রমজান মাসে সাধারণত চিনি, পেঁয়াজ, তেল, ছোলা, খেজুর প্রভৃতি পণ্যের চাহিদা বাড়ে। চাহিদা বৃদ্ধির এ সুযোগ নেন ব্যবসায়ীরা। ফলে বরাবরই সংযমের মাস রমজান আসার আগেই বেড়ে যায় অধিকাংশ ভোগ্যপণ্যের দাম। বরাবরের ন্যায় এবারও সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের সাথে বৈঠক করে দাম বাড়ানো হবে নামর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ব্যবসায়ী নেতারা। কিন্তু বরাবরের ন্যায় এবারও সব ভোগ্যপণের দাম বেড়ে গেছে রোজা শুরুর আগেই। অথচ ব্যবসায়ী নেতারা এখনও বলছেন, বিশ্ববাজারে এসব পণ্যের দাম নতুন করে বাড়েনি, বরং কমেছে।
আসন্ন রমজান মাসকে সামনে রেখে গত ২৭ মার্চ সচিবালয়ে শীর্ষস্থানীয় ব্যাবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বৈঠকে রমজানে পণ্যের দাম বাড়ানো হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। তখন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছিলেন, দেশে সব পণ্যেরই পর্যাপ্ত মজুদ ও সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। ব্যবসায়ীদের প্রতি আস্থা রেখে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না। তিনি আরও জানান, এবার সিন্ডিকেটের সুযোগ নেই। বাজারে সবার মধ্যে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। পবিত্র রমজান মাসের আগে পণ্যের অবৈধ মজুদ ও দাম বৃদ্ধির সুযোগ দেওয়া হবে না।
কিন্তু বাজারের পরিস্থিতি ভিন্ন। গত সপ্তাহে ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হওয়া চিনি শুক্রবার বিক্রি হয় ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা। ২৫ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। ১৫ টাকার আলু বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকা। কেজিতে ১০ টাকা বাড়িয়ে ৯০ টাকার রসুন বিক্রিকরা হচ্ছে ১০০ টাকায়। একই হারে বেড়েছে মসুর ডালের দামও। ৯০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায় খুচরা ব্যবসায়ীদের। গরুর গোশত ৫২০ থেকে বােিয় বিক্রিকরা হচ্ছে ৫৫০ টাকা কেজিদরে। বেড়েছে মুরগি এবংখাসির দামও। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে সবধরণের মসলারও।
বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে সেগুলোর মজুদ তারা বাড়িয়ে দিয়েছেন। সাধ্যমতো কিনে রাখছেন পেয়াজ, রসুন, ডাল, তেল, চিনি প্রভৃতি। দাম বাড়ানোর জন্য খুচরা বিক্রেতারা দায়ী করছেন পাইকারদের। আর পাইকারি বিক্রেতারা দায়ী করছেন আমদানীকারক কিংবা মিলমালিকদের। এভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে দাম একটু একটু করে বাড়তে থাকায় ভোক্তাদেরকে অনেক বেশি মূল্য দিতে হচ্ছে বলে জানান বিশ্লেষকরা।
বাজার বিশ্লেষনে দেখা যায়, এতে সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারিতে বস্তাপ্রতি চিনির দাম প্রায় ১৫০ টাকা বেড়েছে। এখন প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার টাকায়। পাইকারিতে তিন টাকা বেড়ে কেজিতে দাম পড়ছে ৫০ টাকা। খুচরায় তা গড়ে ছয় টাকা বেড়ে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আগের সপ্তাহে খুচরায় প্রতিকেজি চিনি ৫০ থেকে ৫২ টাকা ছিল। বিক্রেতাদের দাবি, গত এক সপ্তাহ ধরে মিলগুলো থেকে যথাসময়ে চিনি সরবরাহ করা হচ্ছে না। চিনি আনার জন্য ট্রাক গেলে মিল গেটে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে ৫ থেকে ৭ দিন। তার পরও চিনি দিতে টালবাহানা করা হচ্ছে। এ কারণে চিনি সংগ্রহ করতে খরচ এবং দাম বেড়ে গেছে। মিলমালিকদের দাবি, রোজার আগে এই সময়ে অতিরিক্ত চাহিদার কারণে একসঙ্গে অনেক গাড়ি মিলে আসায় কিছুটা চাপ তৈরি হয়েছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে দাম বাড়ানো হয়নি।
বিক্রেতারা জানান, রোজায় বেশি চাহিদা থাকায় খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়। যা আগের সপ্তাহে ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা। আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের দামও কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ২৫ টাকা হয়েছে। তারা জানান, এতোদিন মুড়িকাটা পেঁয়াজের দর কিছুটা কম ছিল। এখন হালিকাটা (বীজ থেকে) পেঁয়াজ উঠেছে। এ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এতে বাজারে দাম বেড়ে গেছে। তাছাড়া রোজার আগে বাড়তি চাহিদায় বাজারে দাম কিছুটা বাড়তি রয়েছে। চাহিদা আরও বাড়লে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।
বাজার বিশ্লেষনে দেখা যায়, রসুনের দামও কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে আমদানি করা চীনা রসুন ১০০ টাকা ও দেশি রসুন ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে দেশি মসুর ডালের দামও কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায় পৌঁছেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে কিছু মসলার দামও বাড়তি রয়েছে। কেজিতে ১৫০ টাকা বেড়ে দুই হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এলাচ। জিরা, দারুচিনি, বাদামসহ অন্যান্য মসলা কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে বলে জানান খুচরা বিক্রেতারা। ৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।
কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ সবজির দামই আকাশ ছোঁয়া। বাজার ও মানভেদে কাঁচা পেঁপে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে পাকা টমেটো ও শসা। প্রতি কেজি পটল বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, সজনে ডাটা ৬০ থেকে ৮০, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, বরবটি, ঢেড়শ প্রভৃতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কচুর লতি ৭০ থেকে ৮০, করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক হালি কাঁচকলার জন্য ব্যয় করতে হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। লেবুর হালি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।
অনলাইন বাংলা নিউজ বিডি:/আমিরুল ইসলাম
Leave a Reply