সাতক্ষীরা সদরের বাঁকাল এলাকায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাজে প্রতিদিন হাজারো মানুষের যাতায়াত সেখানে। হাসপাতালের সামনে ছোট হোটেল ‘গরিবে নেওয়াজ’।
বাস্তবিক অর্থে অভাব ও বিপদে থাকা মানুষদের বিনামূল্যে খেতে দেন এই হোটেলের মালিক আব্দুর রশিদ সরদার। চেষ্টা করেন সাধ্যের সবটুকু দিয়ে বিপদে পড়া মানুষটির আপ্যায়ন করার। কেউ যদি বলেন টাকা নাই তাহলে তাকে বিনামূল্যে খাওয়ান রশিদ।
হোটেলের সামনে ‘গরিবে নেওয়াজ’ নামে ছোট সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে, ‘তেল মাথায় দেন, গামছা নেন, গোসল করেন, ভাত খান, পয়সা থাকলেও খাবেন, না থাকলেও খাবেন।’
আরো পড়ুনঃ ভালবাসা দিবসে যুবক যুবতীর প্রস্তুতি!
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের চরবালিথা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ সরদার। স্ত্রী ফজিলা খাতুন ও ছেলে সাগরকে নিয়ে বর্তমানে বসতি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ছোট হোটেলের মধ্যেই।
হোটেলের নামকরণ ও পয়সা থাকলেও খাবেন, না থাকলেও খাবেন এমন সাইনবোর্ডে এমন লেখার বিষয়ে হোটেল মালিক আব্দুর রশিদের সঙ্গে বুধবার দুপুরে কথা হয় জাগো নিউজের এই প্রতিনিধির।
হোটেল মালিক আব্দুর রশিদ সরদার জাগো নিউজকে বলেন, কে কখন কোথায় বিপদে পড়েন তার কথা কারও জানা নেই। বিপদগ্রস্ত মানুষ যদি আমাকে এসে তার বিপদের কথা জানায় তবে তাকে আমি দেখব। আমার সামর্থ্য অনুযায়ী আমি তাকে খাওয়াব। এমন কেউ থাকলে আমি তাকে বলি, পয়সা দেয়া লাগবে না, বিনামূল্যে খেয়ে যান।
তিনি আরও বলেন, অনেকেই আসেন রোগীর সঙ্গে। গরিব মানুষ। অনেক সময় তাদের ফ্রি খেতে দিতে হয়। অসহায় মানুষ কি করব? যেটুকু পারি দেই। আমার মৃত্যুর আগে যদি একটু দোয়া দেয়, তাই গরিবের জন্য এসব করি। মেডিকেল কলেজের অনেক ছাত্ররা আমার এখান থেকে খেয়ে যায়। অনেক সময় অনেকে টাকা দিতে পারে না। পরে তারা দিয়ে দেয়। মেডিকেল কলেজ এলাকার প্রথম দোকানদার আমি, ছয় বছর আগে দোকান দিয়েছি। তখন ভ্যানের ওপর ছিল ছোট দোকান। খাবার বিক্রি করতাম। হোটেলটা করেছি তিন বছর আগে। স্ত্রী ও ছেলেটা আমার হোটেলের সহযোগী।
দুঃখ প্রকাশ করে আব্দুর রশিদ বলেন, কিছুদিন আগে শ্যামনগর উপজেলা থেকে একটা রোগী ভর্তি হয়েছিল। তারা খুব গরিব মানুষ। আমাকে জানানোর পর তাকে দেখেছি। তার সঙ্গে থাকা স্বজনকে খেতে দিয়েছি। তবে সে আর সুস্থ হয়নি, মারা গাছে। তার মৃত্যুতে খুব দুঃখ পেয়েছি আমি।
এই দোকান মালিকের সঙ্গে আলাপকালে পাশে থাকা সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র মেকানিক মিজানুর রহমান বলেন, চাচা দূর থেকে আসা মানুষদের অনেক উপকার করেন। সাধারণত কেউ হোটেলে ফ্রিতে খেতে আসে না। তবে তার কাছে এসে বিপদের কথা জানালে তিনি তাকে বিনামূল্যে খাওয়ান।
Leave a Reply