নব্বইয়ের দশক থেকে থেকে গতকাল পর্যন্ত বহু যুবকের রাতের ঘুম হারাম করেছেন তার অপরূপ সৌন্দর্য ও গুণমুগ্ধ অভিনয়ের মাধ্যমে। হিন্দি ছবির প্রথম সুপারস্টার নায়িকা হিসেবে ধরা তাকে। শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয়ের শুরু এই প্রতিভাবান অভিনেত্রী আর কেউ নন,তিনি বলিউডের নাগিন কন্যা শ্রীদেবী।নব্বই এর দশকে দাপটের সাথে অভিনয় করা অপরূপ সৌন্দর্যের এই মানুষ টি গতকাল ভারতীয় সময় রাত ১১ টায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।
পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য মুম্বাই থেকে উড়ে গিয়েছিলেন দুবাইয়ে। মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা আগেও তিনি সবার সাথে মজা করেছেন, আনন্দ ফূর্তিতে মেতে ছিলেন কিন্তু হটাৎ করে ই হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে ৫৪ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন।
এক নজরে শ্রীদেবী:
জন্মনাম : শ্রী আম্মা ইয়াংগার আয়াপ্পাঁ।
জন্ম তারিখ : ১৯৬৩ সালের ১০ আগস্ট, শিবাকাসি, তামিলনাড়ু, ভারত
মৃত্যু : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ( ৫৪ বছর)
জাতীয়তা : ভারতীয়
নাগরিকত্ব : ভারত
পেশা : অভিনেত্রী, প্রযোজক
কার্যকাল : ১৯৬৭-১৯৯৭ এবং ২০১২-২০১৮
ধর্ম : হিন্দুধর্ম
দাম্পত্য সঙ্গী : মিঠুন চক্রবর্তী (১৯৮৫-১৯৮৮)
বনি কাপুর ( ১৯৯৬)
সন্তান : জাহ্নবী কাপুর,খুশি কাপুর
পুরস্কার : পদ্মশ্রী
ব্যক্তিগত জীবন:
তামিলনাড়ুতে ১৯৬৩ সালের ১০ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন এই বলিউড সুন্দরী। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুইবার বিয়ে করেন। ১৯৮৫ সালে প্রথমবারের মত বিয়ে করেন বাংলার সুপারস্টার মিঠুন চক্রবর্তী কে। সেই বিয়ে বেশী দিন টিকতে পারে নি। মাত্র ৩ বছর পর ই তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে বলিউডের প্রভাবশালী কাপুর খানদানের সদস্য প্রযোজক বনি কাপুর কে বিয়ে করেন। ১৯৯৬ সাল থেকে যে ভালোবাসার বন্ধন অটুট ছিল গতকাল ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। শ্রীদেবী ও বনি কাপুরের দুই টি মেয়ে রয়েছে,জাহ্নবী কাপুর ও খুশি কাপুর। অন্যান্য পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে আছেন সৎ ছেলে অর্জুন কাপুর,সৎ মেয়ে অনুশুলা কাপুর,ভাসুর অনিল কাপুর ও সঞ্জয় কাপুর।
কর্মজীবন:
কর্মজীবনে শ্রীদেবী ছিলেন বেশ সফল। সর্বপ্রথম ১৯৬৭ সালে মাত্র চার বছর বয়সে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন। ১৯৭৯ সালে সোলভা সাওয়ান মুভির মাধ্যমে শ্রীদেবীর বলিউডে অভিষেক ঘটে। প্রথম ছবির পরে ১৯৮৩ সালে বিখ্যাত অভিনেতা জিতেন্দ্রের সাথে জুটি বাঁধেন হিম্মতওয়ালা ছবিতে। হিম্মতওয়ালা ছিল সেই বছরের সবচেয়ে সুপারহিট মুভি। শ্রীদেবীর – জিতেন্দ্রের হিম্মতওয়ালা মুভির ” ন্যায়নো মে সাপনা” গানটি প্রচুর জনপ্রিয়তা লাভ করে,যা আজও বর্তমান। মূলত এই একটি ছবি শ্রীদেবীর ভিত কে শক্ত করে দেয় মুম্বাই এর চলচ্চিত্র অঙ্গনে। এই ছবিটির রিমেক করেন অজয় দেবগন।
১৯৮৩ সালে শ্রীদেবী অভিনীত তামিল ছবি মুন্দাম পিরাই ছবিটির রিমেক তৈরি হয় বলিউডে,সেই ছবির নাম দেওয়া হয় ‘সাদমা’। ‘সাদমা’ ছবির মাধ্যমে শ্রীদেব সমালোচকদের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হন। পরের বছর তার অভিনীত তোহফা ছবিটি মুক্তি পায়, এই ছবিটি শ্রীদেবী কে নিয়ে যায় অনন্য এক উচ্চতায়। তাকে ফিল্মফেয়ার এর পক্ষ থেকে নাম্বার ওয়ান নায়িকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
জিতেন্দ্র – শ্রীদেবী জুটি বেঁধে মোট ১৬ টি ছবিতে অভিনয় করেন। এই ১৬ টি ছবির মধ্যে মাত্র ৩ টি ফ্লপ হয় বাকি সব ছবি গুলো ব্লকবাস্টার মুভি হিসেবে খেতাব পায়। এই ১৩ টি মুভির মধ্যে রয়েছে হিম্মতওয়ালা, জানি দোস্ত (১৯৮৩), জাস্টিস চৌধুরী (১৯৮৩), মাওয়ালী (১৯৮৩), আকালমন্দ (১৯৮৪), বলিদান (১৯৮৫), সুহাগন (১৯৮৬), ঘর সংসার (১৯৮৬), ধর্ম অধিকারী (১৯৮৬), অউলাদ (১৯৮৭), সোনে পে সুহাগা (১৯৮৮)। ৩টি ফ্লপ চলচ্চিত্র হল সারফারোশ (১৯৮৫), আগ অউর শোলা (১৯৮৬) ও হিম্মত অউর মেহনত (১৯৮৭)।
১৯৮৬ সালে শ্রীদেবী সাপ নিয়ে কাল্পনিক মুভি নাগিনায় অভিনয় করেন। এই ছবিতে তিনি ছিলেন ইচ্ছাকৃত এক নাগিন, যে চাইলে সাপ থেকে মানুষ এবং মানুষ থেকে সাপ হতে পারতেন। অত্যন্ত জনপ্রিয় ও ব্যবসা সফল এই ছবি থেকে শ্রীদেবীর নাম হয়ে যায় নাগিন কন্যা। তার এই নাম হওয়ার পিছনে অন্যতম একটি কারন ছিল তিনি অনেক গুলো ছবি তে নাগিনের চরিত্রে অভিনয় করেছে এবং তিনি সর্প নৃত্যে খুব ই পারদর্শী ছিলেন। তিনি মোট ১২৬ টি মুভিতে অভিনয় করেছেন। ১২৬ টি বিভিন্ন ভাষার মুভির মধ্যে সেরা ১০ টি মুভি হচ্ছে-
১. ‘সাদমা’
২. নাগিনা
৩. মিস্টার ইন্ডিয়া
৪. চাঁদনি
৫. চালবাজ
৬. লামহে
৭. খুদা গাওয়া
৮. গুমরাহ্
৯. জুদাই
১০. ইংলিশ ভিংলিশ
মৃত্যু:
২৪ শে ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে শ্রীদেবী তার স্বামী বনি কাপুর ও মেয়ে খুশি কাপুরের সাথে দুবাইতে ভাগিনা মোহিত মারওয়া এর বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের মধ্যেই হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে মারা যানা গুণী মারা যানা এই অভিনেত্রী। তার মৃত্যুর খবরে পুরো বলিউড জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
পুরষ্কার:
পদ্মশ্রী পুরস্কার (২০১৩)
ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেত্রী পুরস্কার
১৯৯০,১৯৯১,১৯৯২,১৯৭৭,১৯৮২
এছাড়াও আরো অনেক পুরষ্কার তিনি পেয়েছেন।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply