বসন্ত কাল শুরু হওয়ার সাথে সাথেই গরমের প্রকোপ শুরু হয়ে গেছে। তীব্র শীতের পর হঠাৎ করেই ঋতুর পরিবর্তনে ত্বকে নানা ধরণের সমস্যার উদ্ভব দেখা যায়। শীত চলে গেলেও রেখে যায় তার রুক্ষতা, সেই সাথে সূর্যের তেজ,ঘাম এবং বসন্তের মাতাল হাওয়ায় ধুলোবালির ছড়াছড়ি। এই সব আমাদের ত্বকে অনেক সমস্যা সৃষ্টি করে,ত্বক হয়ে ওঠে বিবর্ণ।
অনেক সময় ত্বকে স্থায়ীভাবে দাগ পড়ে যায়,যা কারো কাম্য নয় কিন্তু সময়ের সল্পতা এবং আলসেমির কারণে অনেকেই নিজের ত্বকের যত্নে একেবারেই উদাসীন। যাদের কে দীর্ঘ সময় বাহিরে থাকতে হয় বা যারা চাকরিজীবী তাদের ত্বক রোদে পোড়ে বেশী এবং তারাই বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। রোদে রয়েছে ভিটামিন-ডি যা কিনা ত্বকের বিশেষ পুষ্টি জোগায়,কিন্তু অতিরিক্ত রোদ ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।
রোদ,ঘাম,ধুলোবালি ত্বকের স্নিগ্ধতাকে ধ্বংস করে যার ফলে ত্বক আদ্রতা হারিয়ে হয়ে যায় শুস্ক, লোমকূপে ময়লা জমে ব্রণের সৃষ্টি হয় এবং রোদের পোড়াভাব ত্বকে বসে যাওয়ার কারণে চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ ফুটে ওঠে। তাছাড়া গরমে ত্বকে ঘাম ও তৈলাক্তভাব বেড়ে গিয়ে ত্বকের উজ্জলতা সহজেই নষ্ট হয়ে পারে। আমাদের শরীরে মুখ,হাত ও পায়ের ত্বকে এই সব সমস্যাগুলো বেশী দেখা যায় কিন্তু যদি এই ত্বকগুলোর টু যত্ন নেওয়া যায় তাহলে আপনাকেও দেখা যাবে সজীব এবং প্রাণবন্ত।
গ্ল্যামার ওয়াল্ডের অ্যারোমা থেরাপিষ্ট জুলিয়া আজাদ গরম কালে ত্বকের যত্ন নিয়ে বিশেষ ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন। যা আমাদের ত্বককে নির্মল করতে সাহায্য করবে। জুলিয়া আজাদের যে সকল পরামর্শ দিয়েছেন সেসব তুলে ধরা যাক।
পরিচ্ছন্নতা:
ত্বকের যত্নে সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকরী কাজ হচ্ছে ত্বককে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। নিয়মিত স্বচ্ছ পরিষ্কার পানি দিয়ে নিজেকে পরিষ্কার রাখুন।এতে করে ময়লা জমতে পারবে না এবং রোদের ক্ষতিকারক রশ্মির প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা যায়।সঠিকভাবে প্রতিদিন ত্বক পরিষ্কার রাখলে আপনার ত্বক এমনিতেই সুন্দর থাকবে।
ম্যাসাজ:
ম্যাসাজ ত্বকের ব্ল্যাড সার্কুলেশন বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে এবং ত্বকের ছোটখাটো সমস্যাগুলোকে দ্রুত উপশম করে তুলতে পারে। নিয়মিত সঠিকভাবে ত্বকের ম্যাসাজ আপনার ত্বকের উজ্জলতা ফিরিয়ে দিতে পারবে কিন্তু সঠিকভাবে ম্যাসাজ না করলে ত্বকের কোন উপকার ই হবে না। এ জন্য শরীরের প্রেসার পয়েন্টে প্রেসার দিয়ে ম্যাসাজ করে বেশী উপকার পাবেন এবং ত্বকের নানা ধরনের সমস্যা থেকে রক্ষা পাবেন। কিন্তু ম্যাসাজ করার আগে ভালো ভাবে না জেনে বা দ্রুত ফলাফল পাওয়ার আশায় অধিক প্রেসারে ম্যাসাজ করলে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশী পাবেন।কোন কিছুর ভালো ফল পেতে ফলে ধৈর্য সহকারে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়,ত্বকের যত্নেও তাই।অনেকে অনেক কিছু জেনেও ধৈর্যের অভাবে ত্বকের যত্নের ব্যপারে উদাসীন।আবার এক থেকে দুইদিন যত্ন নিয়েই হাপিয়ে উঠেন। কিন্তু ত্বকের যত্নটা নিয়মিত করতে হয়। মুখের ত্বককে প্রাণবন্ত করতে চাইলে নিয়মিত মুখের ত্বক পোর ক্লিনজিং ব্যবহার করে ক্লিন করে স্কিন টনিকে সাথে রেডি স্কার্ব মিক্সড করে ম্যাসাজ করুন করুন সার্কুলার মুভমেন্টে, নিশ্চই ফল পাবেন।
টোনিং:
গরমকালে ত্বককে ফ্রেশ রাখতে চাইলে টোনিং করা অত্যাবশক। গরম পানিতে গোলাপের পাপড়ি ভালো ভাবে ফুটিয়ে তার সাথে সামান্য পরিমান কর্পূর মিক্সড করে পেস্ট তৈরী করে মুখ পরিষ্কার করার সময় ঐ পেস্ট বা টোনার মুখে লাগিয়ে নিন।তৈলাক্ত ত্বকের জন্য টোনারের সাথে এস্ট্রিনজেন্ট যোগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।এতে করে তৈলাক্তভাব কমে গিয়ে ত্বকে এক ধরণের ফ্রেশনেস ভাব আসে। প্রতিবার এই টোনার বাননোর ঝামেলা এড়ানোর জন্য আপনি উল্লেখিত দুই রকমের টোনার ই ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন,তাহলে প্রতিবার মুখ পরিষ্কারের সময় টোনার টা লাগাতে পারবেন।
ময়েশ্চারাইজার:
মুখ পরিষ্কার করে যে কোন ধরণের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন।আর যদি টোনিং করে থাকেন তাহলে কখনই ময়েশ্চারাইজিং করতে ভুলবেন না,যদিও আপনার ত্বক তৈলাক্ত হয়।তবে গরম কালে ভারি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকুন এবং ওয়াটার বেস ময়েশ্চারাইজার লাগতে পারেন। মানুষের ত্বক জন্মগতভাবে সাধারণত তিন ধরণের হয়ে থাকে।
- স্বাভাবিক ত্বক
- শুষ্ক ত্বক এবং
- তৈলাক্ত ত্বক
এই তিন ধরণের ত্বকের জন্যই মধু বেশ উপকারী ময়েশ্চারাইজার, যদি মধু দিয়ে ময়েশ্চারাইজিং করে থাকেন তাহলে অবশ্যই ৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন।
গরমে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ফেস মাস্ক:
যাদের ত্বক তৈলাক্ত বিশেষ করে মুখের ত্বকে তেল তেল ভাব বেশি তাদের গরম কালে ত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কাও বেশী। তৈলাক্ত ত্বকে ধুলোবালি লোমকূপে বসে যায়, সাধারণ ভাবে মুখ পরিষ্কার করার পরেও সেই ময়লা ধুর হয় না এ কারণে তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দেখা যায় বেশী।
তৈলাক্ত ত্বককেও সুন্দর এবং ফ্রেশ রাখার জন্য যত্নের প্রয়োজন একটু ধৈর্য নিয়ে যত্ন নিন। যাতে আপনার ত্বকও হয়ে ওঠে প্রানবন্ত। মুখ ক্লিন করার পর ফেস মাস্ক হিসেবে এক চা চামচ মুলতানি মাটির সাথে এক চা চামচ গাজরের রস, এক চা চামচ মধু, এক চা চামচ গোলাপ জল এবং একটি ডিমের সাদা অংশ মিক্সড করে মাস্ক বানিয়ে মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে ভেজা হাতে হাল্কা একটু ম্যাসাজ করুন এবং পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। ওয়াটার বেসের কোন ভালো ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। এভাবে নিয়মিত করুন দেখবেন আপনার তৈলাক্ত ত্বকেও কতটা উজ্জলতা চলে এসেছে।
ত্বকের বাড়তি যত্ন:
সব ধরণের ত্বককে ঠান্ডা রাখতে চাইলে প্রতিদিন এক চা চামচ গোলাপের পাপড়ি বাটার সাথে এক চামচ মিল্ক পাউডার,এক চা চামচ শশার রস মিশিয়ে ফেস মাস্ক বানিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। শুকানোর পর ভালো ভাবে ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
মুখের ত্বকের সাথে সাথে আমাদের শরীরের অন্যান্য ত্বকেরও যত্ন নিতে হবে,বিশেষ করে হাত এবং পায়ের ত্বকের যত্ন।হাত ও পায়ের যত্ন নিয়েও গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডের অ্যারোমা থেরাপিস্ট জুলিয়া আজাদ পরামর্শ দিয়েছেন।
হাত ও পায়ের ত্বকের যত্ন:
গরম কালে আমাদের হাত এবং পায়ের ত্বক হয়ে পড়ে শুষ্ক এবং খসখসে। শুষ্ক ও খসখসে ত্বককে নরম এবং মশৃণ করতে আপনি সপ্তাহে মাত্র একবার কুসুম গরম পানিতে ভিনেগার বা লেবুর রস এবং শ্যাম্পু মিক্সড করে হাত ও পা ভিজিয়ে রাখুন,এতে করে ত্বকের মৃতকোষ গুলো উঠে আসবে এবং ত্বক নরম হবে।
তাছাড়া লেবুর রস আপনি পায়ের ত্বকে লাগিয়ে কিছুক্ষন পর ধুয়ে নিন,এতে করে আপনার পায়ের উজ্জলতা ফিরে আসবে। চন্দন,মুলতানি মাটি,দুধ ও পাকা কলা এক সাথে পেস্ট করে আপনি হাত এবং পায়ের ত্বকে লাগিয়ে শুকানোর পর হাল্কা গরম পানিতে ধুয়ে নিন। ত্বকের মশৃনতা ফিরে আসবে এবং ত্বকের ডেডসেল ক্লিন হয়ে যাবে। অনেকে মনে করেন গরম কালে হাত-পায়ের ত্বকে ময়েশ্চারাইজিং করতে হয় না,কিন্তু এটা ভুল ধারনা। গরম কালেও ত্বক আদ্রতা হারায় তাই পরিষ্কার ত্বকে আপনার পছন্দের যে কোন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
জুলিয়া আজাদ হাত ও পায়ের যত্নে আরো বলেন প্রতি মাসে অন্তত একবার বিউটি পার্লারে গিয়ে আপনার ত্বকের সমস্যা অনুযায়ী পেডিকিউর এবং মেনিকিউর করে নিন।
ত্বকের যত্ন নিন এবং নিজেকে সজীব এবং প্রাণবন্ত রাখুন।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply