সারা পৃথিবী যখন দুই দুইটি বিশ্বযুদ্ধ সামলে ওঠার আপ্রাণ চেষ্টা করছে, তেমনি এক সময়ে জিম মরিসনের জন্ম, ১৯৪৩ সালের ৮ ডিসেম্বর। ছোটবেলা থেকেই তিনি তার পারিপার্শ্ব সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন। প্রতিটি ঘটনা গভীরভাবে স্পর্শ করত তাকে। ছোটবেলায় একবার একটি সড়ক দুর্ঘটনা খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন, সেটার দুঃসহ স্মৃতি তার লেখা বেশ কয়েকটি গানে প্রকাশও পেয়েছে।
মাত্র ১২ বছর বয়স থেকে তার কাব্যচর্চার শুরু। জিমের দর্শন ও থিয়েটার বিষয়ে বেশ ভালোরকমের পড়ালেখা ছিল। তিনি লস এঞ্জেলস থেকে ‘থিয়েটার আর্টস’ এবং ‘সিনেমাটোগ্রাফি’ বিষয়েও পড়েছেন।
চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে গিয়েই জিমের সাথে পরিচয় হয় রে মেনজারেক এর সাথে। মরিসনের কাব্যজ্ঞান ও সুরের বোধে মুগ্ধ হন তিনি। এরপরই ‘৬৫ সালে তারা দুজন প্রতিষ্ঠা করেন ‘দি ডোরস’। সারাবিশ্বের মোট ছয়টি এলবাম বের করেন তারা। ছয়টি এলবামই হিট হয়। জিমের এর পাশাপাশি তিনটি কাব্যগ্রন্থও রয়েছে।
এবার আসা যাক একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে, ‘ক্লাব টুয়েন্টি সেভেন’ এমন একটি শিল্পীদের দল যারা প্রায় প্রত্যেকেই ২৭ বছর বয়সে অস্বাভাবিক মৃত্যূর শিকার হয়েছেন। কখনো তারা আত্মহত্যা করেছেন, কখনো বা তাদের হত্যা করা হয়েছে। এই অঘোষিত আন্দোলনের শুরুটা হয়েছিল রোমান্টিক কবি জন কীটসের সময় থেকে। তারপর এই দলে যোগ হয়েছে জেনিস জোপলিন, কার্ট কোবেইন, এমি ওয়াইনহাউজসহ আরো অনেকে। জিম মরিসনও এই ক্লাবেরই একজন।
সাতাশ বছর বয়সেই অতিরিক্ত হেরোইন সেবন করার ফলশ্রুতিতে বাথটাব থেকে উদ্ধার করা হয় তার নিষ্প্রাণ দেহ। তার মৃত্যুর রহস্যটি এখনো কাটেনি। ১৯৪৩ সালের সে বিকেলে ঘটনাটি নিয়ে নানাবিধ তথ্য পাওয়া যায়। জানা যায় তার প্রেমিকা, একসময়ের অভিনেত্রী গায়িকা ম্যারিয়ান ফেইথফুলের সাবেক প্রেমিক জাঁ ব্রেতোয়া জিমকে মাদক সরবারহ করতেন। তিনিই জিমের মৃত্যুর জন্য দায়ী বলে ধারণা অনেকের। গায়ক ও অভিনেত্রী ফেইথফুল বলেন, ‘কিছুক্ষণ হোটেলে থেকে আমি চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ব্রেতোয়া এসে জিমের সঙ্গে দেখা করল। এরপরই জিম মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।’
জিম মরে যাওয়ার পর তার কোন ময়নাতদন্ত করা হয়নি। চিকিৎসকেরা চাইলেও তার পরিবার পরিজনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে জিমকে হত্যা করা হয়নি। তাই ময়নাতদন্তের দরকার নেই।
স্প্যানিশ ক্যারাভানে করে তিনি দেখতে চেয়েছিলেন সারা পৃথিবীর মাধুর্য, যার চোখ বাগানের কথা বলে, ধুলোময় সাহারার কথা বলে, যার মন অধিকার করে ছিল এক্সিডেন্ট দেখার দুঃসহ স্মৃতি, সেই জিম মরিসনকে বিদায় নিতে হয়েছে মাত্র ২৭ বছর বয়সে।
শুভ জন্মদিন ক্ষণিকের মহাতারকা…।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডিঃ / কাউসার।
Leave a Reply