বিষয়টি আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির প্রধান ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়াউল হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রশ্ন বাইরে আসার কোনও সুযোগ নেই। এখন এরকম হতে পারে কোনও পরীক্ষার্থী হয়তো ১ ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে গেছে, সে ফেসবুকে ছবি দিয়েছে। কারণ, পরীক্ষা শুরুর ১ ঘণ্টা পর যদি কেউ বেরিয়ে যেতে চায়, বের হতে দেওয়ার অনুমতি আছে। কিন্তু এভাবে প্রশ্ন আপলোড করে দিলে, এরপর থেকে তাহলে বলে দিতে হবে যে-পরীক্ষা শুরুর ১ ঘণ্টা পর যারা বের হবে তাদের কাছ থেকে প্রশ্ন রেখে দেওয়ার জন্য। তারা প্রশ্ন নিয়ে পরীক্ষার হল থেকে বের হতে পারবে না। এটা করা যেতে পারে।
এদিকে সারাদেশের কোথাও কেউ প্রশ্নফাঁসের অপচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শনিবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আশকোনায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে এ কথা জানান তিনি।
পরীক্ষা শুরুর আগ মুহূর্তে প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আশা করছি সারাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে সব পরীক্ষা সম্পন্ন হবে। আমরা শিক্ষক, অভিভাবক ও পরীক্ষার্থী সবার কাছে পূর্ণ সহযোগিতা আশা করছি।’
প্রশ্নফাঁসের আশঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সারাদেশের কোথাও এই ধরনের তথ্য পেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই এবারও প্রশ্নফাঁস ও নকলমুক্ত পরীক্ষা হোক। এখন পর্যন্ত ভালোভাবেই হচ্ছে। কোথাও কোনও নেতিবাচক খবর পাইনি। আমি আবারও বলছি, গত বছর কোনও প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। এ বছরও সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করছি। এবার আরও জোরদার করা হয়েছে যেন প্রশ্নফাঁস না হয়। তীক্ষ্ণ গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কোনও অপচেষ্টার প্রমাণ পেলে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। আশাকরি দেশের কোথাও কেউ এ ধরনের অপচেষ্টায় যুক্ত হবেন না। কেউ অপচেষ্টায় যুক্ত হয়েছেন এমন তথ্য পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। অভিভাবক, শিক্ষক ও পরীক্ষার্থী কেউ কোনও ধরনের অপপেষ্টার সঙ্গে যুক্ত হবেন না। চাহিদা না থাকলে প্রশ্নফাঁস করার কোনও আগ্রহ থাকবে না। কাজেই সবাইকে এটা পালন করতে হবে।’
এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার আগে থেকেই তৎপর শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা। তবে মন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক বক্তব্যের পর শিক্ষা বোর্ডগুলো পরীক্ষা চলাকালে বাড়তি সতর্ক ব্যবস্থা হাতে নিয়েছে। এবার প্রশ্ন ফাঁস এবং নকল রোধে কঠোর নীতি অবলম্বন করছে শিক্ষাবোর্ড। এবার প্রশ্নপত্রের সেট অনেক বেশি। তবে এবার কত সেট ছাপা হবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য কাউকে জানানো হয়নি।
শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পরীক্ষার আগেই জেলা প্রশাসকদের কাছে প্রশ্নপত্র পৌঁছে দেওয়া হবে। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে জেলা প্রশাসকদের মোবাইল নম্বরে সংশ্লিষ্ট জেলার প্রশ্ন সেট জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ীই কেন্দ্র সচিবদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে নির্দিষ্ট প্রশ্নপত্র। সারাদেশে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে। প্রয়োজনে ভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে আরও জানা গেছে, মডারেটরদের আলাদা আলাদাভাবে প্রশ্ন চূড়ান্ত করার পর সিলগালা করে বোর্ডের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করেন। সিলগালা অবস্থায়ই প্রশ্নপত্র পাঠানো হয় আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সাব কমিটির প্রধান ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে। অন্য শিক্ষাবোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানরাও জানতে পারবেন না কোন সেট ছাপা হচ্ছে। প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে এবার সিকিউরিটি টেপ ব্যবহার না করে আরও আধুনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রশ্নফাঁস রোধে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপারের খামে প্রশ্নপত্র পাঠানো হবে প্রতিটি কেন্দ্রে। খাম খোলা হলে ধরা পড়ে যাবে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
এই প্রশ্ন ‘ফাঁস’ করার উদাহরণ দেখিয়ে পরবর্তী পরীক্ষার প্রশ্নের জন্য টাকাও চাওয়া হচ্ছে।