টঙ্গী রেল সেতুতে আটকে গেল বিআইডাব্লিটিএর উচ্ছেদ অভিযান। সেতুর নিচ দিয়ে উচ্ছেদ অভিযানের এক্সাভেটর প্রবেশ করতে না পারায় উচ্ছেদ অভিযান থেমে যায়। বিভিন্ন পন্থায় বহুবার চেষ্টার পরও সেতু অতিক্রম করা অসম্ভব হয়ে দাড়ায়। এতে টঙ্গী রেল সেতুর পশ্চিম প্রান্তে উচ্ছেদ অভিযান থামাতে বাধ্য হয় বিআইডাব্লিটিএ। তবে যে কোন উপায়ে আজ বৃহস্পতিবার ওই রেল সেতু অতিক্রম করে অভিযান চালান হবে বলে জানিয়েছেন বিআইডাব্লিটিএর যুগ্ম পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দীন।
এদিকে বুধবার সাকাল থেকে অভিযান চালিয়ে ৫৫টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে বিআডাব্লিটিএ। পোনে দুই লক্ষ টাকায় নিলাম দেওয়া হয়েছে একটি বালুর গদি। আব্দুল্লাপুর-টঙ্গী সড়ক সেতুর পূর্বপাশ থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। এসময় একটি পাঁচ তলা ও একটি চার তলা বাণিজ্যিক ভবন ভেঙ্গে দিয়ে এগিয়ে যায় বিআইডাব্লিটিএর এক্সাভেটর। পরে টঙ্গী রেল সেতুর নিকটে এসে থেমে যায় অভিযান।
সরেজমিনে দেখা যায়, তুরাগ নদের উপর ঢাকা-টঙ্গী সংযোগকারী পরপর দুইটি রেল সেতু। মাঝে বিআইডাব্লিটিএর অনুমোদন ছাড়ায় চলছে আরেকটি সেতুর নির্মান কাজ। সেতুর নিচে দুইপাশ থেকে মাটি ফেলে নদীর অর্ধেকের বেশি অংশ ভরাট করা হয়েছে। এফকনস-কেপিটিএল কোম্পানি ওই সেতু নির্মানের কাজ করছে। তারাই নদীর মাঝ বরাবর বাঁশের খুটি পুতে মাটি ফেলে বন্ধ করেছে নৌ-যান চলাচলের পথ।
এছাড়া পানির স্তর থেকে যে উচ্চতায় সেতু নির্মিত হচ্ছে তাতে কোন মৌসুমে বড় ধরণের নৌ-যান চলাচল করতে পারবে না বলে বিআইডাব্লিটিএর কর্মকর্তারা জানান। ফলে বিআইডাব্লিটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাৎক্ষনাত নির্মান প্রকল্পের কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয়।
এসময় আরও দেখা যায় নদীর নাব্যতা না থাকায় রেল সেতুর পিলারের বেইজমেন্ট পানির উপরে ভেসে আছে। পিলার ছাড়া বেইজমেন্ট দৈর্ঘ্য-প্রস্তে তিন-দুই মিটার বাইরে বের হয়ে আছে। ফলে দুই পিলারের মাঝে বেশি হলেও তিন থেকে চার মিটার ফাঁকা জায়গা রয়েছে। যার মধ্য দিয়ে পল্টনসহ বিআইডাব্লিটিএর এক্সাভেটর কোন ক্রমেই প্রবেশ করা সম্ভব নয়। বিধায় বিআইডাব্লিউটিএর উচ্ছেদ অভিযান ওখানেই থেমে যায়।
এছাড়া রেল সেতুর পিলারের ওই বেইজমেন্টের কারনে প্রায় সময় নৌকা, ছোট ছোট ট্রলার বা নৌ-যান ডুবির ঘটনা ঘটে বলে এলাকা বসি জানায়। তাই এই সেতু ভেঙ্গে নতুন করে নির্মানেরও দাবি জানায় তারা।
এ বিষয়ে বিআইডাব্লিটিএর যুগ্ম পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, নদীর উপর সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয় বা বিভাগের নতুন করে সেতু নির্মানের কাজ চলছে। সমস্ত সেতু গুলো বিদ্যমান সেতুর উচ্চতায় নির্মান করা হচ্ছে। ঢাকার চারপাশে যে বৃত্তাকার নৌ-পথ তা ব্যবহারের একমাত্র অন্তরায় চার নদীর উপর নির্মিত ১৩টি সেতু। এই সেতু গুলোর জন কোন নৌ যান চলাচল করতে পারছে না। আমরা এই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রানলে চিঠি দিয়েছি সেতু গুলো উচু করার জন্য।
কিন্তু কোন মন্ত্রনালয় তা তো করেইনি বরং একই উচ্চতায় নতুন সেতু নির্মান করছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি ভবন রেড মার্কিং করার সত্বেও আমরা ভাঙতে সক্ষম হতে পারছি না। তারা উচ্চ আদালত থেকে স্থগিত আদেশ নিয়ে এসেছে। অথচ এই উচ্চ আদালতের নির্দেশে গাজি পুরুরের চিপ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটিতে জেলা প্রশাসন, সেটেলমেন্ট, বিআইডাব্লিটিএসহ অনেকেই ছিলেন। সেই সিএমএম মহোদয় একটি রিপোর্ট পেশ করেছিলেন এই সমস্ত ভবন অবৈধ বলে চিহ্নিত করে।
উচ্চ আদালত সেই রিপোর্ট গ্রহন করে ওই অবৈধ স্থাপনা ভাঙ্গার নির্দেশ দিয়েছে। এবং এটি এ্যাডভোকেট মোনজেল মোরশেদের করা একটি রিট পিটিশনে এই আদেশ দেওয়া হয়। এখন দেখছি উচ্চ আদালতের আরকেটি বেঞ্চ থেকে ওই অবৈধ স্থপনা উচ্ছেদ থেকে স্থগিত করা হচ্ছে। বিধায় এই উচ্ছেদ অভিযানে আমরা বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকর হচ্ছি। এছাড়া নতুন সেতু নির্মানের বিষয়ে তিনি আরো বলেন, এখন নদীর পানি শুকিয়ে একে বারে তলায় পড়েছে।
তার পরও আমার এক্সাভেটর নিয়ে রেল সেতু অতিক্রম করতে পারি নাই। বর্ষার মৌসুমে কোন নৌ-যানই চলাচল করতে পারবে না। তাই আমরা লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়ে সেতুর নির্মান কাজ বন্ধের আবেদন করেছি।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply