বছরে ৫ কোটি মার্কিন ডলার আয়ের টার্গেট নিয়ে বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড(বিসিএসসিএল) বাণিজ্যিক বিপণনের কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে দেশের মধ্যে সেবা দিতে বিসিএসসিএল নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি হয়েছে। চুক্তির ফলে স্যাটেলাইট থেকে নৌযানে অত্যাধুনিক ও নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন হবে।
অল্প দিনের মধ্যে দেশের আরও কয়েকটি দফতরের সঙ্গে বিসিএসসিএলের চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। এর বাইরে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, কাজাকিস্তান এবং উজবেকিস্তানের সঙ্গে বিসিএসসিএল যোগাযোগ করে যাচ্ছে। এসব দেশের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়াও পাওয়া গেছে।
স্যাটেলাইট থেকে সিগন্যাল পুরোদমে আসা শুরু হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ টেলিভিশন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পরীক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচার শুরু করেছে। অক্টোবর থেকে বেসরকারী টেলিভিশন গুলো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে চলবে। বিসিএসসিএল চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড.শাহাজাহান মাহমুদ এসব তথ্য জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড(বিসিএসসিএল) চেয়ারম্যান শাহাজাহান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট পুরোপুরি প্রস্তুত হয়েছে। স্যাটেলাইট থেকে সেবা নিয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশন পরীক্ষামূলক সম্প্রচারে গেছে। অক্টোবর থেকে বেসরকারী টেলিভিশনগুলো বাণিজ্যিক ভাবে সেবা দেয়া শুরু করবে। এ ছাড়া কয়েকটি দেশের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হযেছে।
ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, কাজাকিস্তান এবং উজবেকিস্তানে আমাদের স্যাটেলাইটের বড় বাজার রয়েছে। অনেক দেশেরই কোন স্যাটেলাইট নেই। তাদের টেলিকম ও কেবল টিভির জন্য আমাদের স্যাটেলাইটের প্রয়োজন হবে। আমরা এখন থেকেই চেষ্টা করব ও সব দেশে ‘মার্কেটিং’ করার।
উল্লিখিত দেশ গুলোতে মার্কেটিং করতে পারলে বছরে দেশের আয় হবে ৫ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি। বিসিএসসিএল চেয়ারম্যান বলেন, দেশের টেলিযোগাযোগ ও স্যাটেলাইট টিভির ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বড় ভূমিকার পাশাপাশি দেশের জ্ঞান বিজ্ঞানের অগ্রগতি ঘটবে। দুটি বিষয় মাথায় রেখে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।
একটি দেশের টেলিযোগাযোগ সুবিধা ও জ্ঞান বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হওয়া অন্যটি বাণিজ্যিক দিক। বাণিজ্যিক দিক নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। স্যাটেলাইটের ২০টি ট্রান্সপন্ডার ভাড়া দিয়ে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে। আমরা স্যাটেলাইটকে টাকার অঙ্ক দিয়ে বিচার করছি না। এটা বাংলাদেশের মর্যাদার একটি বিষয়। মর্যাদা কখনও টাকা দিয়ে কেনা যায় না।
পৃথিবীর ৫৭টি দেশের কাতারে এখন বাংলাদেশ। যারা স্যাটেলাইট নিয়ে বিরূপ কথা বলছেন তারা অল্প দিনের মধ্যে স্যাটেলাইটের সুফল পেতে শুরু করবেন। তখন আর তাদের কিছু বলার থাকবে না। টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, কেউ কেউ দাবি করেছিলেন, এই স্যাটেলাইটের মালিকানা নাকি দুই ব্যক্তি নিয়ে নিয়েছেন।
আজকে আমাদের স্যাটেলাইট কোম্পানি চুক্তি স্বাক্ষর করার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছে এটি বাংলাদেশের জনগণের সম্পদ। অনেকে এ কথা ও বলেছিলেন, স্যাটেলাইট বানাইছো কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। এই কথাটির জবাব সম্ভবত আজকে আমরা দিতে পারছি। এই পারাটা আমাদের জন্য অনেক গৌরবের। স্যাটেলাইট কোম্পানির সঙ্গে সর্বপ্রথম নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি হয়েছে।
এ জন্য আমরা সবচেয়ে বেশি গর্বিত। অভ্যন্তরীণ নৌপথে ও সাগরে যেসব নৌযান চলাচল করবে সে গুলোর অবস্থান, গতিবিধি এবং সার্বিক অবস্থা আমরা জানতে পারব স্যাটেলাইটের সেবা গ্রহণের মাধ্যমে। পুরনো তিনটি লাইট হাউস আধুনিকায়নের সঙ্গে আরও সাতটি লাইট হাউস করছি। এখন আমরা বিদেশে স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজ শুরু করেছি।
আশা করি, এ বছরের মধ্যে কয়েকটি দেশের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হবে। উল্লেখ্য, এ বছরের ১২ মে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সফল উৎক্ষেপণ হয়। ২৩ মে স্যাটেলাইটটি এর জন্য নির্দিষ্ট জিওস্টেশনারি স্পট ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রী পূর্ব অবস্থানে পৌঁছায়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এ মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি কেইউ-ব্যান্ড ও ১৪টি সি-ব্যান্ডের।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর ইন অরবিট টেস্ট(আইওটি) সফল ভাবে শেষ হয়েছে এবং বর্তমানে এর নেটওয়ার্ক এ্যাকসেপটেন্স রিভিউ(এনএআর) চলছে। আমরা মনে করি, মহাকাশ জয়ের পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে বাণিজ্যিক দিক থেকে ব্যবহারের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা’ খুবই আশা ব্যঞ্জক।
আমরা গঠিত বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড(বিসিএসসিএল) এর অগ্রযাত্রা সফল হোক সে প্রত্যাশা করি।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply