রাজশাহীর বাঘায় সাংবাদিক এসএম সেলিম আহম্মেদ ভান্ডারীর (৩৪) রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে সেলিম আহম্মেদ ভান্ডারীর বন্ধু শ্রী রনি সরকারের (৩৫) মৃত্যু হয়। বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশের বরাদ দিয়ে জানিয়েছেন বাঘা থানার ওসি মহাসীন আলী। এ ঘটনায় মাজেদুর রহমান নামে এক হোমিও চিকিৎসককে আটক করেছে পুলিশ।
সেলিম ভান্ডারি বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম এলাকার মৃত শামসুল ইসলাম ভান্ডারীর ছেলে। তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক যায়যায়দিন এবং রাজশাহী থেকে প্রকাশিত দৈনিক আমাদের রাজশাহী পত্রিকার বাঘা উপজেলা প্রতিনিধি। এছাড়া তিনি একাত্তর টিভির বাঘা সংবাদদাতা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অপরজন রনি সরকার সাংবাদিক সেলিমের বন্ধু। তিনি পার্শ্ববর্তী আটঘরি এলাকার শ্রী সূর্যের ছেলে।
নিহত সাংবাদিক সেলিম ভান্ডারির চাচা কায়েম উদ্দিন জানান, ‘বুধবার রাতে বাসায় ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়ে সেলিম। বৃহস্পতিবার (৩১-০১-১৯) বেলা ১০টার দিকে তার শারিরীক অবস্থান অবনতি হলে প্রথমে বাঘা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এরপর রামেক হাসপাতালে নিলে রাত সাড়ে ১০টায় ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে তার মৃত্যু হয়।
সেলিম ভান্ডারীর স্ত্রী সোনিয়া জানায়, ‘তার স্বামী মারা যাওয়ার আগে বুধবার রাতে মনিগ্রাম বাজারের নিরাময় হোমিও হলে তার বন্ধু রনি এবং মিঠুনের সঙ্গে বসে রেকটিফায়েড স্পিরিট সেবন করে। সে কথা আমাকে জানায়। এরপর থেকে তার শরীর খারাপ হতে থাকে। ঘটনার এক পর্যায়ে আমরা সকালে সেলিমকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিছু সময় পর লোকমুখে শুনতে পাই আমার স্বামীর বন্ধু রনি সরকার মারা গেছেন।আমরা ধারণা করছি, ওই স্পিরিটের সঙ্গে বিষাক্ত কিছু খাওয়ানো হয়েছিল।’
এদিকে মিঠুনকেও (৩৬) বৃহস্পতিবার স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। মিঠুন সাংবাদিকদের জানান, রনি মারা যাওয়ার খবর পেয়ে তিনি সকালে তাকে দেখতে যান। এরপর আকষ্মিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার পিতা গণি প্রাং তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানান। তবে হোমিও ডাক্তার মাজেদুল পুলিশ এবং স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ঘটনার সময় মিঠুনও তার দোকানে উপস্থিত ছিলো।
বাঘা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মহাসীন আলী জানান, ‘সাংবাদিক সেলিম ভান্ডারী ও রনি বুধবার রাতে মনিগ্রাম বাজারের নিরাময় হোমিও হল ফার্মাসিতে বসে অতিমাত্রায় এ্যালকোহল মিশ্রিত (স্পিরিট) পান করেন। এরপর তারা বাড়ি ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়ে। শুক্রবার সকালে নিজ বাড়িতে রনি সরকার মারা যায়। অপর দিকে সাংবাদিক সেলিমকে বাঘা হাসপাতাল থেকে রামেক হাসপাতালে নিলে রাত ১১টার দিকে তিনিও মারা যান।
ওসি আরো বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্ত, চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যদের কাছে দেওয়া সেলিম ভান্ডারীর জবানবন্দি এবং সুরতহাল প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে মনিগ্রাম বাজারের নিরাময় হোমিও হলের মালিক ও হোমিও চিকিৎসক মাজেদুর রহমানকে শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে মনিগ্রামের নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয়। একই সঙ্গে তার হোমিও হল থেকে এক কার্টুন এ্যালকোহলসহ মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ উদ্ধার করা হয়েছে।’
সাংবাদিক সেলিম আহম্মেদের অকাল মৃুত্যুতে সমবেদনা জানিয়েছেন বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা, প্রেস ক্লাবের সকল সাংবাদিকবৃন্দ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল, উপজেলা শিক্ষক সমিতি, উপজেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন সামাজিক ও স্বোচ্ছাসেবী সংগঠন।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply