সমাজে সংবাদ মাধ্যমের দায়িত্ব অনেক। কেবল সংবাদ প্রচার করাই নয়, দেশের বিভিন্ন অসংগতি, এবং সমস্যা সমাধানের পথও অনেক সময় খুলে দিতে পারে মাধ্যমগুলো।
এবার এমনি এক নজির করলো প্রথম আলো। ৭ নভেম্বর প্রথম আলোর রাজধানী পাতায় ‘শিকলে বন্দী শাকিলের জীবন’ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিলো। এরপর ১৭ নভেম্বর প্রথম আলো ওয়েবসাইট, ফেসবুক, ইউটিউব ও ইনস্টাগ্রামে একই শিরোনামে একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়। এই ভিডিও প্রকাশের পর দেশ- বিদেশের অগণিত শুভাকাঙ্ক্ষী শাকিলের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। যাঁদের সুযোগ আছে তাঁরা সরাসরি শাকিলের মায়ের হাতে সহায়তার টাকা দিয়ে আসছেন, পরে আরও সহায়তা করার আশ্বাস দিচ্ছেন। সব মিলে শাকিলের মায়ের কণ্ঠে এখন আর হাহাকার নেই, অনেকটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন তিনি।
১৯ বছর বয়সী মানসিক প্রতিবন্ধী শাকিল। তাঁকে এখন আর সারা দিন ফুটপাতে শিকলে বন্দী হয়ে থাকতে হয় না। শাকিলের মা হনুফা বেগম মানুষের বাড়ির কাজে ইতি টেনে শুরু করেছেন কাপড়ের ব্যবসা। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা শাকিলের পুনর্বাসনে যোগাযোগ শুরু করেছেন। শাকিল এখন মা ও খালার সঙ্গে বাড়িতেই সময় কাটান।
শাকিলের মা জানেন একটি ভিডিও তাঁর ছেলের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। শাকিলের মা এর মধ্যেই একটি মোবাইলের (০১৮৮৫০৭৫৪৭৮) মালিক হয়েছেন এবং এই নম্বরে বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলেছেন।
সোমবার সন্ধ্যায় হনুফা বেগমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করে কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমরা ভালা আছি। অনেকেই যোগাযোগ করতাছে শাকিলরে কিছু দেওনের লেইগ্যা। সরকারি লোকও আসতাছে। শাকিলরে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে চাইছিল, আমি বলছি শরীয়তপুরে মা আর ছেলের লেইগ্যা সরকারি জমিত একটা ঘর তুইল্যা দিলে ভালা হয়। মা আর ছেলে একসঙ্গেই থাকতাম।’
এর আগে শাকিলের দিন কাটত রাজধানীর উত্তর শাহজাহানপুরে কবরস্থানের কাছে ফুটপাতে। ফুটপাতে পথচারী পারাপারের সাইনবোর্ডের খুঁটি ও পায়ের সঙ্গে লাগানো শিকলই ছিল শাকিলের সারা দিনের সঙ্গী। সেখানে দাঁড়িয়েই করতে হতো প্রস্রাব-পায়খানা। রোদ, বৃষ্টি, ঝড় যা-ই হোক, মা মানুষের বাড়িতে কাজ শেষ করে না ফিরলে শাকিলের মুক্তি মিলত না। এভাবে চলছিল গত এক বছর ধরে।
এর মধ্যেই অনার্স পড়ুয়া ফাতেমা-তুজ জোহরার চোখে পড়েন শাকিল। তিনি ছোট ভাইকে কোচিং করাতে ওই এলাকায় গেলে শাকিলের বিষয়টি নজরে পড়ে। ফাতেমা অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী বাঙালিদের সহায়তায় পরিচালিত সাইলেন্ট হ্যান্ড সাপোর্ট নামের একটি সংগঠনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে জড়িত। তিনিই মূলত প্রথম শাকিল ও শাকিলের মায়ের পাশে দাঁড়ান। প্রথমে ১০ হাজার টাকাসহ বিভিন্ন সহায়তা দেন। ফাতেমা নিজের ফেসবুক পেজে শাকিলকে নিয়ে একটি পোস্ট দেন। তা নজরে আসে প্রথম আলোর এক প্রতিবেদকের।
এভাবেই ঘুরে যায় এক প্রতিবন্ধীর জীবনের মোড়। সমাজের অসহায় এসকল মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ালে একসময় সকলে সুখী সমৃদ্ধ জীবন যাপন করতে পারবে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ সাহাজুল ইসলাম
Leave a Reply