ক্ষমতায় গেলে ত্রিশোর্ধ্ব শিক্ষিত বেকারের জন্য বেকার ভাতা চালু করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
এছাড়া পুলিশ ও সামরিক বাহিনী ছাড়া সরকারি চাকরিতে প্রবেশের কোনো বয়সসীমা না রাখাসহ বড় ধরনের প্রতিশ্রুতি থাকছে ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে।
ঐক্যফ্রন্ট সূত্র জানায়, ঐক্যফ্রন্টের শরিক বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও নাগরিক ঐক্যের একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত ইশতেহার কমিটি কয়েক দফা আলোচনা করে ইতিমধ্যে একটি খসড়া তৈরি করেছে।
আজ সোমবার খসড়া চূড়ান্ত করে স্টিয়ারিং কমিটির কাছে পাঠাবে এ কমিটি। শীর্ষ নেতাদের সম্মতির পর আনুষ্ঠানিকভাবে ইশতেহার ঘোষণা করা হবে।
ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার কমিটিতে আছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির পক্ষে মাহফুজ উল্লাহ, গণফোরামের আ ও ম শফিক উল্লাহ, জেএসডির শহীদ উদ্দিন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ইকবাল সিদ্দিকী ও নাগরিক ঐক্যের জাহেদ উর রহমান।
খসড়া ইশতেহারে বলা হয়েছে, মুঠোফোনে ইন্টারনেটের খরচ অর্ধেকে নামিয়ে আনা হবে। দেশের বিভিন্ন গণজমায়েতের স্থানে ফ্রি ওয়াই-ফাইয়ের ব্যবস্থা করা হবে। সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। সংখ্যালঘুদের ওপর যেকোনো রকম হামলার বিচার হবে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে। দেশের দারিদ্র্যপ্রবণ জেলাগুলোতে শিল্পায়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় যুদ্ধাস্ত্র এবং অন্যান্য সব সরঞ্জাম অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কেনা হবে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য কল্যাণমূলক প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, রোহিঙ্গা সমস্যাসহ অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধান করা হবে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হবে। শহরে গণপরিবহনকে প্রাধান্য দিয়ে পরিবহন নীতি প্রণয়ন করা হবে।
ক্ষমতার ভারসাম্য
ইশতেহারে বলা হয়, পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকা যাবে না। অনাস্থা ভোট এবং অর্থবিল ছাড়া অন্য যেকোনো ক্ষেত্রে দলীয় সাংসদ দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলেও তাঁদের সংসদ সদস্য পদ শূন্য হবে না, এমন সংশোধনী ৭০ অনুচ্ছেদে আনা হবে। সংসদের উচ্চকক্ষ সৃষ্টি করে বিভিন্ন দলের সদস্যসংখ্যা নির্ধারণে সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা
ক্ষমতায় এলে নিরাপত্তা আইন বাতিল করবে ঐক্যফ্রন্ট। সরকারি পদক্ষেপ এবং সরকারের পদধারীদের বিরুদ্ধে সমালোচনা, এমনকি ব্যঙ্গ-বিদ্রূপেরও অধিকার থাকবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সব গণমাধ্যমের ওপর কোনো রকম প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।
গুম, খুন, পুলিশি নির্যাতন বন্ধ
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং গুম পুরোপুরি বন্ধ করবে ঐক্যফ্রন্ট। রিমান্ডের নামে পুলিশি হেফাজতে যেকোনো প্রকার শারীরিক নির্যাতন বন্ধ করা হবে। সাদাপোশাকে কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না। বিপথগামী রাজনৈতিক কর্মীদের হাত থেকেও নাগরিকগণ সুরক্ষিত থাকবে।
চাকরির বয়সসীমা থাকবে না
সোয়া দুই কোটি তরুণ ভোটারের মন জয় করতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির বড় পরিকল্পনা নিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। পুলিশ ও সামরিক বাহিনী ছাড়া সরকারি চাকরিতে প্রবেশের কোনো বয়সসীমা রাখবে না তারা। অনগ্রসর জনগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা চালু করা হবে। ত্রিশোর্ধ্ব শিক্ষিত বেকারের জন্য বেকার ভাতা চালু করা হবে। তিন বছরের মধ্যে সব সরকারি শূন্য পদে নিয়োগ সম্পন্ন করা হবে।
দুর্নীতির বিচারে ট্রাইব্যুনাল
ন্যায়পাল নিয়োগ করা হবে এবং সংবিধান-নির্দেশিত সব দায়িত্ব পালনে ন্যায়পালকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হবে। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার ঘোষণা থাকছে ইশতেহারে। খসড়ায় বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হবে। দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা গ্রেপ্তারে সরকারের অনুমতির বিধান (সরকারি চাকরি আইন-২০১৮) বাতিল করা হবে। ব্যাংকিং খাতে ও শেয়ারবাজারে লুটপাটে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পিএসসি-জেএসসি বাতিল
পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিল করা এবং সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি থাকছে ইশতেহারে। প্রথম বছর থেকেই ডাকসুসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত, বেসরকারি শিক্ষা পুরোপুরি ভ্যাটমুক্ত এবং মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষা দিয়ে বিদেশে কর্মসংস্থান করা হবে।
কৃষক-শ্রমিকদের ন্যায্যমূল্য
ঐক্যফ্রন্ট সরকারের দায়িত্ব পেলে সব খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ এবং গার্মেন্টসসহ অন্য সব শিল্প এলাকায় শ্রমিকদের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণের মাধ্যমে আবাসনের ব্যবস্থা, কৃষি ভর্তুকি বাড়িয়ে সার বীজ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করা হবে।
অতিদরিদ্র ও দুস্থদের জন্য বিনা মূল্যে খাদ্য বিতরণ এবং বিনা মূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। বয়স্ক ভাতা, দুস্থ মহিলা ভাতা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তাদের ভাতার পরিমাণ এবং আওতা বাড়ানো হবে। শ্রমিক-খেতমজুরসহ গ্রাম ও শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সুলভ মূল্যে রেশনিং চালু করা হবে।
দায়িত্বপ্রাপ্তির এক বছরের মধ্যে মানুষকে ভেজাল ও রাসায়নিকমুক্ত নিরাপদ খাদ্য পাওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও থাকছে ইশতেহারে।
নারীর ক্ষমতায়ন
নারীর জন্য সংরক্ষিত আসনের প্রথার পরিবর্তে সরাসরি নির্বাচনের ক্ষেত্রে নারীর জন্য বাধ্যতামূলক ২০ শতাংশ মনোনয়নের বিধান করা হবে। প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হবে। ইউরোপ, জাপানসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শ্রমশক্তির রপ্তানির জন্য নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করা হবে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply