রাজধানীর খিলগাঁওয়ে মাদক বিক্রির অভিযোগে জাতীয় শ্রমিক লীগের খিলগাঁও থানা সাধারণ সম্পাদক নূর মোহাম্মদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বৃহষ্পতিবার রাতে খিলগাঁও থানার ছাহেরুনবাগ এলাকা থেকে ৩০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার তথ্যে খিলগাঁওয়েরই নবীনবাগ এলাকা থেকে ১০০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয় নূর মোহাম্মদের গাড়িচালক মো. মাসুদ মিয়াকেও। জব্দ করা হয় নূরের নিশান পেট্রোল জিপটি (নম্বর- ঢাকা মেট্রো ঘ-০২-২১৪৮)।
অভিযানে অংশ নেওয়া খিলগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তারিকুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, বৃহষ্পতিবার রাতে বিপুল ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী নূর মোহাম্মদ ও তার গাড়িচালককে গ্রেপ্তারের পর নিয়মিত মামলা দেওয়া হয়েছে। মাদকের সঙ্গে জড়িত যেই হোক, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
জানা গেছে, শ্রমিক লীগ নেতা নূর মোহাম্মদ ছিলেন গরীব পরিবারের সন্তান। সংসারের অভাব-অনটনের কারণে লেখাপড়া বেশিদূর এগিয়ে নিতে পারেননি। তার বাবা ছিলেন রিকশাচালক; এখন রাজধানীর খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ আইসক্রিম গলিতে খুলেছেন রিকশা গ্যারেজের ব্যবসা। এলাকার সন্ত্রাসীদের সঙ্গে মিশে এক সময় হেরোইন-ইয়াবার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েন নূর। এই নেশা থেকে একসময় তিনি জড়িয়ে পড়েন হেরোইন, ফেন্সিডিল ও গাঁজার ব্যবসায়। অল্প সময়ের মধ্যেই খিলগাঁওয়ের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর খেতাব অর্জন করেন এই নূর মোহাম্মদ।
খিলগাঁওয়ের ছিনতাই, ফুটপাত চাঁদাবাজি সিন্ডিকেটেরও হোতা নূর। চাঁদাবাজি ও মাদকের কারবার রীতিমতো আলাদিনের চেরাগ এনে দিয়েছে তার হাতে। আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দরিদ্র পরিবার থেকে এখন কোটি কোটি টাকার মালিক নূর মোহাম্মদ। গড়েছেন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও। অনেক টাকা আর ক্ষমতা হাতে এলেও সন্ত্রাসের অপবাদ তার পিছু ছাড়েনি। তাই অপরাধীর তকমা কাটাতে তিনি বাগিয়ে নিয়েছেন রাজনৈতিক পদ-পদবী। এখন তিনি ঢাকা দক্ষিণের খিলগাঁও থানা জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক।
খিলগাঁওয়ের আইসক্রিম গলি এলাকাই ‘সৃষ্টি’ নামে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন নূর মোহাম্মদ। মূলত এই প্রতিষ্ঠানের আড়ালেই খিলগাঁওয়ে মাদকের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন তিনি। মাদক ব্যবসা, জুয়া ও নারী ঘটিত অনৈতিক ব্যবসার অভিযোগে অবশ্য গত বছর ‘সৃষ্টি’ নামে তার ওই মাদক নিরাময় প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেয় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
ওই সময় পালিয়ে বাঁচলেও মাদকের কারবার ছাড়তে পারেননি নূর মোহাম্মদ। রাজনৈতিক পদকে ঢাল বানিয়ে নারী-পুরুষের সমন্বয়ে গড়া বিশাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেদার চালিয়ে আসছিলেন কারবার। সিন্ডিকেটের কর্মীরা মোটরসাইকেল ও ভ্রাম্যমাণভাবে বিকিকিনি করলেও শ্রমিক লীগের এই নেতা ইয়াবা বেঁচতেন নামি-দামি গাড়িতে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। অবশেষে গ্রেপ্তার হয়েছেন ক্ষমতাধর এই শ্রমিক লীগ নেতা।
পুলিশ জানায়, মাদকের এই মামলা ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন থানায় নূর মোহম্মদের বিরুদ্ধে ছিনতাই-মাদকের আটটি মামলা রয়েছে। এছাড়া খিলগাঁও ভূঁইয়াপাড়ার মিয়া হত্যাকাণ্ড মামলার আসামিও তিনি।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
খবরটি যদি গুরুত্বপুর্ন মনে হয় তাহলে লাইক, কমেন্টস, শেয়ার করুন
Leave a Reply