বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ ১৪ মাস ধরে কারাবন্দি। দলীয় নেতাকর্মীরা এখন একেবারে নিশ্চিত হয়ে গেছে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেগম জিয়ার মুক্তি মিলবে না। চেয়ারপারসনের মুক্তির জন্য আন্দোলনই হচ্ছে একমাত্র পথ। দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, এখন একমাত্র এজেন্ডা হচ্ছে খালেদা জিয়ার মুক্তি। এমনকি তার এক আইনজীবী বলেছেন, আইনি প্রক্রিয়ায় অনেক সময়ের প্রয়োজন। এখন আন্দোলন ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই। আন্দোলনের মাধ্যমেই বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে ভোটে গিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখা দলটি এখন সংকটের মুখে। দলীয় ইতিহাসের সবচেয়ে সংকটপূর্ণ সময়ে এসে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণের কার্যক্রম শুরু করেছে বিএনপি। জাতীয় নির্বাচনের পর দলের সিনিয়র নেতাদের একাধিক বৈঠকে দল পূনঃর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এমন কি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও একাধিক মিটিংয়ে যুক্ত হন ভিডিও কনফারেন্সে। ঘুরে দাঁড়াতে দল পুনর্গঠনের মতামত দিয়েছেন তারেক রহমানও।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং আন্দোলন নিয়ে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। কর্মী সমর্থকদের প্রশ্ন- তাদের দলীয় প্রধান কবে মুক্তি পাবে? আইনি প্রক্রিয়ায় কোনোভাবেই দলীয় প্রধানের মুক্তি মিলবে না এমনটাই মনে করছেন দলের সকল পর্যায়ের শুভাকাঙ্খীরা। যেহেতু আইনি প্রক্রিয়ার কোন অবস্থাতেই দলীয় প্রধানের মুক্তি হবে না তাহলে আন্দোলন হচ্ছে না কেন এমনটাই বলছেন কর্মী-সমর্থকরা। তাই দলটির সিনিয়র নেতারা বার বার বলে আসছেন গণতন্ত্রের মুক্তি আর খালেদা জিয়ার মুক্তি একই সূত্রে গাঁথা। তাই আন্দোলনের দিকেই যাচ্ছে দলীয় নেতারা। দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা মনে করছেন আন্দোলনে যাওয়ার পূর্বে দলকে পুনর্গঠন করা প্রয়োজন। দলকে পুর্নগঠন করেই আন্দোলনের নামার পরিকল্পনাও এঁটেছেন নীতিনির্ধারকরা।
দলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের দ্বারা বিএনপির যে সমস্ত কর্মী-সমর্থকরা মামলা হামলার শিকার হয়েছেন তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সারাদেশে ১০টি সাংগঠনিক কমিটি তৈরি করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কর্মী-সমর্থকদের খোঁজ খবর নিয়ে সকল প্রকার সহযোগিতা করা হয়েছে। পুর্নগঠনের অংশ হিসেবে এবং নেতাকর্মীদের উৎসাহ দেয়ার জন্যই সারাদেশ সফর করেছে দলটি। দলটির শীর্ষ নেতারা মনে করেন এরই মধ্য দিয়ে তাদের অনেক শক্তি সঞ্চয় হয়েছে।
ইতোমধ্যে দল পুর্নগঠন এর কাজ শুরু হয়েছে। দল পুর্নগঠনের অংশ হিসেবে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁতী দল, কৃষক দল, ওলামা দল এবং মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে যা দুর্বলতা আছে তা খুঁজে বের করে দলকে শক্তিশালী করা হবে এমনটাই বললেন দলটির নেতারা। দলকে শক্তিশালী করে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বড় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি।
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি ২০ দলীয় জোটের নেতারা এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারাও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনের কথা বলছেন। এমনকি গত সোমবার (৮ এপ্রিল) ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের জরুরি এক বৈঠক আনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকেও বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী দুই মাসের মধে বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগঠনের সকল কমিটি শেষ করে আন্দোলনে যাবে বিএনপি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বিডি২৪লাইভকে বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। দেশে কোন গণতন্ত্র নেই আইনের শাসন নেই। ফ্যাসিবাদী সরকারের শাসন চলছে। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে গণঅভ্যুত্থান ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই। তিনি বলেন, আমাদের দলকে পুর্নগঠন করা হচ্ছে। পুর্নগঠন করা হলে যে কোন সময় আন্দোলনে নামবো।
বিএনপির সংকট নিরসন সঙ্গে কথা হয় দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের সাথে। তিনি বলেন, তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে নিজস্ব ফোরামের ভিত্তিতে আলাপ আলোচনা করে সে আলোচনায় যে মতামত আসে তার ভিত্তিতে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির পাশাপাশি আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে। তৃণমূল কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে সাংগঠনিক পুনর্বিন্যাস এবং আগামী দিনের করণীয় নির্ধারণ করা হবে। যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আর এর ভিত্তিই হচ্ছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ জয় রহমান
Leave a Reply