পল্লীকবি জসীমউদদীনের ‘আসামানী’ কবিতার কথা কার না মনে আছে। সেই ছোটবেলায় পড়া পঙক্তিগুলো- “আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও। বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি, একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।”
কালের গর্ভে সেই ভেন্না পাতা এখন বিলুপ্তির পথে। একসময় এই গ্রামবাংলার পথঘাট লোকালয় নানা গাছগাছানি আর পত্রপল্লবে ছায়া সুনিবিড় থাকলেও রূপসী বাংলার চিরচেনা সেই রূপ আজ আর নেই।
বাংলাদেশের গ্রাম ও গঞ্জের আনাচে কানাচে নানা ধরনের ওষুধি উদ্ভিদ পাওয়া যেত। কিন্তু এখন এসবের সংখ্যা নগন্য তাদের অন্যতম হচ্ছে ভেরেন্ডা বা ভেন্না। এই ভেরেন্ডাকে গ্রাম্যভাষায় বলা হয় হ্যান্ডা। আমাদের দেশে ভোজ্যতেলের তালিকা ভেরেন্ডা একটি পরিচিত নাম।
কিছুদিন আগেও কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বনজঙ্গল, ঝোপঝাড় ও বাড়ীঘরের আনাচে কানাচে প্রচুর পরিমাণে ভেন্না গাছ দেখতে পাওয়া যেত। কালের আবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে সেই গাছ।
একসময় ভোজ্য তেল হিসেবে এর অনেক কদর ছিল। ভেরেন্ডার তেল আমাদের দেশে গরিব মানুষের ভোজ্যতেল। ভেরেন্ডা গাছ দেখতে অনেকটা পেঁপে গাছের মত। ভেরেন্ডা গাছ ১০-১৫ ফুট লম্বা হয়।
সবচেয়ে বড়পাতা উদ্ভিদগুলোর মধ্যে একটি হলো ভেরেন্ডা গাছ। গজানোর সময় কোন শাখা প্রশাখা থাকে না আর একটু বড় হলে শাখা প্রশাখা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই গাছ বিনা চাষেই বর্ষাকালে গজায়।
গ্রামবাংলা আনাচে কানাচে ও ঝাপ ঝাড়ে এবং হেমন্ত ও শীতকালে ফুল ও ফল ধরা শুরু করে।
অনুকূল পরিবেশে সারা বছরেই ফুল ও ফল ধরে। ভেরেন্ডা গাছগুলো সাদা, কালো ও লালচে বর্ণের হয়ে থাকে। গিটযুক্ত গাছের পাতায় ৮-১০টি কোনা যুক্ত পাতা মানুষের হাতে মত ছাড়ানো থাকে। পাতাগুলো ৬-৮ ইঞ্চি পযর্ন্ত লম্বা হয়।
গাছের বয়স ২-৩ মাস হলেই শাখায় শাখায় ফুলের কাঁদি হয়। প্রতিটি কাঁদিতে দেড় থেকে দুই শতাধিক ফল ধরে। প্রতিটি ফলে ৩-৪ টি দানা বীজ হয়। কাঁদিগুলো পাকধরণে হাল্কা কালচে বর্ণের হয়ে থাকে। তখন গাছ থেকে কাঁদিসহ ফল ছড়িয়ে নিয়ে রোধ শুকিয়া বীজ সংগ্রহ করা হয়। বীজগুলো রোধ শুকিয়ে সরিষা অথবা তিল তিসির সাথে মিশিয়ে মেশিনে ভাঙিয়ে ভোজ্য তেল তৈরি করা হয়।
ভেন্নার কাঁচা বীজ কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে বিশেষ কার্যকরী। প্রচন্ড ঠান্ডা লাগলেও এ তেল গরম বুকে মালিশ করলেও আরাম পাওয়া যায়। এ তেল সারা শরীরে মাখলে ত্বক ভালো থাকে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দেশ থেকে বিলুপ্ত প্রায় এসব উপকারী ওষুধি বৃক্ষগুলো রক্ষা করতে সচেতন মহলকে এগিয়ে আসতে হবে। এব্যাপারে গণসচেতনাও প্রয়োজন। প্রয়োজন সরকারের বিশেষ উদ্যোগ।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডিঃ/ আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply