বিপিএলে সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর কত? মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার বোলিং তাণ্ডব দেখে কুমিল্লার সমর্থকরা হয়তো মনে মনে তাই আওড়াচ্ছিলেন। কেননা কে-ই বা চাইবে নিজের প্রিয় দলকে সর্বনিম্ন রানে অলআউট হতে দেখে। না শেষ পর্যন্ত বিপিএলে খুলনার গড়া সর্বনিম্ন ৪৪ রানে অলআউট হতে হয়নি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে। শহীদ আফ্রিদির ২৫ রানের সুবাদে শেষতক ৬৩ রানে শেষ হয় কুমিল্লার ইনিংস।
বিপিএল ইতিহাসে কুমিল্লা সর্বনিম্ন রানে অলআউট না হলেও, চিটাগংয়ের বিপক্ষে রংপুরের করা ৯৮ রানের সর্বনিম্ন স্কোরকে দ্বিতীয়তে ঠেলে দিয়ে দিয়ে এই আসরে এখন সবচেয়ে কম রানে অলআউট হওয়ার বাজে রেকর্ড কুমিল্লার।
পুরো ম্যাচ জুড়েই শেরে বাংলার দর্শকরা আজ দেখেছে মাশরাফী ঝলক। আর তার করা টানা চার ওভারই মূলত গুঁড়িয়ে দিয়েছে কুমিল্লাকে।
তামিমকে দিয়ে শুরু, নিজের করা শেষ ওভারে কুমিল্লার অধিনায়ক স্টিভ স্মিথকে ফিরিয়ে ধ্বংস-লীলার শেষ টানেন রংপুর অধিনায়ক। তামিমকে (৪ রান) হাফ বলি দিয়ে মিড-অনে ক্যাচ দিয়ে ফিরতে বাধ্য করেন মাশরাফী। এরপর ইমরুল কায়েস (২ রান) ফেরত যান ডিপ ব্যাকওয়ার্ড অঞ্চলে রবি বোপারের হাতে দুর্দান্ত এক ক্যাচ দিয়ে। একই ওভারে মাশরাফী সাজঘরে পাঠান ৮ রান করা ক্যারিবীয় এভিন লুইসকে। স্পেলের শেষ ওভারেও হাত খালি রাখেননি মাশরাফী। এক কাপ্তান ফেরালেন আরেক কাপ্তানকে। স্টিভ স্মিথকে শূন্য রানে সাজঘরের পথ দেখিয়ে চারবার বিপিএলের শিরোপা হাতে তোলা মাশরাফী।
টানা চার ওভারে বোলিংয়ে মাশরাফীর স্পেলটাও ছিল দেখার মতন- ৪ ওভারে ১ মেইডেনে মাত্র ১১ রান দিয়ে ২.৭৫ ইকোনমি রেটে ৪ উইকেট! যা টি-২০ ক্রিকেটে তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার।
মাশরাফীর বোলিং তোপে উপরের দিকের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাওয়ায় আর ম্যাচে ফেরা হয়নি কুমিল্লার। মাশরাফীর পর কুমিল্লার ব্যাটিং লাইনআপ ধ্বংস করার বাকি কাজটুকু সারেন রংপুরের বাকি বোলাররা। শোয়েব মালিককে শূন্য রানে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন আরেক পেসার শফিউল ইসলাম। দলের বাকিদের ব্যর্থতায় সুযোগ পেয়েও কাজে পারেননি জাতীয় দলে ব্রাত্য বনে যাওয়া এনামুল হক। মাত্র ২ রান করে ফরহাদ রেজার বলে তামিমের মতো মিড-অনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।
কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলা আফ্রিদি যখন ব্যক্তিগত ২৫ রানে ফিরে যান, তখনই মূলত তিন অংকের ছোঁয়া আকাশ-কুসুম ভাবনায় পরিণত হয়ে যায় স্মিথের দলের জন্য। আফ্রিদিকে ফেরান নাজমুল ইসলাম অপু। আফ্রিদির পর মেহেদী হাসান (৬) এবং আবু হায়দার রনিকেও নিজের শিকারে পরিণত করেন অপু।
কুমিল্লার ছোড়া মামুলি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মিরপুরের আনপ্রেডিক্টেবল পিচে ৬৯ বল খেলতে হয় রংপুরকেও। বাংলাদেশে পা দিয়ে ছাড়পত্রের কাগজ হাতে না পাওয়ায় খুলনার বিপক্ষে আগের ম্যাচ খেলা হয়নি ক্রিস গেইলের। তবে আজ মাঠে নামতে আর কোনো বাঁধা ছিলনা এই ক্যারিবীয় দানবের সামনে। মাঠে নেমে অবশ্য চিরচেনা সেই গেইলকে দেখা যায়নি আজ। আবু হায়দার রনির বলে রানের খাতা খুলেই বিদায় নেন তিনি।
গেইলের দ্রুত বিদায়ে জয় পেতে অবশ্য বেগ পেতে হয়নি রংপুরকে। দক্ষিণ আফ্রিকার রাইলি রুশোকে (২০ রান) সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশি মেহেদী মারুফ জয় নিয়েই মাঠ ছাড়েন। মেহেদী মারুফ অপরাজিত থাকেন ম্যাচ সর্বোচ্চ ৩৬ রান করে। আর ৯ উইকেটের বিশাল জয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে চলে এল বর্তমান ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ৬৩/১০, ওভার: ১৬.২ (শহীদ আফ্রিদি ২৫, এভিন লুইস ৮; মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ৪/১১, অপু ৩/২০)
রংপুর রাইডার্স: ৯৭/১, ওভার: ১২ (মেহেদী মারুফ ৩৬, রাইলি রুশো ২০; রনি ১/১১)
ম্যাচ সেরা: মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা (রংপুর রাইডার্স)
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply