিলেন। ঢাকা ট্রিবিউনের সাংবাদিক রাব্বী রহমান জানান, যাত্রাবাড়ীর শ্যামপুর এলাকায় নাজিমের বাসা। তিনি তিন দিন আগেই সন্তানের বাবা হয়েছেন। তাঁর স্ত্রী এখনো অসুস্থ।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রাসেল মাহমুদ ও নাইম ইসলাম নামের দুই যুবক। তাঁরাও মোটরসাইকেলে করে গুলিস্তানের দিকে আসছিলেন। তাঁদের ভাষ্য, আহত নাজিমকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান রাসেল। সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী রাসেল বলেন, তাঁদের মোটরসাইকেলটি প্রতিযোগী বাস দুটির পেছনে ছিল। আর নাজিমের মোটরসাইকেলটি ছিল বাস দুটির সামনে। দুটি বাসই বেপরোয়াভাবে চলছিল। এর মধ্যে শ্রাবণ সুপার পরিবহনের বাসটি নাজিমের মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। নাজিম ছিটকে পড়লে তাঁর বুকের ওপর দিয়েই বাসটি চলে যায়। ঘটনার পর তিনি মোটরসাইকেল থেকে নেমে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে নাজিমকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যান। পথে তাঁর প্রাণ ছিল। কিন্তু ঢাকা মেডিকেলে আনার পর তিনি মারা যান।
প্রত্যক্ষদর্শী নাইম জানান, নাজিমকে শ্রাবণ সুপার পরিবহনের বাসটি চাপা দেওয়ার পর তিনি (নাইম) মোটরসাইকেল চালিয়ে গুলিস্তানের সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সে যান। সেখানে দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সোলায়মানকে ঘটনা জানান। এরপরই শ্রাবণ সুপার পরিবহনের চালক ওহিদুলকে আটক করেন এসআই সোলায়মান। পরে অপর বাস মঞ্জিল পরিবহনের চালকের সহকারী কামালকে আটক করা হয়।
পুলিশ জানায়, আটক ওহিদুল ও কামালকে যাত্রাবাড়ী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া বাস দুটিও আটক করা হয়েছে।
এটি প্রথম নয়। নির্মম সত্য হলেও আমরা জানি, এটি শেষও নয়। এর পরও বাস চালকেরা বেপরোয়া গাড়ি চালাবেন, প্রতিযোগিতা করবেন আগে যাবার। এমনি করেই হয়তো বলি হবে আরো এক নিষ্পাপ প্রাণ।
তবে একটি প্রশ্ন মনে এসেই যায়, ঠিক আর কত প্রাণের বলি শেষে চালকেরা আরেকটু সচেতন হবেন? আগে গন্তব্যে যাওয়ার এই অসুস্থ প্রতিযোগীতা বন্ধ করবেন?
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply