চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে যেভাবে অগ্রসর হওয়া উচিত ছিল বিএনপি সেভাবে অগ্রসর হতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ‘২৩ জুন পলাশী ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষাপটে আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সুবিধাভোগী, স্বার্থবাদী ও কর্তৃত্ববাদীদের শাসনকে পাকাপোক্ত করতে গণতন্ত্রের মাতা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আজকে অন্যায়ভাবে কারাগারে রাখা হয়েছে। তাই গণতন্ত্রের মাকে কারাগারে রেখে গণতন্ত্রকে মুক্ত করা সম্ভব হবে না। আর আমি সবার সাথে একমত যে, বেগম জিয়াকে মুক্ত করার জন্য যেভাবে আমাদের অগ্রসর হওয়া উচিত ছিলো, সেটা কৌশলগত কারণে এবং সরকারের জিরো টলারেন্সের জন্য সেই ব্যবস্থা নিতে পারি নাই।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আর জাতীয়তাবাদীরা ঐক্যবদ্ধ হলে জনগণের মধ্যে ইস্পাত কঠিন গণ-ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে। এজন্য বিএনপির সংগঠনগুলোকে অবশ্যই শক্তিশালী হতে হবে। তাই আমাদের দোষ-ক্রটি যেখানে আছে, সেগুলোকে চিহ্নিত করে সেই সংগঠনকে আমরা পুনর্গঠনের পদক্ষেপ নিচ্ছি। এখানে আমাদের ভুল হতে পারে। কিন্তু ভুলের মধ্যে দিয়ে বাস্তব অবস্থানে মধ্যে দিয়ে আমরা আশা করি, এই অস্বাভাবিক সরকার অস্বাভাবিকভাবে বেশীদিন দেশ চালাতে পারবে না। নিশ্চিত এই অস্বাভাবিক সরকারের একটা পরিসমাপ্তি আসবে। কারণ জনগণ এই কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতন ঘটিয়ে এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে।’
জাতীয় সংসদে যেসব ঋণখেলাপির তালিকা দেওয়া হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে সরকার কী ধরনের ব্যবস্থা নেবে তা দেখতে চান ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ব্যাংকের দলীয়করণের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতাদের সেখানে না বসালে ঋণখেলাপি হওয়ার কথা নয় । ঋণখেলাপিদের তালিকা সংসদে দেওয়া হয়েছে। এখন আমরা দেখতে চাই সরকার তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়। জনগণের আমানত বিদেশে পাচার করে ব্যাংকগুলোকে খালি করে যারা এই কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধে সরকার কী করে সেটা দেখতে চাই।
বাংলাদেশে এখন বাজার দখলের প্রতিযোগিতা চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আধিপত্যবাদ এবং সম্প্রসারণবাদ বাংলাদেশের বাজার দখলের জন্য মরিয়া। আজকে সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর জন্য অস্বাভাবিক সরকার অস্বাভাবিক একটা বাজেট করেছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বড় ব্যবসায়ীকে কখনো (শীর্ষ ১০ ধনীর মধ্যে একজন) অর্থমন্ত্রী বানানো হয়নি উল্লেখ করে ড. মোশাররফ বলেন, এই অর্থমন্ত্রী (আ হ ম মুস্তফা কামাল) সুবিধাবাদীদের জন্য বাজেট দিয়েছেন। অপরদিকে মধ্যবিত্তদের ওপরে চাপ বেড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, মোবাইল ফোনে কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। ১০০ টাকার মধ্যে ২৭ টাকা চলে যাবে। এই একটি উদাহরণেই বোঝা যায় যে, এই বাজেট সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীদের জন্য করা হয়েছে। যারা মুদ্রা পাচার করে, ঋণখেলাপি তারাই এই বাজেট থেকে সুবিধা পাবে।
উন্নয়নের গণতন্ত্রের নামে মেগা প্রজেক্ট করে সরকার জনগণের পকেট থেকে টাকা নিচ্ছে দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির বিল বাড়িয়ে ভ্যাট সম্প্রসারণ করে গরিব মানুষের কাছে থেকে টাকা আদায় করছে সরকার। আর এর সুবিধা নিচ্ছে সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীরা।
কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে তিনি বলেন, গত ৫ বছরে কারা কালো টাকা কামিয়েছে- আওয়ামী লীগের নেতারা, আওয়ামীপন্থী ব্যবসায়ীরা। তাদের সুবিধা দেওয়ার জন্যই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সেলিমের সভাপতিত্বে সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ জয় রহমান
Leave a Reply