অভ্যন্তরীণ ইন্টারনেট গড়ে তোলার প্রস্তাবে চূড়ান্ত সম্মতি দিয়েছে রাশিয়ার পার্লামেন্ট ডুমা৷ সাইবার হুমকি মোকাবেলায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রুশ আইনপ্রণেতারা৷ তবে বিরোধীরা বলছেন, এই আইনের ফলে রাষ্ট্রীয় সেন্সরশিপের ব্যবস্থা পাকা করা হচ্ছে৷
সম্পূর্ণ দেশীয় এই ইন্টারনেটের নাম হবে রাশিয়ান ইন্টারনেট বা রুনেট৷ এর ফলে বাইরের কোনো আক্রমণ শনাক্ত করা গেলে নিজেদের বহির্জগত থেকে সহজেই বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারবে রাশিয়া৷
রুনেটের প্রস্তাবটি ডুমায় পাস হয়েছে বিপুল ভোটে৷ পক্ষে ৩০৭ ভোটের বিপরীতে বিপক্ষে মত দিয়েছেন মাত্র ৬৮ জন৷ শিগগিরই পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ- ফেডারেশন কাউন্সিলেও নির্বিঘ্নে পাস হওয়ার সম্ভাবনা প্রস্তাবটির৷
এরপর প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন সই করলে এটি আইনে পরিণত হবে৷ এ বছরের পয়লা নভেম্বর থেকেই রুনেটের কাজ শুরু করতে চায় রাশিয়া৷
বরাবরই এই প্রস্তাব ডুমার সদস্যদের অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়ে আসছে৷ এর প্রণেতাদের দাবি, রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে৷ এই প্রকল্পের ফলে রাশিয়ার বাইরের সার্ভার থেকে বিচ্ছিন্ন হলেও অভ্যন্তরীণ ইন্টারনেট সচল থাকবে৷ ফলে অন্য কোনো দেশ রাশিয়াকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললেও তাতে রাশিয়ার কোনো ক্ষতি হবে না৷
আইনের খসড়া প্রস্তুতকারীদের একজন আন্দ্রেই ক্লিশাস ডুমার ভোটের আগে বলেন, ‘আমরা যদি দেখি অন্য কারো আমাদের ওপর আক্রমণ করার সামর্থ্য আছে, তাহলে আমাদেরও তা প্রতিহত করার ক্ষমতা থাকা উচিত৷’
এমন হামলা কোন দিক থেকে আসতে পারে, সে বিষয়ে কোনো লুকোচুরিরও প্রয়োজন মনে করছেন না ফেডারেশন কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য ক্লিশাস৷ তিনি বলছেন, ‘আমাদের কোনো সন্দেহ নেই যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজন মনে করলেই ইন্টারনেট বন্ধ করে দিতে পারে৷’
বিলের মধ্যেই উল্লেখ করা হয়েছে, সাইবার নিরাপত্তার ওপর মার্কিন আগ্রাসী চরিত্রের প্রভাব ঠেকাতেই’ এর প্রয়োজন৷ ২০১৮ সালের একটি মার্কিন প্রতিবেদনে রাশিয়াকে দেশটির কৌশলগত প্রতিপক্ষ হিসেবে উল্লেখ করার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে সেখানে৷
রাশিয়ার তথ্য থাকবে রাশিয়াতেই
আইনটিকে কীভাবে বাস্তবে রূপ দেয়া হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়৷ কিন্তু এর মাধ্যমে অনলাইন ট্রাফিকের রুট নিয়ন্ত্রণ ও তথ্য বিনিময় ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব হবে৷
রাশিয়ার জাতীয় টেলিকম পর্যবেক্ষণ সংস্থা রোসকমনাৎসোর এই প্রকল্পের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করবে৷ যেকোনো হামলার ঘটনা ঘটলে এই সংস্থা পুরো ইন্টারনেটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে৷ নতুন আইনের ফলে সব ইন্টারনেট প্রোভাইডারকে রোসকমনাৎসোরের কাছে নিয়মিত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে৷
আইনটির মূল লক্ষ্য, রাশিয়ার ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের তথ্য যতটা সম্ভব রাশিয়ার মধ্যেই রাখা৷ আপাতদৃষ্টে এর লক্ষ্য রাশিয়াকে বাইরের হুমকি থেকে রক্ষা করা বলে মনে হলেও, অধিকারকর্মীরা বলছেন, এর ফলে ক্রেমলিনের সমালোচকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সরকারের পক্ষে সহজ হবে৷
রাশিয়ায় ইন্টারনেটে সরকারের নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর বিষটি দীর্ঘস্থায়ী রাষ্ট্রীয় নীতির অংশ হয়েই আছে৷ ২০১৭ সালে কর্মকর্তারা বলেছিলেন, ২০২০ সালের মধ্যে তারা ইন্টারনেট ট্রাফিকের ৯৫ শতাংশ স্থানীয়করণ করতে চান৷
২০১৬ সালের এক আইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে ব্যবহারকারীদের তথ্য রাশিয়ার অভ্যন্তরে স্থাপন করা সার্ভারে রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়৷ তখন সে আইনকে জঙ্গিবাদ মোকাবেলার ব্যবস্থা হিসেবে দেখানো হয়েছিল৷ তবে এর মাধ্যমে সরকারবিরোধী অনলাইন প্লাটফর্মগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে বলে তীব্র সমালোচনাও হয়েছিল৷ –ডয়েচে ভেলে
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ জয় রহমান
Leave a Reply