এম আজহারুল হক আরজু তার ফেইসবুকে লিখেন, ‘মিশরের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুসলিম ব্রাদার হুড নেতা ড. মোহাম্মদ মুরসি আজ আদালতে ইন্তেকাল করেছেন। তার আগে চলে গেলেন সাদ্দাম এবং গাদ্দাফী। এরা শুধু তাদের নিজ দেশের নেতা ছিলেন না। ছিলেন সমগ্র আরব জাহানের নেতা। মুরসির মৃত্যুতে দুনিয়ার সকল মুসলমানের নয়নে জল আসবে কিনা জানি না, তবে অকাতরে কাঁদবে ফিলিস্তিনের গাজা এবং জেরুজালেমবাসী। তাদের পরীক্ষিত বন্ধু ছিলেন এই মুরসি। অনেকেই মুরসির এই দুনিয়াত্যাগ কে মৃত্যু বললেও আমি বলবো নীরব হত্যাকাণ্ড। মিশরের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আমেরিকা এবং ইসরাইলের পুতুল সরকার ফাত্তাহ সিসি এই হত্যাকাণ্ডের খলনায়ক। মিশরে তাহার ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে আমেরিকা ইসরাইলকে খুশী রাখতে মুরসিকে দীর্ঘদিন কারাঅন্তরীণ করে রেখে ছিলেন। সমগ্র আরব জাহান তোমাদের চিরকাল বীর হিসেবেই স্বীকার করে যাবে।’
‘উহারা চাহুক দাসের জীবন, আমরা শহীদি দরজা চাই; নিত্য মৃত্যু-ভীত ওরা, মোরা মৃত্যু কোথায় খুঁজে বেড়াই!’ – মুরসির স্বরণে কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার লাইন উল্লেখ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মারুফ আহমেদ লিখেন, ‘আল্লাহ যেন তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করেন নেন।’
‘আরব বসন্তে ফুটেছিল মুরসি নামের যে অসীম আশার আলো, ফেরআউন সিসির কারাগারে নিপীড়নে অবিচারে সে অকালেই চলে গেলো।’ – মুরসির ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেন মিশবাহ উদ্দিন।
মাহবুব হক লিখেন, ‘খুব মনে পড়ে, প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় তিনি জুমার নামাজ ও তারাবির নামাজে ইমামতি করতেন। হে দয়ালু আল্লাহ, আপনি এই মহান ইমামকে শহীদের মর্যাদা দিন ও জান্নাতুল ফেরদৌসে স্থান দিন।’
কারাঅন্তরীণ মুরসির ছবি শেয়ার করে এস আলম মন্টু তার টুইটারে লিখেন, ‘চলে গেলেন মিশরের একমাত্র নির্বাচিত ও বৈধ প্রেসিডেন্ট, মুসলিম ব্রাদারহুডের অন্যতম নেতা হাফেজ ড. মোহাম্মদ মুরসি। জালিম সিসির আদালতেই মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন প্রিয় মানুষ। মুসলিম মিল্লাত হারালো সরাসরি জালেমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী বীর সেনানীকে। যিনি ছিলেন বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম সিপাহসালা।’
‘মুরসীর নাম গনতন্ত্রকামী মানুষ চিরকাল স্মরণ করবে। আর সিসিরা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। এটাই চিরন্তন সত্য।’- লিখেছেন মনির উদ্দিন চৌধুরি
শাহ আবদুল হান্নানের স্টাট্যাস, মুসলিম বিশ্বকে স্বপ্ন দেখানো মহানায়ক, ‘মিশরের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি ইন্তেকাল করেছেন। হে আল্লাহ, তাঁর প্রচেষ্টা কবুল করুন। আমীন।’
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের জুন মাস থেকে ২০১৩ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত মিসরের প্রেসিডেন্ট পদে ক্ষমতায় ছিলেন মোহাম্মদ মুরসি। ২০১৩ সালে রক্তক্ষয়ী সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই অন্ধকার কারাপ্রকোষ্ঠ ছিলো তাঁর ঠিকানা। ওই বছরই মুরসির নেতৃত্বাধীন মুসলিম ব্রাদারহুড নিষিদ্ধ করা হয়। দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয় এবং বিভিন্ন অভিযোগে অনেককে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেয়া হয়। মুরসির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো, তিনি অর্থের বিনিময়ে কাতারের কাছে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও নথি পাচার করেছেন। ২০১৪ সালে তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছিল। ২০১৫ সালে বিচারের শেষে মুরসিকে মৃত্যুদন্ড দেয় মিসরের আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে পালটা আবেদন জানান প্রাক্তন এই প্রেসিডেন্ট। ২০১৬ সালে আদালতের পূর্বতন রায় খারিজ হয়। ২০১৬ সালের জুন মাসে তথ্য পাচারের এ মামলায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করেন নিম্ন আদালত। আদালত দেশের গুরুত্বপূর্ণ নথি পাচারের অভিযোগে মুরসিকে যাবজ্জীবন মৃত্যুদন্ডাদেশদেন। এ সময়ে মাঝে মধ্যেই আদালতে তোলা হতো তাকে। সোমবার দেশটির সাবেক এই প্রেসিডেন্ট বিচারকের কাছে কথা বলার অনুমতি চাইলে তাকে কথা বলতে অনুমতি দেয়া হয়েছিলো। এ সময় তিনি বুকে ব্যাথা অনুভব করেন। এক পর্যায়ে তিনি হার্টঅ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
Leave a Reply