হালের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। এই জনপ্রিয়তার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশে দেশে হিংসা-বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে ফেসবুক। জাতিগত বিদ্বেষ ছড়িয়ে দাঙ্গা লাগাচ্ছে। ইন্ধন জোগাচ্ছে গণহত্যায়। এরপর সুযোগ বুঝে ‘ভুল স্বীকার’ করে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছে। একবার-দুইবার নয়। বারবার।
আর এভাবেই ভয়াবহ ওই সব ঘটনায় সহজেই দায়মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি শ্রীলংকায় ঘটে যাওয়া বৌদ্ধ ও মুসলিমদের মধ্যকার দাঙ্গায় একইভাবে ক্ষমা চেয়েছে মার্ক জাকারবার্গের ফেসবুক। ভুয়া খবর ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোয় ফেসবুকের ভূমিকা নিয়ে লন্ডনে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বিশেষ এক শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
মঙ্গলবার ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, আয়ারল্যান্ড, লাটভিয়া, আর্জেন্টিনা ও সিঙ্গাপুরের আইনপ্রণেতাদের নিয়ে গঠিত ‘ইন্টারন্যাশনাল গ্রান্ড কমিটি’তে ক্ষমা প্রার্থনা করেন ফেসবুকের নীতি নির্ধারণ বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট রিচার্ড অ্যালান।
এর আগে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়েছে ফেসবুক। যার ফলে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সংঘবদ্ধ বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর হাতে ঘটেছে রোহিঙ্গাদের গণহত্যার ঘটনা। পরে ওই ঘটনায়ও ‘ভুল স্বীকার’ করে ক্ষমা চান মার্ক জাকারবার্গ। খবর দ্য গার্ডিয়ান ও রয়টার্সের।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ২০০৪ সালে কার্যক্রম শুরুর পর নানা ইস্যুতে প্রথম থেকেই বারবার বিতর্কে জড়িয়েছে ফেসবুক। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। এর মধ্যে ভুয়া খবর ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোসহ হিংসা-বিদ্বেষ ও বর্ণবাদ উসকে দেয়ার অভিযোগই প্রধান।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী ও স্থানীয় বৌদ্ধরা। ঘরবাড়ি হত্যা জ্বালিয়ে দেয়। হত্যা করে নারী ও শিশুসহ হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে। এই গণহত্যা সেখানে হঠাৎ করেই ঘটেনি। ফেসবুকের বিদ্বেষপূর্ণ শত শত পোস্টের মাধ্যমে কয়েক বছর ধরে এর প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয়েছিল। ঘটনা শেষে ঘৃণা ছড়াতে নিজেদের ভূমিকা স্বীকার করে নেয় ফেসবুক।
এরপর চলতি বছরের মার্চ মাসে ফের শ্রীলংকায় ঘটে সেই একই ঘটনা। ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে দেশটির মুসলিমদের হত্যার ডাক দেয় কট্টরপন্থী বৌদ্ধভিক্ষুরা। শুরু হয় ভয়াবহ দাঙ্গা যাতে নিহত হয় বেশ কয়েকজন। ধ্বংস হয়ে যায় তাদের বাড়ি-ঘর। দাঙ্গা থামাতে ফেসবুক থেকে বিদ্বেষপূর্ণ পোস্ট সরিয়ে নিতে শ্রীলংকার সরকারের অনুরোধ সত্ত্বেও তাতে কান দেয়নি ফেসবুক ব্যবস্থাপনা কমিটি।
শ্রীলংকার দাঙ্গায় ফেসবুকের ভূমিকা নিয়ে মঙ্গলবার লন্ডনে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এক বিশেষ করে ভুয়া ও মিথ্যা বিরোধী যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক কমিটি। শুনানিতে ফেসবুকের রিচার্ড অ্যালান স্বীকার করেন, শ্রীলংকায় মুসলিমবিরোধী বিদ্বেষ ছড়াতে ভূমিকা ছিল ফেসবুকের।
ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা সহ সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন বিদ্বেষ মূলক পোষ্ট কিংবা ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে সচেতন হতে হবে। প্রতিবার একইরকম ভুল করে ক্ষমা চাইবার চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি :/ সাহাজুল ইসলাম
Leave a Reply