চালের উর্ধ্বমুখী দামে দেশের নাগরিক যখন হাঁসফাঁস করছে, সরকার থেকে দশ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয় কর্মসূচির ঘোষনা এলো। এই খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করলেও মজুদে টান পড়বে না বলে দাবি করছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।
গত বছরের বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশে দেশের ভেতরে ধান-চাল সংগ্রহে তেমন সফল না হলেও এবার উৎপাদনের পাশাপাশি আমদানি মিলিয়ে মজুদে রেকর্ড ছাড়ানোর আশা করছেন তিনি। তাই তিনি মনে করেন, ১০ টাকা কেজিতে বিক্রির পাশাপাশি টিআর, কাবিখার মতো কর্মসূচি বাস্তবায়নেও সমস্যা হবে না। হাওরে ফসলহানি ও উত্তরাঞ্চলে বন্যার পর গত বছরের মাঝামাঝিতে সরকারি গুদামে মজুদ তলানিতে ঠেকলে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে চাল দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার।
এরপর ব্যাপক আমদানির পর আগামী মার্চ থেকে সারাদেশে তালিকাভূক্ত ৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে আবারও ১০ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ শুরুর ঘোষণা সম্প্রতি দিয়েছে সরকার। হিসাব করলে দেখা যায়, হতদরিদ্র মানুষের জন্য এই কর্মসূচিতে প্রতি মাসে এক লাখ ৩৮ হাজার টন চাল ব্যয় হবে। ৫ মাসে প্রয়োজন হবে ৬ লাখ ৯৪ হাজার ৪৪৪ টন চাল।
পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় এ বছর ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণের কারণে গত বছরের মতো মজুদে ঘাটতি সৃ্ষ্টি হবে না বলে আশ্বস্ত করতে চাইছেন খাদ্যমন্ত্রী। তিনি রোববার বলেন, এই মুহূর্তে সরকারি খাদ্য মজুদ ১৪ লাখ টনেরও বেশি। এর মধ্যে চাল রয়েছে প্রায় ১১ লাখ মেট্রিক টন। গত জুনে সরকারি খাদ্য গুদামে চালের মজুদ দুই লাখ টনের নিচে নেমেছিল। তাতে চালের বাজারে দেখা দেয় অস্থিরতা, দাম যতটুকু বেড়েছিল, ততটুকু কমেনি এখনও। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গত ২০ ফেব্রুয়ারির তথ্য অনুযায়ী, সরকারি গুদামে মোট মজুদ ১৪ লাখ ২০ হাজার টন। এর মধ্যে চাল রয়েছে ১০ লাখ ৬১ হাজর টন। এছাড়া বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় ১ লাখ ১৪ হাজার টন খাদ্যশস্য রয়েছে, যার মধ্যে চাল ৩৬ হাজার টন চাল ও গম ৭৮ হাজার টন। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “গতবার যেহেতু বোরো সংগ্রহ করতে পারিনি তাই মজুদে একটু ঘাটতি দেখা দিয়েছিল।
এবার আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই মজুদ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। ফলে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে খাদ্য শস্যের মজুদে কোনো সঙ্কট হবে না।” ২০১৭ সালে বোরো মওসুমে (মে-অগাস্ট) মোট ৮ লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্য ধরেছিল সরকার।
তবে প্রতিকূল আবহাওয়ায় ফসল উৎপাদন কম হওয়ায় সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। সংগ্রহ হয়েছিল ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫২৫ টন সেদ্ধ ও আতপ চাল। তবে চলতি চলতি (২০১৭-২০১৮) আমন সংগ্রহ মৌসুমে গত ডিসেম্বর থেকে গত ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৬১২ টন সেদ্ধ চাল সংগৃহীত হয়েছে। আগামী ২৮ তারিখে শেষ হবে চাল সংগ্রহ অভিযান। মোট ৩ লাখ টন আমনের চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরলেও পরে তা ধাপে ধাপে বাড়ানো হয়। এর পাশাপাশি আমদানিও মজুদ সমৃদ্ধ করতে বড় ভূমিকা রাখছে বলে জানান খাদ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এখন তো আছে সাড়ে ১৪ লাখ টন চাল ও গম।
ইতোপূর্ব বিভিন্ন দেশ থেকে যে চাল কেনা হয়েছে সেগুলো এখন সাপ্লাই লাইনে। আগামী বোরো মওসুমের আগেই পাইপ লাইনে থাকা ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টন শস্য দেশে চলে আসবে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই মজুদ বেড়ে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়াবে।” বাংলাদেশে খাদ্য শস্যের এযাবৎ সর্বোচ্চ মজুদ ১৬ লাখ টন হয়েছিল বলে জানান তিনি। সামনে বোরো মওসুমে যখন নতুন করে সংগ্রহ প্রক্রিয়া শুরু হবে তখন সরকারি ভাণ্ডারে ১০ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুত থাকবে বলে জানান মন্ত্রী। সরকার সর্বশেষ আমন মৌসুমে ৩৯ টাকা দরে চাল কিনেছে। ফলে ১০ টাকা দরে চাল দিতে সরকারকে অনেক টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। কামরুল বলেন, “আমরা জানি, এই কর্মসূচি চালাতে সরকারকে মোটা অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হবে। কিন্তু গরিব মানুষের জন্য এই কর্মসূচি আমরা চালিয়ে যাব।”
এই কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের তুলনামূলক নিম্ন আয়ের মানুষগুলো কিছুটা স্বস্তিতে ফিরবে বলে আশা করা যায়।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply