বেগুন বাজারে দুরকম রঙের পাওয়া যায়-সাদা ও বেগুনি। বেগুনি বা কালো বেগুনের গুণ অনেক বেশি। বেগুন যত কচি হবে তাতে গুণ তত বেশি থাকবে। এই রকম কচি বেগুন খেলে শরীরের বল বৃদ্ধি পাবে। অত্যাধিক বীজযুক্ত বেগুন বিষের মতো ক্ষতিকর বলে মনে করা হয়। সংস্কৃত শ্লোকেই আছে বৃন্তাকং বহু বীজাণাং বিষম। বৃন্তাক অর্থাৎ বেগুন বেশি বীজযুক্ত হলে বিষ।
বসন্তকালে বেগুন খাওয়া ভাল। এতে কফ নাশ হয়। হিং ফোড়ন দিয়ে বেগুনের তরকারি তেল দিয়ে রান্না করলে ও খেলে যাঁদের বায়ুর প্রকোপ বেশি তাঁদের উপকার হবে। যাঁদের কফের প্রকোপ বেশি তাঁদের ও শীতকালে হিং ফোড়ন দেওয়া ও তেলে রান্না করা কচি বেগুনের তরকারি নিয়মিত খেলে সর্দিকাশি কমবে। এছাড়া বেগুনের আর ও একটি গুন হল বেগুন মূত্রবর্ধক। মূত্রকৃচ্ছ্রতা অর্থাৎ প্রস্রাব কম হলে কচি বেগুনের তরকারি তেল ও হিং ফোড়ন দিয়ে রান্না করা বা বেগুন পোড়া খেলে প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়বে।
বেগুন মধুর, তীক্ষ্ণ ও উষ্ণ। পিত্তনাশক, জ্বর কমায়, খিদে বাড়ায়। পরিপাক করা সহজ এবং পুরুষত্ব বৃদ্ধি করে অর্থাৎ বীর্যবর্ধক। সুকোমল অর্থাৎ কচি, নরম বেগুন ভোজনের দিক থেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ এবং শরীরের সব দোষই দূর করে। বেগুন পোড়া যদিও একটু পিত্তের প্রকোপ করতে পারে কিন্তু খুব সহজেই হজম হয়, ও খিদে বাড়ায়। মেদ বৃদ্ধি রোধ করে। যাঁরা মোটা হতে চান না তাঁদের পক্ষে বেগুন পোড়া খাওয়া সেইজন্যে ভাল। আমাশা হলে ও বেগুন পোড়া খেলে উপকার পাওয়া যেতে পারে। অবশ্য বেগুন পোড়া বা বেগুনের তরকারিতে অতিরিক্ত, তেল আর নুন দিলে তা কিছুটা গুরুপাক হয়ে যায়। সঠিক পরিমাণ মতো তেল দিয়ে রান্না করলে বা বেগুন পোড়া মাখলে তা খেলে শরীর স্নিগ্ধ হয়। বেগুন ও টোম্যাটো দিয়ে স্যুপ রান্না করে খেলে মন্দাগ্নি অর্থাৎ খিদে না পাওয়ার অস্বস্তি দূর হয় শরীরে নতুন করে আমাশার আম সৃষ্টি হওয়া ও বন্ধ হয়ে যায়।
সুস্থ থাকতে বেগুন:
১। কচি বেগুন পুড়িয়ে রোজ সকালে খালি পেটে একটু গুড় মিশিয়ে খেলে ম্যালেরিয়ার দরুণ লিভার বেড়ে যাওয়া কমে।
২। লিভারের দোষের জন্যে যদি চেহারায় হলদেটে ভাব আসে সেটাও ক্রমশ কমে যায়।
৩। যাঁদের ঘুম ভাল হয় না তাঁরা যদি একটু বেগুন পোড়ায় মধু মিশিয়ে সন্ধ্যেবেলা চেটে চেটে খান তাহলে তাঁদের রাত্তিরে ভাল ঘুম হবে।
৪। বেগুনের তরকারি, বেগুন পোড়া, বেগুনের স্যুপে রোজ যদি একটু হিং ও রসুন মিশিযে খাওয়া যায় তাহলে বায়ুর প্রকোপ তো কমেই সে কথা আগেই বলা হয়েছে। যদি কারো পেটে বায়ু গোলকের সৃষ্টি হয়ে থাকে সেটাও কমে যায় বা সেরে যায়।
৫। মহিলাদের ঋতু ঠিক মতো না হলে বা কোনো কারণে বন্ধ হয়ে গেলে তাঁরা যদি শীতকালে ডনয়ম করে বেগুনের তরকারি বাজরার রুটি এবং গুড় খান তাহলে উপকার পাবেন। অবশ্য যাঁদের শরীরে গরমের ধাত বেশি তাঁদের পক্ষে এটা না খাওয়াই ভাল।
৬। নিয়মিত বেগুন খেলে মূত্রকৃচ্ছ্রতা সারে একথা আগেই বলা হয়েছে।
৭। প্রস্রাব পরিষ্কার হওয়ায় প্রারম্ভিক অবস্থার কিডনির ছোট পাথর ও গলে গিয়ে প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়।
৮। মুরগির ডিমের সাইজের ছোট গোল সাদা বেগুন অর্শের পক্ষে উপকারী।
৯। বেগুনের পুলটিস বাঁধলে ফোড়া তাড়াতাড়ি পেকে যায়।
১০। বেগুনের রস খেলে ধতুরোর বিষ নেমে যায়।
বৈজ্ঞানিকদের মতে : বেগুনে কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, প্রেটিন এবং কিছু কিছু লবণ কম বা বেশি মা্ত্রায় আছে। এতে ভিটামিন এ, বি, সি ও লোহাও আছে। খাদ্যগুণ ও ভিটামিন বেশি থাকায় এবং দামেও সস্তা হওয়ায় বেগুন নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ এস এস
Leave a Reply