• ডেনমার্কের অধীনে থাকা বিশ্বের সবচেয়ে বড় দ্বীপরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ড কিনে নেয়ার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইচ্ছে পূরণের সম্ভাবনা মুখথুবড়ে পড়েছে গ্রিনল্যান্ডিয়ানদের প্রত্যাখানে। তার আগ্রহ প্রকাশের প্রেক্ষিতে, নিজেদের অভিমত জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। মার্কিন গণমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে ট্রাম্পের এই ইচ্ছের কথা প্রকাশের পরে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ‘গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়’। •
শনিবার (১৭ আগস্ট) এক বিবৃতিতে বিষয়টি উল্লেখ করে গ্রিনল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়,’যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গ্রিনল্যান্ডের একটি চমৎকার আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক রয়েছে। বাণিজ্যিক ক্ষেত্র হিসেবে সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রটি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের ব্যাপারে বিশ্বকে আশ্বস্ত করছে। আমরা বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত, বিক্রয়ের জন্য নয়।’ ডয়েচে ভেলে
এর আগে ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ডকে কিনতে পারে কি না তা সভা, ডিনার এবং কথোপকথনের সময় পরামর্শকদের কাছে ট্রাম্প জানতে চান। যদিও একটি সূত্র জার্নালকে জানায়, রাষ্ট্রপতি সম্ভবত এক ধরনের রসিকতা করছেন- যেহেতু ট্রাম্প এখনো কোনো প্রচার সমাবেশে এই ধারণা প্রকাশ করেননি, সম্ভবত তিনি গুরুত্ব সহকারে এটি বিবেচনা করছেন না’।
আগামী সেপ্টেম্বর মাসে গ্রিনল্যান্ডের সঙ্গে বিভিন্ন বাণিজ্যিক বিষয়ে আলোচনার জন্য আন্তঃরাষ্ট্রীয় সফরে যাওয়ার কথা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও তার প্রতিনিধি দলের। এক বৈঠকে এ প্রসঙ্গে আলোচনা কালে দ্বীপটি ক্রয়ের ব্যাপারে ট্রাম্প এ মন্তব্য করেছিলেন বলে জানা যায়। তবে এ ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কোনো মন্তব্য পরবর্তীতে জানা যায়নি।
|| ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে গ্রিনল্যান্ড ও ডাচ রাজনৈতিকদের প্রতিক্রিয়া
ডাচ রাজনীবিদরাও দ্রুত ট্রাম্পের এই বাসনার পরিকল্পনার প্রতিবেদনকে উড়িয়ে দিয়েছেন। দেশটির প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লার্স লোককে রাসমুসেন টুইট করে বলেন, ‘এটি অবশ্য একটি এপ্রিল ফুল দিবস রসিকতা হতে পারে … তাও মৌসুমের পুরোপুরি বাইরে!’
এদিকে গ্রিনল্যান্ডের সাংসদ আজা চেমনিটস লারসনও মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই আগ্রহের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি টুইটারে লিখেছেন ‘গ্রিনল্যান্ডকে কিনতে ট্রাম্পকে কোনো ধন্যবাদ নয়! ডেনমার্কের সাথে আরও ভালো এবং আরও সমান অংশীদারিত্ব নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে গ্রিনল্যান্ড’।
এছাড়া ডেনমার্কের রাজনীতিবিদরা সম্ভাব্য মার্কিন অধিগ্রহণের ধারণাটিকে উপহাস করেছেন। জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যমে ডিআরকে-এর কাছে জনসম্প্রদায়িক ডেনিশ পিপলস পার্টির পররাষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্র সোরেন এস্পারসেন বলেন, ‘তিনি যদি সত্যই এটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে থাকেন, তবে তিনি যে পাগল হয়ে গেছেন এটিই তার চূড়ান্ত প্রমাণ।’
অপরদিকে ড্যানিশ কনজারভেটিভ এমপি রাসমুস জারলভ টুইটারে লিখেছেন,’মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ডেনমার্কের ৫০,০০০ নাগরিক বিক্রি করার চিন্তাভাবনাটি সম্পূর্ণ হাস্যকর। যেটি ঘটছে না, তার কোনো সম্ভাবনা নেই। এটি ভুলে যান’। ঠিক কীভাবে বা কার কাছ থেকে ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড কিনবেন তা অস্পষ্ট বলে জানায় ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
|| রসিকতা নাকি বাস্তবতা: দ্বীপরাষ্ট্র ক্রয়ে মার্কিন রীতির প্রচলন
তবে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এই সংবাদটি কী শুধুই ট্রাম্পের রসিকতা হিসেবে বিবেচনা করার মতো নাকি সত্যিই সেখানে কোনো বিষয় রয়েছে- তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। কারণ এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র তাদের রাষ্ট্রীয় সীমানা বৃদ্ধি ও জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে লুইজিয়ানা ও আলাস্কার মত দুটি দ্বীপরাষ্ট্র ক্রয় করে নিয়েছে। ১৮৬৭ সালে, যুক্তরাষ্ট্র ৭ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে রাশিয়ার কাছ থেকে আলাস্কাকে কিনেছিল। এর আগে ১৯১৭ সালে তারা ডেনিশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিনে নেয়, যার বর্তমান নাম মার্কিন ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ।
উল্লেখ্য, কয়লা, দস্তা, তামা ও আকরিক লোহার মত প্রাকৃতিক সম্পদের কারণে এবং মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় গ্রিনল্যান্ডের প্রতি ট্রাম্প আগে থেকেই আগ্রহী ছিলেন বলেও জানা গেছে।
|| ড্রিমল্যান্ড গ্রিনল্যান্ড: ট্রাম্পই প্রথম নন
গ্রিনল্যান্ড কিনতে আগ্রহী ট্রাম্পই একমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট নন। ১৯৪৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান অঞ্চলটির জন্য ডেনমার্ককে ১০০ মিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব দিয়েছিল। এর আগে তিনি গ্রিনল্যান্ডের কৌশলগত অংশগুলোর জন্য আলাস্কার জমি বদল করার ধারণাও দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। উইকিপিডিয়া
তবে ডেনমার্ক এবং গ্রিনল্যান্ড সরকার, পাশাপাশি দেশটির জনগণ এ প্রসঙ্গে যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তার প্রেক্ষিতে ট্রাম্পের মতো মানুষের এমন বরফ শীতল নীরবতা এরইমধ্যে উস্কে দিচ্ছে হাজারো প্রশ্ন। সম্প্রতি চাঁদকে মঙ্গলের অংশ বানিয়ে আর মানুষের ‘হৃৎপিণ্ডে কিডনি’ স্থাপনের পর, রসিকতার ছলে গ্রিনল্যান্ড দ্বীপ ক্রয়ের যে প্রসঙ্গ তুলে এনেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, তাতে করে আবারও তিনি নিজেই যেন একটা ‘রসিকতা’ বনে গেছেন!
Leave a Reply