সপ্তাহজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’। গত ১ মে ঘূর্ণিঝড়টির অবস্থান এবং তার গতিপথ অনুযায়ী শনিবার (৪ মে) রাজশাহী অঞ্চলে ফণীর কেন্দ্রে থাকতে পারে বলে তথ্য দিয়েছিল আবহাওয়া অধিদফতর।
এটিকে সুপার সাইক্লোন বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল- রাজশাহী অঞ্চলের উপর দিয়ে ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝড়টি বয়ে যেতে পারে। যা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ছিলেন দেশের আমের রাজধানীখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষিরা।
তবে গতিপথ বদল করে শনিবার দুপুরে ফণী চাঁপাইনবাবগঞ্জ এড়িয়ে সিরাজগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জে শুক্রবার (৩ মে) বিকাল থেকে শনিবার (৪ মে) দুপুর পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে প্রায় ৬৭ মিলিমিটার।
ফণীর কারণে আমচাষিদের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির শঙ্কা কেটে গেছে। বরং ফণীর প্রভাবে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে, তা এই অঞ্চলের প্রধান ফসল আমের জন্য আশীর্বাদ বয়ে নিয়ে এসেছে।
আমচাষি ও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এপ্রিলের শেষ সপ্তাহজুড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে দাবদাহে আমে ব্যাপকভাবে বালাইয়ের উপদ্রব শুরু হয়। বোটা শুকিয়ে ঝরে পড়ারও ব্যাপক শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। তবে ফণীর প্রভাবে যে বৃষ্টি হয়েছে, তা আমের জন্য ব্যাপক উপকারী।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার আমচাষি ও বিদেশে আম রফতানিকারক ইসমাঈল হোসেন খান শামিম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ফণী আঘাত হানলে আমের ব্যাপক ক্ষতি হতো। এনিয়ে উদ্বেগ-আতঙ্কে দিন কেটেছে সবার। তবে কোনো রকম ঝড় ছাড়াই ফণীর প্রভাবে শুধু বৃষ্টি হওয়ায় এখন স্বস্তিতে জেলার আম ব্যবসায়ী ও বাগান মালিক সবাই।’
আমচাষি আবদুস সাত্তার জানান, মুকুল আসার পর হতেই বৃষ্টির দেখা মেলেনি। পাম্পের মাধ্যমে বাগানে পানি দিতে হয়েছে। সেটাও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। পানি না পাওয়ায় আম বড় হচ্ছিলো না। ফলে সময়মতো আম নামানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। এই বৃষ্টি সেই দুশ্চিন্তা দূর করে দিয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ফণীর প্রভাবে শুধু বৃষ্টি হওয়ায় এটি আমের জন্য আশীর্বাদ। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় আমে রোগ-বালাই দেখা দিয়েছিল। বৃষ্টি হওয়ায় এখন আম দ্রুত বড় হবে এবং ঝরে পড়বে না।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় ৩২ হাজার হেক্টর জমির বাগান থেকে ৩ লাখ মেট্রিক টন আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply